×

মুক্তচিন্তা

বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৮, ০৭:৫৯ পিএম

৬৯ বছর বয়সের আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল। এই দলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কোন অন্তর্নিহিত চেতনাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পৃক্ততা গড়ে উঠেছে বা নির্মিত হয়েছে? সমসাময়িককালের খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামার সূত্রানুযায়ী বর্তমান নিবন্ধের যুক্তি ও ব্যাখ্যা হচ্ছে, উল্লিখিত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ‘রাজনৈতিক নিয়ম শৃঙ্খলা’ বা ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বজায় রাখতে সক্ষম এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়কে কেন্দ্র করে। আর এই প্রত্যয়টি বাস্তবায়নের চিন্তা করেছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রাচীনকালের মাৎস্যন্যায়ের বাংলা নয়, মধ্যযুগের আক্রমণকারীদের অভয়ারণ্যের বাংলা নয়, ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলা নয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সৃষ্টিকারী বাংলা নয়, ইনডেমনিটি আদেশ দিয়ে ন্যায়বিচারকে বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা নয়, জেলখানায় রাজনৈতিক নেতাদের নির্মমভাবে হত্যা করার ব্যবস্থা নয়, রাতের বেলা কারফিউ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকারী বাংলা নয়, প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচন করা ও রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করা নয়, মিছিলের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যাকারী রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয়, কিংবা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে সন্ত্রাসবিরোধী জনসচেতনতাকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টাকারী রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয়, রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের স্থলে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা নয়, ২০০১-এর নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু ও বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ব্যবস্থা নয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে আগুন বোমা হামলা করে নিরীহ মানুষ ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা করার জন্য অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও চালান দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসন নয়, কিংবা সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তি, সংখ্যালঘুদের জমি-জায়গা দখলে ও তাদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনে লিপ্ত ব্যক্তিগোষ্ঠী, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ, ভণ্ড ও প্রতারকদের পৃষ্ঠপোষকতা করে নয়। জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত সরকারের অধীনে ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বাস্তবায়নে সক্ষম রাষ্ট্র ব্যবস্থাই আসল চাওয়া।

পলিটিক্যাল অর্ডার বজায় রাখতে সরকারের সার্মথ্য-অসামর্থ্যরে বিষয়টিই হচ্ছে মৌলিক বিবেচ্য বিষয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অসারত্ব, রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, এই (পাকিস্তান) রাষ্ট্র দ্বারা বাঙালিদের মুক্তি অসম্ভব! বাঙালিদের, বাঙালিদের জন্য এবং বাঙালিদের দ্বারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর তার জন্য একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং স্বাধীনতার পরে ‘রাজনৈতিক নিয়মশৃঙ্খলা’ বজায় রাখার সামর্থ্যবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাই সঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধু শুধু চিন্তা করেই থেমে যাননি। তিনি আকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন, অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। এরই এক পর্যায়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কেএম দাশ লেনের রোজ গার্ডেন নামক বাড়িতে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বয়সে তিনি তখন তরুণ, শেখ মুজিব। তাঁর চেয়ে বেশি বয়সের আবুল হাশিম, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক প্রমুখ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতির সবটুকু জুড়েই ছিল বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। আর এই চিন্তার বাহ্যিক প্রকাশ সম্ভব হয়েছে ‘আওয়ামী লীগ’ নামের একটি রাজনৈতিক বাহনের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে অসাম্প্রদায়িক ‘বাঙালিত্ব’ প্রবলভাবে উপস্থিত ছিল। এ কারণে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ শব্দগুলো থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে, করা হয় শুধু আওয়ামী লীগ।

