×

বিনোদন

নৃত্যে-ছন্দে পাথর ভাঙার প্রত্যয়ে উদীচীর উৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০১৮, ১২:২৩ পিএম

নৃত্যে-ছন্দে পাথর ভাঙার প্রত্যয়ে উদীচীর উৎসব
‘নৃত্যে-ছন্দে ভাঙি পাথর-সময়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত নৃত্য উৎসব-২০১৮। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পার করতে চললেও এবারই প্রথম ঢাকায় নৃত্য উৎসব আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি। সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এ নৃত্য উৎসব আয়োজন করেছে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজশাহীর বরেণ্য নৃত্যগুরু বজলুর রহমান বাদল। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত এবং উদীচী সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপরই পরিবেশিত হয় গণসঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অমর সৃষ্টি ‘শঙ্খচিল’ গানের সঙ্গে উদীচীর নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা। এ ছাড়া উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ, উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, বিশিষ্ট নৃত্যগুরু লায়লা হাসান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা নৃত্য গবেষক, শিক্ষক ও পরিচালক ড. মহুয়া মুখার্জি। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা। স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। কামাল লোহানী বলেন, একটি জাতির পরিচয় হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতিকে খাটো করা মানে নিজেকেই ছোট করা। তিনি আরো বলেন, জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতে প্রতি বছরই বরাদ্দ অত্যন্ত কম থাকে। কিন্তু এই অল্প বাজেটের বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা কখনোই কোনো কথা বলেন না, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। উদীচীর সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, উদীচী সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে তার লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যের মাধ্যমে যা করা যায় তা সাহিত্যের মাধ্যমে করা যায় না। উদীচী শিল্পের মাধ্যমে অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আলোচনা পর্বের পর পরিবেশনা পর্বে বৈচিত্র্যপূর্ণ নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হয় দেশের প্রথিতযশা নৃত্য সংগঠন ও দল। ছিল উদীচীর বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদের নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা। শুরুতেই উদীচী গুলশান শাখার শিল্পীরা পরিবেশন করেন আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা নৃত্য। এরপর কন্যাশিশুর অধিকারবিষয়ক বিশেষ নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে উদীচী নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের নন্দন কলাকেন্দ্র। বিশিষ্ট নৃত্যগুরু লায়লা হাসানের দল নটরাজের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়’ গানটির সঙ্গে নাচ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ এবং ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ দুটি গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে নৃত্যনন্দন। এরপর উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন পল্লীকবি জসিমউদ্্দীনের অমর সৃষ্টি ‘নকশি কাঁথার মাঠ’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন মিজানুর রহমান সুমন ও অনিতা দাশ। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় শুরু হবে আলোচনা পর্ব। এতে অংশ নেবেন নৃত্যগুরু আমানুল হক, মিনু হক, শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তামান্না রহমান। বক্তব্য রাখবেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। আলোচনা পর্বের পর পরিবেশিত হবে সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মরণে নির্মিত নৃত্যনাট্য ‘সিধু-কানুর পালা’। উদীচীর নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্যনাট্যটি নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নৃত্য গবেষক, শিক্ষক ও পরিচালক ড. মহুয়া মুখার্জি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অমর পুরুষ সিধু-কানুর বীরত্ব গাথাকে নতুন করে সবার সামনে উপস্থাপন করাই এ নৃত্যনাট্যের উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও আবহমান বাংলার নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ নৃত্যশৈলী নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হবেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত নৃত্য সংগঠন ও দল। দু’দিনব্যাপী উৎসবে যেসব সংগঠন নৃত্য পরিবেশন করবে তাদের মধ্যে রয়েছে- নৃত্যম, নৃত্যনন্দন, স্পন্দন, নন্দন কলাকেন্দ্র, নটরাজ, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, কাদামাটি প্রভৃতি। এ ছাড়াও উদীচী গোপালগঞ্জ, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলা সংসদ এবং গুলশান শাখা সংসদের নৃত্যশিল্পীরাও তাদের পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। ‘লাল জমিন’ মঞ্চায়ন : আমরা একাত্তরের ইতিহাস ভুলতে চাই না এবং ভুলতে দিতেও চাই না। নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। লাল জমিন নাটকে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, রাজাকার-আল বদরদের হত্যা-ধর্ষণের নির্মম কাহিনী। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটার পরিবেশিত মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের এক নারীর সংগ্রামী জীবন নিয়ে নির্মিত ‘লাল জমিন’ নাটকের মঞ্চায়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এসব কথা বলেন। নাটকটিতে একক অভিনয় শৈলী প্রদর্শন করেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী। প্রধান অতিথি আরো বলেন, শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকটি প্রথম দেখে আমি যারপরনাই মুগ্ধ ও অভিভ‚ত হয়েছি। এরপর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাটকটি সারা দেশে মঞ্চায়নের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করি। ইতোমধ্যে অনেক জেলায় নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে। নাটকটি দেখে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আফসানা রুনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App