×

মুক্তচিন্তা

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের করণীয়

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৮, ০৭:৪৯ পিএম

অনেক বাস মালিক কর্তৃপক্ষ ড্রাইভারকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ না দিয়ে ঘন ঘন দূরপাল্লার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটা অমানবিক। এখানে অধিক ব্যবসায়ী মনোভাব কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে একটু বেতন বেশি পাবেন বলে ড্রাইভার নিজেও বিশ্রাম না নিয়ে ঘন ঘন ট্রিপ মারেন। স্ট্যান্ড বাই চালক স্বল্পতা বেশিরভাগ পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষের। এটাও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

পত্রপত্রিকা খুললেই প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। ইদানীং সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গত শনিবার একদিনে সড়কে ৪৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এভাবে প্রিয়জন হারানো আর্তনাদ আর কান্নায় বাতাস ভারী হচ্ছে প্রতিদিন। রাষ্ট্রের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। দেশের রাস্তাগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ঈদ বা যে কোনো অনুষ্ঠানের সময় দুর্ঘটনার হার বেশি হয়। রাজধানীতে দুর্ঘটনায় হাত বা শরীরের অঙ্গ উড়ে যাওয়ার ঘটনা এখন বেড়ে গেছে। দুর্ঘটনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বেশকিছু কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রথম কারণ হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের অসচেতনতা। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন না মানা, চালকরা ড্রাইভিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বা অমনোযোগী থাকে, অসহিষ্ণু-রেষারেষি ও ওভারটেকিং, বাস মালিক-শ্রমিকের অধিক ব্যবসায়ী মনোভাব, সরু-ভাঙা রাস্তা, সিগনাল বাতি না থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো, অদক্ষ-লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারের গাড়ি চালানো, সোজা রাস্তা ও ডিভাইডার না থাকা ইত্যাদি। অনেক বাস মালিক কর্তৃপক্ষ ড্রাইভারকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ না দিয়ে ঘন ঘন দূরপাল্লার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটা অমানবিক। এখানে অধিক ব্যবসায়ী মনোভাব কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে একটু বেতন বেশি পাবেন বলে ড্রাইভার নিজেও বিশ্রাম না নিয়ে ঘন ঘন ট্রিপ মারেন। স্ট্যান্ড বাই চালক স্বল্পতা বেশিরভাগ পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষের। এটাও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা বা অবৈধ ওভারটেকিংয়ের জন্য অনেক জায়গায় যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে সময় নষ্ট করে বাস শ্রমিকরা। বেঁধে দেয়া সময়ে পৌঁছাতে বা সময় বাঁচাতে পরে দ্রুতবেগে গাড়ি চালায়। এতে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক পরিবারে প্রতিজনের জন্য গাড়ি ব্যবস্থা আছে। অনেক ক্ষেত্রে একই কর্মস্থলে যেতে একই পরিবারের একাধিক সদস্য একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়। অন্যদিকে প্রচুর অপচয় হয়। ব্যক্তিগত হলেও সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এতে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা দরকার। লোকাল রুটের সার্ভিস ভালো হলে অনেকে লোকাল বাসে উঠবেন। তখন এ পরিস্থিতি অনেকটা কমানো যাবে। দেখা যায়, একই রাস্তা দিয়ে ভিন্নগতির ভিন্ন ভিন্ন যানবাহন চলে। অনেকে যত্রতত্র ব্রেক করে হঠাৎ করেই। এতেও ফলোয়াররা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলে দুর্ঘটনার কারণ হয়। একটুখানি সচেতনতাই পারে আপনাকে দুর্ঘটনা এবং আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে। অনেকে আবার ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে চেষ্টা করেন। যার ফল হয় ভয়াবহ। প্রাণহানি ঠেকাতে সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে। মনে রাখবেন একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। অপ্রয়োজনীয় যানবাহন বৃদ্ধি থামাতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক নতুন নতুন প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। অত্যাধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গাড়িচালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা বন্ধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা থেকে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন অপসারণ করতে হবে। চালকদের সুনির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। সর্বোপরি, জনগণকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যদি পথচারীরা ট্রাফিক আইন মেনে চলে, তাহলে নিশ্চিতভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে।

দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা আগে জরুরি এবং তা চালক-যাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে। সিগনালিং বা ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমানোর পরিকল্পনা প্রয়োজন। রোড-সংকেত সম্পর্কে চালক-যাত্রীর পরিষ্কার ধারণা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে চালক-সহকারীদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একমুখী রাস্তা চালু করা যেতে পারে। পথচারীদের অবশ্যই ওভারব্রিজ বা পাতালপথ ব্যবহার করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। দূরপাল্লার গাড়িচালকদের বাধ্যগতভাবে পরপর ট্রিপ না দিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় চালকদের অবশ্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে যাত্রীরাও সচেতন হয়ে এ ভয়াবহ প্রবণতা রুখে দিতে পারে। রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে। এটা সময় বা অর্থসাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় বা মোড়ে রাস্তা প্রশস্ত করা যেতে পারে। দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আরো আন্তরিকতা দেখাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আইনের যথার্থ প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না! শুধু আইন করে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। সর্বাগ্রে সচেতনতা জরুরি আর ক্ষেত্রবিশেষ সংশ্লিষ্টদের বিবেক জাগ্রত হওয়া দরকার। সরকার-জনগণ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

আবু আফজাল সালেহ : উপপরিচালক (বিআরডিবি), লালমনিরহাট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App