×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন, বিএনপির একক প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০১৮, ০৪:০৮ পিএম

আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন, বিএনপির একক প্রার্থী
টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তিনি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। তার জায়গা দখলে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন প্রার্থী। যদিও খন্দকার আসাদুজ্জামান এমপি চাইছেন তার ছেলেকে উত্তরসূরি করতে। অপরদিকে বিএনপি থেকে সাবেক উপমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু একক প্রার্থী হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। আব্দুস সালাম পিন্টু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় প্রায় ১০ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত সালাম পিন্টুকে ঠেকানো আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোপালপুর ও ভ‚ঞাপুর উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-২ সংসদীয় আসনে ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪২৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৯ জন। এ আসনে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৭৯ সালে বিএনপির আফাজ উদ্দিন ফকির নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির শামছুল হক তালুকদার ছানু এবং ১৯৮৮ সালে জাসদের আব্দুল মতিন হিরু নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাবেক উপমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাতেম আলী তালুকদারকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আব্দুস সালাম পিন্টু নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সাবেক সচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে খন্দকার আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। খন্দকার আসাদুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুুুস্থ থাকায় তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান (ছোট মনির), গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী তালুকদার ঠাণ্ডু, ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক মাসুদুল হক মাসুদ, লে. কর্নেল (অব.) মির্জা হারুন অর রশিদ ও টাঙ্গাইল জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি কে এম আব্দুস সালাম এডভোকেট। অন্যদিকে সাবেক উপমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলায় জেলহাজতে থাকায় তার নির্বাচনে কোনো কারণে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। আব্দুস সালাম পিন্টু কারাগারে থাকায় সাধারণ মানুষ তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠছেন। নির্বাচনে এই সহানুভূতি তার জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি শামসুল হক তালুকদার ছানু একক প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে সরকার গঠন করার পর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা দিয়ে বিপর্যস্ত করে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে ভূঞাপুর ও গোপালপুরে দলকে সংগঠিত করেছি। এখন পর্যন্ত এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ এবং গণসংযোগের কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের আস্থা আমার ওপর রয়েছে। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খন্দকার আসাদুজ্জামান ৩ বার এ আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দুটি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন এবং এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার জনপ্রিয়তায় এবং দলীয় নেতাকর্মীরা পক্ষে থাকায় তার বড় ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকেই উত্তরসূরি হিসেবে পেতে চায় বলে ভ‚ঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে গোপালপুর ও ভ‚ঞাপুরে যমুনা নদী ভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণ, তারাকান্দি-ভূঞাপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সাধারণ গণমানুষের ভাগ্য উন্নয়নে শিল্প-কারখানা নির্মাণপূর্বক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। তিনি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে এলাকায় মাঝারি শিল্প-কারখানা স্থাপন করে গ্রামকেন্দ্রিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া তিনি এলাকায় মাদক, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ভ‚মিকা রাখবেন বলেও তিনি জানান। টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত ফারুক আহমদ হত্যা মামলার আসামি এমপি আমানুর রহমান খান রানাসহ তার ভাইদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় ইতোমধ্যেই টাঙ্গাইলে আলোচিত নেতায় পরিণত হয়েছেন তানভীর হাসান (ছোট মনির)। দীর্ঘদিন জার্মান প্রবাসী থাকলেও এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় জেলার রাজনীতিতে লাইম লাইটে চলে এসেছেন তিনি। সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি গোপালপুর-ভূঞাপুরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। তানভীর হাসান বলেন, গোপালপুর-ভ‚ঞাপুরের সাধারণ মানুষ আমাকে সন্তানের মতো গ্রহণ করেছেন। তাদের পাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে আছি। তাই মনোনয়ন পেলে আমার বিজয় কেউ রুখতে পারবে না। গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী তালুকদার ঠাণ্ডু সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পরপর দুই বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছি এবং সব সময় মানুষের পাশে থেকেছি। গোপালপুর-ভূঞাপুরের মানুষ সব সময় আমাকেই পাশে পায়। ভূঞাপুর-গোপালপুরের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে থেকে তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছি এবং সাহস জুুগিয়েছি। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে অন্য যে কারো থেকে তিনি ভালো করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সে গোপালপুর ও ভূঞাপুরের যমুনার চরাঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে চীনের বিনিয়োগে শিল্পপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই শিল্পপার্কটি স্থাপন হলে এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সাবেক উপমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই জেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম তোফা বলেন, আব্দুস সালাম পিন্টু মন্ত্রী থাকাকালে ভ‚ঞাপুর এবং গোপালপুর উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়মূলক কাজ করেছেন এবং সাধারণ মানুষের মাঝে ‘সালাম ভাই’ নামে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে এবং বিনা কারণে সরকার তাকে ১০ বছর ধরে কারাগারে বন্দি করে রাখায় এলাকার মানুষের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। নির্বাচনের আব্দুস সালাম পিন্টু বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন তিনি আশাবাদী। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি শামসুল হক তালুকদার (ছানু) বলেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছি। এর আগে স্থানীয় দু-দুবার ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও এমপি থাকাকালীন এলাকায় উন্নয়নে কাজ করেছি। মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। মহাজোট থেকে টাঙ্গাইলে ২-৩টি আসন যদি দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে এমপি হিসেবে আমি নির্বাচিত হব। টাঙ্গাইল-২ আসনে অর্ধডজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব বেড়েছে। প্রত্যেক প্রার্থী দলের মধ্যে নিজস্ব লোক বলয় তৈরিতে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কর্মসূচির চাইতে নেতাকেন্দ্রিক কর্মসূচি নিয়ে কর্মীরা বিভক্ত। নৌকা প্রতীক যেই লাভ করুক দলীয় কোন্দল নিরসন করতে না পারলে ফলাফল ঘরে নাও উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ায় কারাবন্দি সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App