×

পুরনো খবর

আ.লীগ ও বিএনপি দুদলেই অন্তর্কলহ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০১৮, ১২:১৯ পিএম

আ.লীগ ও বিএনপি দুদলেই অন্তর্কলহ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রকোনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। প্রচারণায় আসছে কিছু নতুন মুখ। প্রায়ই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন, কথা বলছেন এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে। করছেন সভা-সমাবেশ, যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই ডজনের অধিক ব্যক্তি দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে হাইকমান্ড পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং ও তদবির। জেলার আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। দুই উপজেলায় দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে প্রকাশ্য কোনো কোন্দল না থাকলেও রয়েছে অন্তর্কলহ। ইউনিয়ন পর্যায়েও দলের নেতাকর্মীদের মাঝে এ নিয়ে রয়েছে দ্ব›দ্ব। দুই দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় দীর্ঘদিন পর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কদর বেড়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত শুরু করেছেন। নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে দলীয় প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানের ছবিসহ প্রার্থীদের ছবিসংবলিত শুভেচ্ছা পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে শুরু হয়েছে নতুন করে হিসেব-নিকেশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন এ নিয়েও চলছে সরব আলোচনা-সমালোচনা। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পল্লী পর্যন্ত সাধারণ ভোটারদের মাঝে প্রার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। এ আসনে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। গত প্রায় সাড়ে তিন বছর সময়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বড় কোনো অভিযোগ ওঠেনি। তবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীদের একটা অংশের সঙ্গে বেড়েছে দূরত্ব। ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু এবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। এলাকায় আসেন দলীয়, সরকারি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। তিনি গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। তার স্ত্রী কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপিকা অপু উকিল তার হয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। প্রায় সময়ই দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি কর্মিসভা, সমাবেশ, গণসংযোগ করছেন। এবার নির্বাচনী এলাকায় দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার সঙ্গে কাজ করছেন। অসীম কুমার উকিল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক ভ‚মিকা রাখছে। নেত্রীর নির্দেশে সারা দেশে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছি। এবার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কারিগরদের সমন্বয় হবে একাদশ সংসদে। আমি সেই সংসদের একজন সদস্য হতে চাই। কেননা সব পরীক্ষায় দক্ষতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছি। এ আসনের সাবেক এমপি ডাকসুর সাবেক মিলনায়তন সম্পাদক মঞ্জুর কাদের কেরাইশী নবম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তার আমলেও নির্বাচনী এলাকার কেন্দুয়া ও আটপাড়ায় বেশ কিছু ব্রিজ-কালভার্ট এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সামছুল কবীর খান নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রায় সময়ই দুই উপজেলায় যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এলাকায় গণসংযোগ করছেন, সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে আসছেন। মনোনয়ন না পেলেও হাল ছাড়েননি। এবারো মনোনয়ন চাইবেন। সামছুল কবীর খান বলেন, দলের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার সাধারণ মানুষের আমার প্রতি আস্থা রয়েছে। আশা করি দলীয় হাইকমান্ড আমাকে মনোনয়ন দেবেন। ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট চলচিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক এডভোকেট সাইদুর রহমান মানিক এবারই প্রথম মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। আটপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, এ আসনের সাবেক এমপি আবদুল খালেকের ছেলে খায়রুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মীর মোশারফ হোসেন হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা মীর মেহেদী হাসান টিটু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কাজ করছেন। নেত্রকোনা জেলা কৃষকলীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকারও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করছেন। এলাকায় অসহায় মানুষের বিভিন্ন কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষিবান্ধব শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে এবার চমক দেখাবেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক জনতা ব্যাংকের পরিচালক নাগিবুল ইসলাম দীপু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক এডভোকেট আবদুল মতিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক আবু সাঈদ খান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক আলমগীর হাসান, কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা পরিষদের নারী সদস্য সালমা আক্তার, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন কবীর, ওই আসনের সাবেক এমপি মরহুম এডভোকেট এম. জুবেদ আলীর ছেলে মো. আমিরুল ইসলাম তুষারও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে রয়েছে মনোনয়ন প্রাপ্তির লড়াই। দলে হাফ ডজনের অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। এর মধ্যে গুটি কয়েকজনের এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে দুই উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মঞ্জুর কাদের কোরাইশীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এবারো তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কেন্দুয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র, কেন্দুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলহাজ মো. দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া দুলাল দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে কাজ করছেন। নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে তার পরিচ্ছন্ন ইমেজ। প্রায় তিন দশক ধরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় জনসেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে দুই উপজেলায় নির্বাচনী সভা সমাবেশ ও দলীয় নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। মো. দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া দুলাল বলেন, নির্বাচন করে জয় ছিনিয়ে আনার ক্ষেত্রে সব ধরনের পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। প্রায় ৩০ বছর ধরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে নির্বাচিত করে আসছেন। এলাকার ভোটারদের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি এবার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ আশাবাদী এবং অতীতের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনব। কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, আমি মামলা, হুলিয়া মাথায় নিয়ে দলের কাজ করে যাচ্ছি। গত নির্বাচনে হারলেও রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়েছি। দলীয় পরীক্ষিত হিসেবে মনোনয়ন আশা করি আমিই পাব। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এসিআই সল্টের এমডি সৈয়দ আলমগীর খসরু, জেলা বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খান এফসিএ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, মরহুম নুরুল আমিন তালুকদারের ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রায়হান আমিন তালুকদার রনি, ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় স্বোচ্ছাসেবক দলের সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া শাওন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডি জেড এম হাসান বিন শফিক সোহাগ, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরামের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট মো. লুৎফুর রহমান দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জসীম উদ্দিন ভূইয়া। তিনি বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ কেন্দ্রসহ সবকটি কেন্দ্রেই আ.লীগ প্রার্থী আলহাজ মো. ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এ আসনের দুই উপজেলায় প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তেমন কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App