×

মুক্তচিন্তা

মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৮, ০৭:৪১ পিএম

ঈদের পরপর যে হারে দুর্ঘটনা ঘটে, তা ঈদের অব্যবহিত আগের দুর্ঘটনার সংখ্যার চেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে ও পরে দুর্ঘটনা রোধে নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এভাবে সড়কে আর কত প্রাণ ঝরবে তা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত সাত জেলায় ৩৩ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। সড়কে এ রকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ১৭ জন, রংপুরে ৬ জন, গোপালগঞ্জে ৫ জন, সিরাজগঞ্জে ২ এবং নাটোরে ২ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ সব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো শতাধিক মানুষ। জানা গেছে, শনিবার ভোরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় ঢাকা থেকে সৈয়দপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ১৬ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। একই দিন সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ঘোনাপাড়া বাজারে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি বাসের চাপায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এ ছাড়া শুক্রবার গভীর রাতে রংপুর সদর উপজেলার বালুবাহী ট্রাকচাপায় ৬ বাসযাত্রী নিহত হয়েছে। সড়কপথে নিয়মিতভাবে দুর্ঘটনায় নিরীহ যাত্রীদের এমন মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। প্রকৃত অর্থে এগুলো কোনো দুর্ঘটনাও নয়। হত্যাকাণ্ড বলা যায়। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেশি হওয়ার একটা বড় কারণ হলো, এ সময় যানবাহনের সংখ্যা ও মুভমেন্ট দুটোই বেড়ে যায়। রাজধানীতে চলাচলকারী অনেক যানবাহনও দূরপাল্লার যাত্রায় অংশ নেয়। ঈদের পরপর যে হারে দুর্ঘটনা ঘটে, তা ঈদের অব্যবহিত আগের দুর্ঘটনার সংখ্যার চেয়ে বেশি। তার কারণ, এ সময়টায় মহাসড়কে যানজট থাকে না বলে চালকরা গাড়ি চালনায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যাত্রী কম থাকায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ট্রিপের সংখ্যা বাড়াতে গিয়েও তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি স্পিডে গাড়ি চালায়। ফলে ঘটে দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে ও পরে দুর্ঘটনা রোধে নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এভাবে সড়কে আর কত প্রাণ ঝরবে তা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এ সব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App