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা তথা বাস্তবায়িত না করা ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বাস্তবায়নে অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে পাকিস্তান। ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তানে এর একটি ঐতিহাসিক এবং করুণ উদাহরণ হচ্ছে লিয়াকত আলী খানের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী যোগেন মণ্ডলের পালিয়ে ভারত চলে যাওয়া। নিকটজনদের চেতনা উপেক্ষা করে, পাকিস্তানের জন্য জিন্নাহ ও মুসলিম লীগকে সক্রিয়ভাবে সমর্থনকারী যোগেন মণ্ডল মন্ত্রী থাকা অবস্থায় পদত্যাগ না করে পালিয়ে ভারত চলে যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের অনুরোধে ১৯৫০ সালের ৮ অক্টোবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ১৭ পৃষ্ঠার সেই পদত্যাগপত্রের প্রতি ছত্রে ছত্রে যে কাহিনী বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে এক কথায় ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’হীন ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করাই সমীচীন। ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগ, প্রায় সাড়ে তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্যের প্রাণের বিনিময়ে বাঙালিদের জন্য স্বাধীনতার সোনালি সূর্য ছিনিয়ে আনার মূল লক্ষ্য তাই একটি কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মূলত একটি কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু এটি চাইতেন। তাঁর এই চাওয়া সম্পর্কে জানা যায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ তথা জাতীয় সংসদে প্রদত্ত তাঁর বিভিন্ন ভাষণে। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটিতে উল্লিখিত বিষয়গুলো একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, যেখানে বাঙালিদের প্রতি হিংসা ও বৈষম্যপূর্ণ আচরণ এবং প্রতিবেশী ভারত রাষ্ট্রের প্রতি শত্রুতা দ্বারা রাষ্ট্রের অফিসিয়াল বৈধতা স্বীকৃত হয়!!

স্নায়ুযুদ্ধের পরে, ফুকুইয়ামার সূত্রানুযায়ী, বিশ্বে গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অসম বণ্টনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর (ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামার) আর যে একটি ধ্রুপদী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, সেটি হলো, উপরে উল্লিখিত ‘দ্য অরিজিনস অব পলিটিক্যাল অর্ডার’। ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ ধারণাটি অবশ্য ফুকুইয়ামাই প্রথম আলোচনা করেননি। তাঁর অনেক আগে স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন, ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, এবং একটু ভিন্ন প্রকৃতিতে, গণতন্ত্র বা অন্য কোনো মতাদর্শ ছাড়াই, ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ সম্পর্কে যে বইটি লিখেছিলেন সেটিও একটি ধ্রুপদী গ্রন্থ। বইটির শিরোনাম ‘পলিটিক্যাল অর্ডার ইন চেইঞ্জিং সোসাইটিজ’। এটি ১৯৬৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসান হয়েছে, স্নায়ুযুদ্ধেও অবসান হয়েছে, এসব সত্ত্বেও এই বইয়ের মূল বক্তব্যের আবেদন একটুও ম্লান হয়নি। বক্তব্যটি হচ্ছে, রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের [বি.দ্র. ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল] সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়িত হয়, কিন্তু পরিবর্তনশীল সমাজে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিষয়টি প্রতিনিয়তই বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

‘পলিটিকাল অর্ডার ইন চেইঞ্জিং সোসাইটজ’ গ্রন্থে হান্টিংটন বলছেন সরকারগুলোর পার্থক্য, ‘কোন ধরনের সরকার’ বা ‘সরকারের প্রচলিত শ্রেণি বিভাগের’ মাধ্যমে বোঝা যাবে না; সরকারগুলোর পার্থক্য করার মাপকাঠি হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে পারার সামর্থ্য এবং অসামর্থ্য দ্বারা। মতাদর্শ নির্বিশেষে কোনো কোনো সরকার তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে। আর কোনো কোনো সরকার আছে যারা তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে পানে না। আর ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বাস্তবায়িত হয় না বলেই পরিবর্তনশীল সমাজে ‘অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলতা বা ডিজঅর্ডার’ এবং ‘অস্থিতিশীলতা’ লক্ষ করা যায়। যা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে দেয়। অপরদিকে, ‘দ্য অরিজিনস অব পলিটিক্যাল অর্ডার’ শীর্ষক গ্রন্থে যে যুক্তির অবতারণা ফুকুইয়ামা করেছেন তা হচ্ছে ‘দ্য এন্ড অব হিস্টরি’র মৌলিক অনুমান, উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিজয়, এই ধারণাটি এখনো বৈধ, তবে স্থিতিশীলতা, অগ্রগতি তথা গণতন্ত্র টিকে থাকার অপরিহার্যতা জটিলতার আবর্তে আটকে আছে। ফুকুইয়ামা প্রশ্ন করছেন, কেন? এই ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছেন, বিশ বছর আগে যেমনটি ছিল, ‘বর্তমানে বিশ্ব তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠেছে’। বলছেন, স্বৈরতান্ত্রিক চীন এগিয়ে আসছে, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত গণতন্ত্রের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফুকুইয়ামা তাঁর সাহসী গ্রন্থ ‘দ্য অরিজিনস অব পলিটিক্যাল অর্ডার’-এ এই জটিল সমস্যার যুৎসই ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করেছেন।

