×

জাতীয়

প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারে ভরসা নেই ভোটারদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৮, ১২:২৬ পিএম

প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারে ভরসা নেই ভোটারদের
‘ভোটের আগে সবাই এসে শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়। রাস্তা করবে, হাসপাতাল করবে, ড্রেন করবে। কিন্তু নির্বাচনের পরে আর কোনো উন্নয়ন হয় না। বর্ষাকালে রাস্তায় পানি জমে। সমস্যা থেকেই যায়। নির্বাচিত হওয়ার পরে নাগরিক সুবিধা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা থাকে না। মেয়র মান্নানও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপর ৫ বছরে একবারও দেখা যায়নি। এলাকার মানুষ বঞ্চিত। আগামীতেও তাই হবে।’ গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন এভাবেই প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে মন্তব্য করেন। তার কথা সমর্থন করেন সেখানে উপস্থিত আরো ৭/৮ জন স্থানীয় বাসিন্দা। ধীরাশ্রম এলাকাটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে এবং রাজধানীর কাছে হলেও সেখানে শহুরে হাওয়া লাগেনি। ধানক্ষেত, জলাশয়, বিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সুবিধা, পয়ঃনিষ্কাশনের পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেই। সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল দায়। ভারি বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তারপরও আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন সামনে রেখে এই বঞ্চিত এলাকার মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকা। এবারো সাতজন মেয়র প্রার্থীর প্রতিনিধিরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সেই পুরনো প্রতিশ্রুতির নতুন করে ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। সবাই পুরাতন প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে এলাকার সমস্যা সমাধানে মেয়র প্রার্থীদের অঙ্গীকার ততই জোরালো হচ্ছে। রফিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ধীরাশ্রমের রেললাইন সংলগ্ন বিশাল এলাকা পর্যন্ত মেয়র প্রার্থীরা কখনো আসে না। ভোটের আগেও না পরেও না। এবারো এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে আমরা দেখিনি। স্থানীয় ছেলেরা এলাকায় প্রার্থীদের পোস্টার লাগিয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগ করছেন। মেয়র প্রার্থীদের এখনো দেখিনি। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান সরকার গাজীপুরকে একটি আধুনিক ও সবুজ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে জনসংযোগ ও নাগরিক সংলাপে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সব প্রার্থীই পরিচ্ছন্ন নগরী, আবার কেউ কেউ মডেল নগরী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও একই ধরনের অঙ্গীকার করছেন। তবে প্রার্থীদের অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ধীরাশ্রম ও আশপাশের এলাকার মানুষের ক্ষোভের যেন শেষ নেই। এবারের নির্বাচনের প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও হাসান সরকার দুজনেই নতুন প্রার্থী। তারপরও ভোটাররা তাদের প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছেন না। ধীরাশ্রম থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইন সংলগ্ন পশ্চিমপাশের ওয়ার্ডগুলোতে একই অবস্থা দেখা গেছে। স্থানীয়দের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও একই রকম। অনেকেই আবার বলছেন, তারপরও আমরা আবারো আশায় বুক বেঁধেছি। নতুন মেয়র হয়তো আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করবেন। অঙ্গীকার পূরণের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করব। গত ৫ বছরে প্রকৃতপক্ষে গাজীপুরে কোনো উন্নয়নই হয়নি। অনেক কাজ বাকি আছে। আমি একটি মাস্টারপ্ল্যান করেছি। আমি দেশি-বিদেশি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও নগর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এলাকার সমস্যা সমাধানে কাজ করব। অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে পিছিয়ে নেই গাজীপুরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার। তিনি গাজীপুর মহানগরীর যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা দূর করা, মাদকমুক্ত একটি সুন্দর মহানগরী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে সমস্যা চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কাজ ও নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নগরবাসী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন বলে জানান। প্রতিশ্রুতির ফলঝুরি দেয়া থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মেয়র প্রার্থী রুহুল আমিনও। তিনি ৯ দফায় গাজীপুরের উন্নয়ন অঙ্গীকার করেছেন। এতে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরস, সিটি বাস এবং গাজীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিশেষ বাস সার্ভিস চালু, শ্রমিকদের খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে স্বল্পমূল্যে বহুতল ভবন নির্মাণ, কারখানাভিত্তিক রেশনিং পদ্ধতি চালু, সব ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা, বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন ও বর্জ্যকে রিসাইক্লিং করে সম্পদে পরিণত করা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, অনলাইন সার্ভিস উন্নয়নের মাধমে নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। গাজীপুরকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব তিলোত্তমা নগরী হিসাবে গড়তে চান বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন। প্রবীন নিবাস, কর্মস্থলে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতে শিশুদের জন্য ডেকেয়ার সেন্টার চালু করা ও মাদক নির্মূলে ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সিটি করপোরেশনের বাজেটে শতভাগই সিটির উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা, দুর্নীতি প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন। প্রতি ওয়ার্ডে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়া, স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ। এলাকার মসজিদের ইমামদের জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা এবং গাজীপুরকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান। এদিকে, অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। ভোটারদের কাছে গিয়ে উন্নয়নের নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন তারা। যারা গত মেয়াদে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন এবং আসন্ন নির্বাচনে আবারো প্রার্থী হয়েছেন তারা কোথাও কোথাও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে সাধারণ ভোটারদের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। গত মেয়াদে আশানুরূপভাবে এলাকার উন্নয়ন করতে না পারায় ক্ষমা চাইছেন এবং আবার নির্বাচিত হলে উন্নয়ন অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App