×

মুক্তচিন্তা

প্রসঙ্গ : সিটি করপোরেশন নির্বাচন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৮, ০৮:০০ পিএম

বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং অগ্রসরতার প্রতি জনগণের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসাই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। জনগণ খুলনা নগরীকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। দেশের মানুষ বিগত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের সঙ্গে তুলনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যারা জনগণের উন্নয়নের রাজনীতি করে জনগণ তাদের পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে যৌক্তিক সময়েই গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন হচ্ছে। ১৩ জুন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে। আগামীকাল গাজীপুর সিটির নির্বাচন। খুলনার মতো এই চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান যেন সুষ্ঠুভাবে হয় নির্বাচন কমিশনের সেই চেষ্টা করতে হবে। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। মনে রাখা দরকার, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে যা যা প্রয়োজন তা করতে হবে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নানান বিশ্লেষণ হচ্ছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এই নির্বাচনগুলো বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট, বিপরীতে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে অবাধ-সুষ্ঠু এবং সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপসহ অন্যান্য নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থার মতেও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি যে কিছু সংগঠন যাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি নেই তারা প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করার নামে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। যেহেতু এ সব সংস্থার সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক তথ্য নেয়ার সুযোগ নেই সেহেতু তাদের তথ্যসূত্র নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সুতরাং যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কারো বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অন্যতম একটি অভিযোগ ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। আসলে তাদের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রের বাইরে বা অন্য কোথাও দেখা যায়নি। ওই নেতাকর্মীরা দলের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধও না। বিএনপির যে কোনো কর্মসূচিতে জনশূন্যতাই এটা প্রমাণ করে। নেতাকর্মীরাও উপলব্ধি করতে পারছে যে তাদের দীর্ঘদিনের সহিংস কর্মকাণ্ডই তাদের জনগণ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপি যদি তার নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে না পারে তার দায়ও কি সরকারকে নিতে হবে? এতদ্ব্যতীত বিএনপি ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১০টি কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগ করেছে। কিন্তু অবশিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে যদি তাদের বক্তব্য অনুসারে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় সেখানে তো তারা জয়ী হয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারত। কিন্তু এমনটি তো ঘটেনি। অধিকন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাঠামো এবং কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে সব দলের মতামতকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। সুতরাং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভিত্তিহীন অভিযোগ দ্বারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।

শেখ হাসিনার সৎ, বলিষ্ঠ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী দশ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছিলেন। অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তার দিক থেকেও শেখ হাসিনার সমকক্ষ হিসেবে কাউকে চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই।

ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ জরিপে দেখা যায় যে ৭৭.৭ শতাংশ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ সঠিক নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৬২ শতাংশ। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা দিন দিন অপ্রতিরুদ্ধভাবে বেড়েই চলেছে। এমন নেতৃত্বের কারণেই মহাকাশে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগতভাবে তার অগ্রসরতা জানান দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টালারেন্স নীতি’ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুসংহত করার পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং অগ্রসরতার প্রতি জনগণের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসাই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। জনগণ খুলনা নগরীকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। দেশের মানুষ বিগত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের সঙ্গে তুলনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যারা জনগণের উন্নয়নের রাজনীতি করে জনগণ তাদের পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং গাজীপুরসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আবার উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে এটাই আমাদের বিশ্বাস।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই অন্য আরো তিনটি- রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সঙ্গে খুলনার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ চারটি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদায়ী মেয়ররা, যাদের প্রায় সবাই মেয়র হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত সফল, বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। সে সময় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দাপট ছিল বেশি। অবশ্য পর পর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় ব্যবধানে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ের পরও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিল। এবার সেই ধারায় আরো কিছু সাফল্য যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাদের জয়ের ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হবে এবং পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হবে।

মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App