তিনি ইতিহাসের দিকে নজর দিয়েছেন। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর চীনের কিন রাজতন্ত্র থেকে আমেরিকার শুরুর দিকে এবং প্রায় দুই হাজার বছর পরে ফরাসি বিপ্লব। এই পথপরিক্রমায় ফুকুইয়ামা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, মধ্যযুগের মামলুক এবং অটোমান সাম্রাজ্য, আফ্রিকার নৃ-তত্ত্ব, পাপুয়া নিউগিনির রাজনীতি এবং আরো অনেক অনেক কিছু পর্যালোচনা করেছেন।

এই গবেষণা গ্রন্থটির মূলে যে তাৎপর্যপূর্ণ ধারণাটি আছে সেটি হচ্ছে, ‘ডেনমার্ক হওয়া’ (গেটিং টু ডেনমার্ক)। এর দ্বারা ফুকুইয়ামা স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সর্বসমেত এবং সৎ সমাজ (ডেনমার্কের মতো) সৃষ্টির কথা বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশও এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক এটি এ দেশের জনগণের একান্ত আকাঙক্সক্ষা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এমনই একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর এটি, নিজস্ব সাবলীল অভিব্যক্তিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে, বহুবার বহু বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে শোনা গিয়েছে। কখনো ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ’ প্রয়োজনের কথা, কখনো বাংলাদেশকে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের কথা বঙ্গবন্ধু বলতেন। কৃষক শ্রমিকদের সম্মান দিয়ে কথা বলার জন্য তিনি শিক্ষিত সমাজের প্রতি আহহ্বান জানিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সেই যুদ্ধে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাতেন। বঙ্গবন্ধু যে বাকশাল করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার মূলে ছিল এক বিংশ শতাব্দীতে ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামার ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বাস্তবায়নের যে স্কিম আমরা দেখছি সে ধরনেরই একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই জীবন ও যৌবনের অধিকাংশ সময় কারা যন্ত্রণাসহ পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের নির্যাতন নিপীড়ন ভোগ করেছেন। বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী সরকার পরিচালনার মাধ্যমে জননেত্রী বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর এটি সম্ভব হচ্ছে, ‘পলিটিক্যাল অর্ডার’ বাস্তবায়িত করা তথা বজায় রাখতে পারার সামর্থ্যরে কারণে। যদিও এর মধ্যে কিছু ব্যত্যয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে পলিটিক্যাল অর্ডার বজায় রাখতে পারার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেই কেবল বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিও ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। আর এ জন্য আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠন করতে হবে। তাই এই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে, ধর্ম, জন্মস্থান, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের উচিত জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ের পলিটিক্যাল অর্ডার বজায় রাখতে পারার ধারাবাহিকতার জন্য একযোগে কাজ করা এবং আগামী নির্বাচনে জয়ী করা। এর বিপরীতটা হচ্ছে ‘পলিটিক্যাল ডিজঅর্ডার’ এবং/অথবা মাৎস্যন্যায়।

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী: অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App