×

মুক্তচিন্তা

মাদক মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবুন

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০১৮, ০৯:৩০ পিএম

মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের জবাবদিহি, দক্ষতা-যোগ্যতা থাকাও জরুরি। আদালতে সাক্ষী হাজির ও জব্দ বস্তু প্রদর্শন করাও পুলিশের দায়িত্ব। ভাসমানদের সাক্ষী করায় তাদের অনেক সময় খুঁজেও পায় না পুলিশ। এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে তাতে যেন অন্তর্ভুক্ত হয়।

সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বলা যায়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের এই অভিযান জিরো টলারেন্স নীতিকে অনুসরণ করছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় দেড়শ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এটি স্বস্তিদায়ক। একই অভিযোগে আটক হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মাদকবিরোধী আইন থাকা সত্তে¡ও সারা দেশের আদালতগুলোয় হাজার হাজার মামলা এইভাবেই কি ঝুলে থাকবে। মাদক মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি।

জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে মাদক আইনে মামলা হয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ১১৩টি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ সব সংস্থা মিলে এসব মামলা করে। এর মধ্যে বিচারের অপেক্ষাধীন ২ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ মামলা। এসব মামলার বিপরীতে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার বা জব্দ করা হয় ১১১ কোটি ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। ঝুলে থাকা মামলায় ৩ লাখেরও বেশি আসামি রয়েছে। কিন্তু কারাগারে আছে ৩৬ হাজার। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৪৪টি আদালতে বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ প্রায় ৫০ হাজার মামলা। সাক্ষীর অভাবে ২৫ হাজার মাদকের মামলার বিচার ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবেই এই বিপুলসংখ্যক মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলায় দুর্বল এজাহারসহ আইনের নানা ফাঁকফোকরে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে আবার জড়িয়ে পড়ছে এ ব্যবসায়। গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ছে মাদকদ্রব্য। মাদক সেবনের মাধ্যমে যুবশ্রেণির একটা অংশ তাদের জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলছে। কর্মক্ষমরা হয়ে পড়ছে অকর্মা। এসব অপকর্মের মূলে রয়েছে মাদক কারবারিরা। মাঝেমধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে যায় তারা। এ অবস্থায় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রচলিত বিচারপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের কথা শোনা যায়। বিদ্যমান ১৯৯০ সালের আইনে মাদকদ্রব্যের তালিকায় ইয়াবাসহ অনেক মাদকের নাম ছিল না। ওই আইন যখন করা হয়, তখনো ইয়াবা সেবনের আলামত ছিল না। তবে এরই মধ্যে ইয়াবার ভয়াবহ থাবায় দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশ ধ্বংসের মুখোমুখি। আইনের দুর্বলতার কারণে ইয়াবা পাচার, বেচাকেনা ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যাপক পরিবর্তন এনে একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এই খসড়া আইনটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মাদকবিরোধী সমন্বিত অভিযানের পাশাপাশি ঝুলে থাকা মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন। তারা সরকারি কৌঁসুলি ও পুলিশের ব্যর্থতায় মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না অভিযোগ করছেন। মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের জবাবদিহি, দক্ষতা-যোগ্যতা থাকাও জরুরি। আদালতে সাক্ষী হাজির ও জব্দ বস্তু প্রদর্শন করাও পুলিশের দায়িত্ব। ভাসমানদের সাক্ষী করায় তাদের অনেক সময় খুঁজেও পায় না পুলিশ। এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে তাতে যেন অন্তর্ভুক্ত হয়। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের সফলতা ধরে রাখতে হলে পাশাপাশি আদালতে ঝুলে থাকা মামলার প্রতিও নজর দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App