×

বিনোদন

সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৮, ০১:৪৩ পিএম

সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা
সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা
সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা
সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা
সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা
সঙ্গীত নিয়ে তাদের কথা
ফরাসি ভাষায় ‘ফেট ডে লা মিউজিক’ এবং বাংলায় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। প্রতি বছর ২১ জুন পালিত হয় দিবসটি। বহু বছর ধরে এই দিনে ঐতিহ্যবাহী মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে ফ্রান্স। ১৯৮২ সালে ফরাসি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং সর্বপ্রথম বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। ১৯৮৫ সালের ২১ জুন ইউরোপ এবং পরে সারা বিশ্বে এই সঙ্গীত দিবস পালন শুরু হয়। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের কয়েকজন গুণী শিল্পী। এটি সাজিয়েছেন শাহনাজ জাহান
মিতা হক (রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ) সঙ্গীত দেখার বিষয় নয়। এটা শ্রবণের ব্যাপার। গান একটা সাউন্ড, যা একজন মানুষ কানে শুনে এবং হৃদয়ে অনুভব করে। গান শুনে নিজের মতো করে চিন্তা করে। কল্পনা সাজায়। শ্রোতা গান শুনে তার মতো করে দৃশ্যকল্প তৈরি করে। এটা একটা আবেগের জায়গা, যা মানুষের কল্পনার জগৎকে সুন্দর করে। এখন তো মিউজিক ভিডিওর নামে বিজ্ঞাপন তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো আসলে গান নয়। ভিডিও চিত্র নির্মাণের জন্য তো সিনেমার মতো বড় শিল্প মাধ্যম আছেই। গানকে কেন বিকৃত করা হয়? অযোগ্যদের হাতে সঙ্গীতের ফিউশন কখনোই নিরাপদ নয়। এখন নবীনরা তো শিল্পী হওয়ার আগে তারকা হয়ে যায়। তাদের শিল্পী হওয়ার ধৈর্য কম। কোনো কিছু সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয় এটা তারা বুঝতে চায় না। দুটো গান শিখেই তারা মিউজিক ভিডিও তৈরি করে। কণ্ঠ সাধনার চাইতে নিজেকে ক্যামেরার সামনে দেখাতেই বেশি পরিশ্রম করে। রাহুল আনন্দ (প্রধান ভোকাল, জলের গান) সেগুনবাগিচার জাতীয় নাট্যশালায় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে গত ২১ জুন রাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে অনুষ্ঠান। সেখানে গান করে জনপ্রিয় গানের দল জলের গান। দলটির অন্যতম সদস্য রাহুল আনন্দ সেখানে বলেন, ‘সঙ্গীত মানুষের হৃদয়কে জাগ্রত করে। যার হৃদয় থাকে, সে কখনো মানুষ খুন করতে পারে না। সুরের মাধ্যমে অসুর নিধন হোক এটাই সঙ্গীত দিবসে চাওয়া। মানুষ, মানুষের আচরণ করুক। সঙ্গীত মানুষের হৃদয়কে জাগ্রত করুক।’ লীনা তাপসী খান (শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগ) এখন সঙ্গীত বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সঙ্গীত নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা আমার কাছে ভীষণ ইতিবাচক মনে হয়। আবার বিশ্বায়নের অস্থিরতা সঙ্গীতাঙ্গনেও প্রভাব তৈরি করেছে। এখন অনলাইনে গান প্রকাশ হচ্ছে। এটি তেমন নেতিবাচক কিছু নয় বলেই আমি মনে করি, বরং অনেকাংশে ইতিবাচক। ইউটিউব আছে বলেই কিন্তু সবাই দেশের বাইরের গÐিটাকে ছুঁতে পারছে সহজেই। নিজের দেশের সঙ্গে বাইরের দেশের সঙ্গীতও শোনার সুযোগ হয়েছে। তবে হ্যাঁ, এটা সত্য যে অনেক আনাড়ি শিল্পীদের বা যারা শখের বশে গান করেন, তাদের গানও ইউটিউবে আছে। সে ক্ষেত্রে গান বাছাই করার একটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তবে সেটা আংশিক কষ্টদায়ক। ইউটিউব এক বিশাল ভাÐারের খোঁজ দিয়েছে, যেখান থেকে ইচ্ছামতো গান শোনা যায়। ইউটিউবের নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক দিকটাই বেশি। তবে মিউজিক ভিডিও বিষয়টি আমার খুব একটা পছন্দ না। গান হচ্ছে শ্রবণের বিষয়, যা কান দিয়ে হৃদয়ে পৌঁছায়। গান কেন দেখার বিষয় হয়ে উঠবে? তাহলে আমার কল্পনার জগৎটা কোথায়? সন্দীপন (সঙ্গীতশিল্পী) বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের শুরুটা কিন্তু মিউজিশিয়ানদের মাঝে ঐক্য তৈরির উদ্দেশ্যেই হয়েছিল। ফ্রান্সে যখন এই মিউজিক ফেস্টিভ্যাল করা হয়, তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সেখানে কণ্ঠশিল্পী, বাদ্যযন্ত্রশিল্পীসহ সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখায় থাকা সবাই এক হবেন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি দরকার সঙ্গীতের মানুষদের মাঝে ঐক্য। সেই সঙ্গে পেশাদারিত্ব এবং সততার জায়গাটা তৈরি করা উচিত। গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসহ গানের সঙ্গে যুক্ত সবাই যেন ঠিকভাবে তাদের পারিশ্রমিক পান সেই বিষয়টি নিয়ে সবার মাঝে ঐক্য জরুরি। এবারের সঙ্গীত দিবসে আমার একটাই প্রত্যাশা, সঙ্গীত অঙ্গনের মানুষদের মাঝে ঐক্য তৈরি হোক। অণিমা রায় (শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগ) শুদ্ধসঙ্গীতের গুরুত্বটা অনেক বেশি। সরকারি-বেসরকারি সব স্কুল-কলেজে এই চর্চা ছড়িয়ে দেয়াটা জরুরি। যতই মোহে আচ্ছন্ন থাকি না কেন শেকড়ের কাছে যেতেই হবে, নয়তো গাছ উপড়ে পড়বে। শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা এ ক্ষেত্রে বড় ভ‚মিকা রাখে। এখন অনলাইনে গান প্রকাশ হচ্ছে। এই বিষয়টিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি। আবার অযোগ্যদের হাতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ফিউশন দেখে একটু মন খারাপও হয়। এর প্রধান কারণ হলো রবীন্দ্রনাথকে না জানা, না বোঝা, না পড়া। আজকাল রবীন্দ্রনাথের কোনো গান ভালো লাগলে তা নিয়ে ফিউশন করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং একটি ‘মঠ’ যাকে ভাঙা বা বিচ্যুত করা যায় না। এটাকে অজ্ঞতাই বলব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App