×

জাতীয়

রাজনীতিতে ভোটের দামামা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০১৮, ১১:০২ এএম

রাজনীতিতে ভোটের দামামা
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন পুরোটাই নির্বাচনমুখী। দোরগোড়ায় জাতীয় নির্বাচন। তার আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ২৬ জুন ভোট গ্রহণ। গতকাল সোমবার থেকেই সেখানে ফের শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। এরপরই বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটির নির্বাচন (৩০ জুলাই)। ওই তিন সিটিতেই সাজ সাজ রব। মাঝে অবশ্য দশম জাতীয় সংসদের একটিসহ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলায় হবে উপনির্বাচন। এরপরই বাজবে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী দামামা। রমজান ও ঈদের ছুটিতে মাঠের রাজনীতি ছিল অনেকটাই স্থবির। দলগুলো ইফতার পার্টির মাধ্যমে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেছে। ভোটের বছর হওয়ায় এবার ইফতার পলিটিক্স ছিল জমজমাট। এরপর শুরু হয়েছে ঈদ পুনর্মিলনীর ঢাকঢোল। সবই ভোটের প্রস্তুতি মাথায় রেখে। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মাঝে অবশ্য শোকের মাস আগস্ট। এ মাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমন একটা করে না সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল-দোয়া ও কাঙালি ভোজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে দলটি। এবারও তাই করবে এমন আভাসই রয়েছে। তবে এবার শোকের কর্মসূচিতেও থাকবে নির্বাচনের আবহ। যা আরো বিস্তৃত করে গ্রামেগঞ্জে নিয়ে যাবে দলটি। দলের প্রতিটি ইউনিটে অনুষ্ঠিত হবে এ কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় নেতারা ছড়িয়ে পড়বেন তৃণমূলে। প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়নে আগ্রহী প্রার্থীরা অংশ নেবেন এসব কর্মসূচিতে। বিএনপিও এ মাসে তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন নিয়ে তুমুল বিতর্কে থাকে দলটি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গবন্ধু হত্যায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে সরকারি দলের নানান মন্তব্য। তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করা হয় বিএনপিকে। এ কারণে এ মাসে কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে থাকে বিএনপি। গত বছর এ মাসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন থেকে বিরত ছিল বিএনপি। কিন্ত এ বছর তারা ফিরে যেতে পারে আগের রীতিতে। কারাগারে থাকার কারণে ১৫ আগস্ট খালেদার জন্মদিন পালন করতে পারে বিএনপি। দলীয় নেতারা এমন আভাসই দিয়েছেন। এ মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয়ও থাকতে পারে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে আদালত ও রাজপথে কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। সঙ্গে থাকবে নির্বাচনের প্রস্তুতি। আগস্ট পেরুলেই সেপ্টেম্বরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য সংবিধানও তাই বলে। এ মাসেই গঠন করা হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার। যে সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অক্টোবরে ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তফসিল। এরপরই রাজনৈতিক দলগুলো ঝাঁপিয়ে পড়বে নির্বাচনী যুদ্ধে। অবশ্য বড় দুদলের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপ ধরে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছে নির্বাচন পরিচালনাকারী এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচনী আমেজও ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। কিন্তু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি থেকে এখন পর্যন্ত এক চুলও সরে আসেনি সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া রয়েছেন কারাগারে। দণ্ড পাওয়া মামলায় জামিন মিললেও অন্য মামলায় জামিন না পাওয়ায় তাকে থাকতে হচ্ছে কারাগারে। ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি সেরে ফেললেও তাকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি, তা জানান দিচ্ছেন দলটির নেতারা। এমনকি এ নিয়ে তারা আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন। এর বাইরে দেশে-বিদেশে দেনদরবার করছে বিএনপি। এর মাধ্যমে একাদশ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চায় তারা। এ জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে তারা বিদেশি সংস্থা বা উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে মনে করিয়ে দিতে চায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ প্রভাবশালী দেশগুলোতে দেনদরবার অব্যাহত রেখেছেন দলটির নেতারা। এসবে কাজ না হলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এর সমাধান চায় বিএনপি। এ জন্য দুই জোটের বাইরের সরকারবিরোধী ডান, বাম, মধ্যপন্থি দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহৎ জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। তেমনটি হলে যুগপৎ আন্দোলনের ছক করে রেখেছে বিএনপি। এ আন্দোলন হবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে অনেকটাই কৌশলী তারা। অন্যদিকে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট-মহাজোট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতটুকু সম্ভব অংশগ্রহণমূলক করার চিন্তা করছেন ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে বিএনপিকে কোনো ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। দলটির সব আলোচনা এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচনী ইশতেহার লেখার কাজ চলছে দলটির অভ্যন্তরে। সরকার গঠনে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড করতে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার বলে স্লোগান তুলেছে আওয়ামী লীগ ও সমমনারা। স্থিতিশীল রাজনীতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিষয়টি প্রচারণার সামনে নিয়ে আসছে তারা। পাশাপাশি আগামী নির্বাচন মাথায় রেখে উন্নয়নমূলক কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এদিকে আওয়ামী লীগে চলছে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের বিরতিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর জরিপ কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় বেশি বেশি সময় দিচ্ছেন। দলের শীর্ষপর্যায় থেকে বাড়ি-গ্রাম-গঞ্জ, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান এমপিসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে নির্বাচনী প্রচারণা উৎসবে পরিণত হয়েছে। ঈদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। গরিবদের মাঝে বিতরণ করেছেন খাদ্য ও নতুন পোশাক। দলীয় নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে ঈদ শুভেচ্ছা ও সালামি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মানুষ এখন নির্বাচনের মুডে, সবাই প্রচার শুরু করে দিয়েছে। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এগুলো সেমিফাইনাল, ডিসেম্বরে ফাইনাল। বিএনপিও যে বসে আছে ঠিক তা নয়, সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, সবাই এতে অংশ নেবেন- এ আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এবার বিএনপি নির্বাচনে না গেলে টিকে থাকতে পারবে না। আমি মনে করি, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ভালো করেই বোঝেন, যত কিছুই তারা বলেন না কেন, এবার নির্বাচন না করলে এই পার্টি আর থাকবে না। জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশের সাংবিধানিক ও নির্বাচনী পদ্ধতি এখন যে পর্যায়ে রয়েছে সেখানে সবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কর্তব্য। তিনি বলেন, চক্রান্তকারীদের মোকাবেলা করে গত সাড়ে ৯ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, পাশাপাশি উন্নয়নের ধারাও বেগবান থাকবে। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, এলাকায় এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এ জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেয়ার দরকার নেই। কারণ, মাঠের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত দেবেন আমাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App