×

পুরনো খবর

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০১৮, ০৪:৩১ পিএম

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া
দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। এটি নির্বাচনী আসন চট্টগ্রাম-৩। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সন্দ্বীপে ও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। উপজেলার আওয়ামী লীগ ও বিএপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঈদ উপহারের পাশপাশি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, পোস্টার, ঈদ কার্ড বিতরণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও চলছে প্রচারণা ও জনমত জরিপ। সন্দ্বীপের বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা এবারো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আরো রয়েছেন সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বিএ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকরাম খান দুলাল এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান। এদিকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান সাবেক এমপি মোস্তাফা কামাল পাশা। টানা তিনবার নির্বাচিত সাবেক এই এমপি মনোনয়ন দৌড়ে দলেও এগিয়ে আছেন। তবে তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন অপর দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বাবুল ও কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা খোকন। সন্দ্বীপের ইতিহাস থেকে জানা যায়, সন্দ্বীপ দেশের দক্ষিণ পূর্ব উপক‚লে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি অত্যন্ত একটি অত্যন্ত প্রাচীন দ্বীপ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সন্দ্বীপের আয়তন ৬৩০ বর্গমাইল থাকলেও ক্রমাগত ভাঙনের কারণে বর্তমানে এটি মাত্র ৮০ বর্গমাইলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে পরিণত হয়েছে। এই দ্বীপের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে নদীপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এ উপজেলার অবস্থান। সন্দ্বীপের সীমানা হচ্ছে পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেল, চ্যানেলের পূর্ব পাড়ে সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই উপজেলা, উত্তরে বামনী নদী, পশ্চিমে মেঘনা নদী এবং তার পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ১৯৫৪ সালের আগ পর্যন্ত সন্দ্বীপ নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে এটিকে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সন্দ্বীপ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। সন্দ্বীপ একটি পৌরসভা রয়েছে, যা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। ৭২ দশমিক ৪২ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ইউনিয়ন রয়েছে প্রায় ১৪টি। দেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। মোট নৌপথ ২২ নটিক্যাল মাইল। এ আসনে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে মাহফুজুর রহমান মিতা ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির এম এ সালাম পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৪ আর জাসদের নুরুল আক্তার পান ৮৭৪ ভোট। ১৯৭৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে বিএনপি থেকে এ কে এম রফিকউল্লাহ চৌধুরী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ কে এম শামসুল হুদা, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মোস্তফা কামাল পাশা, ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগ থেকে মোস্তাফিজুর রহমান, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে মোস্তফা কামাল পাশা এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান মিতা। বর্তমান সংসদ সদস্য মিতা বলেন, সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এলাকায় আমি উন্নয়নের মাইলফলক তৈরি করেছি। স›দ্বীপের বড় সমস্যা ছিল বিদ্যুৎ। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সন্দ্বীপে দুটি শক্তিশালী জেনারেটর বসিয়ে ২ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়াও জাতীয় গ্রিড থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই পুরো সন্দ্বীপ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। তিনি আরো বলেন, ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সন্দ্বীপে গুপ্তছড়া ঘাটে একটি জেটি স্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও ২১৩ কোটি ব্যয়ে সন্দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পটি টেন্ডারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। স›দ্বীপে অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এখানে ইকোনোমিক জোন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এখানে ইকনোমিক জোন হলে এলাকার লোকদের কর্মসংস্থান হবে। সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠবে সন্দ্বীপ। উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। আমি স›দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩৬ বছর ধরে সভাপতি। তার সুবাদেই সন্দ্বীপ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার সঙ্গে দ্ব›দ্ব আছে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের। তারা দুজন একমঞ্চে বসে দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও বিরোধ মেটেনি। দলীয় কোন্দলের কারণে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ক্লিন ইমেজধারী ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করে আসছি। সব সময় মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। যুব-তরুণ সমাজে আমার অবস্থান ভালো, এলাকার মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তারা চাইছেন আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হই। সন্ত্রাসমুক্ত, স্বনির্ভর ও আধুনিক স›দ্বীপ গড়তে এবং সন্দ্বীপবাসীর জন্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসীর অনুরোধে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। এদিকে স›দ্বীপের উন্নয়ন সম্পর্কে সংসদ সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিএনপি নেতারা। বিএনপির অভিযোগ, উন্নয়নের নামে এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির কারণে নৌপদ নিরাপদ হয়নি। সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন ডজনখানেক নেতা। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তফা কামাল পাশা বলেন,সন্দ্বীপ এখন এক ভীতিকর জনপদের নাম। গত সাড়ে নয় বছরে এখানে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। তবে এবার বিএনপি নির্বাচনে গেলে ধানের শীষের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। এদিকে মোস্তফা কামাল পাশাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আটঘাট বেঁধে মাঠে আছেন দলেরই অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তফা কামাল বাবুল। বছরের বেশিরভাগ সময় আমেরিকা থাকলেও তার ধ্যান-জ্ঞানে সন্দ্বীপ আছে বলে জানান তিনি। এ জন্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সন্দ্বীপের বিভিন্ন উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App