×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগে প্রকট দ্বন্দ্ব : বিএনপির অস্বস্তি জামায়াত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৮, ০১:১১ পিএম

আওয়ামী লীগে প্রকট দ্বন্দ্ব : বিএনপির অস্বস্তি জামায়াত
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে আওয়ামী লীগ ভুগছে প্রকট দ্বন্দ্বে আর বিএনপির অস্বস্তির কারণ হতে পারে জামায়াত। আসনটি চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনে আগের ১০টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৫বার, জামায়াত ৩বার ও বিএনপি-জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল। তবে, দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। দলটির বড় মাথাব্যথার কারণ জোটের শরিক জামায়াত। আগের জোটবদ্ধ দুটি নির্বাচনেই আসনটি জামায়াতের ভাগে গেছে। বারবার জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ায় বিএনপিও সাংগঠনিকভাবে এ আসনে ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। যে কারণে এবার বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা আসনটি আর শরিক দলকে দিতে নারাজ। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনগণ ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট মনিরুল ইসলাম, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন, চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমান, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাসির উদ্দীন। এদের কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে এলাকায় পরিচিতি সভা করে নিজেকে তুলে ধরছেন। তারা বিগত সময়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজের কঠোর সমালোচনা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ আসনে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান এডভোকেট মনিরুল ইসলাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রফিকুল ইসলামও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বঞ্চিত হওয়ায় তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সেই থেকে ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয় বিভক্তি। এবারো স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল বিদ্যমান। দলের মধ্যে শেষপর্যন্ত বিদ্রোহের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। দুটি উপজেলাতেই দলের ভেতরে বর্তমান সাংসদবিরোধী একটি পক্ষ গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত কাটিয়ে উঠতে না পারলে এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে পারে। তবে, এ ব্যাপারে সাংসদ মনিরুল ইসলাম অনুসারীরা ভিন্নমত পোষণ করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবলীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আনোয়ার হোসেন নেতাকর্মীদের কাছে গিয়ে তাদের স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করছেন। জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে ইতোমধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, শৈশবে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, যার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তার নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে আছি। আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের তুলনায় তৃণমূলে আমার যোগাযোগ বেশ ভালো। প্রত্যেক গ্রামে আমার নেতাকর্মী ও সমর্থক আছে। দলের নিপিড়ীত নির্যাতিত ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আমি দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করছি। তিনি আরো বলেন, আদর্শের সঙ্গে আমার কোনো বেইমানি নেই। আমি তৃণমূলের নেতাকর্মী সমর্থকদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতিতে আছি। আর যেহেতু দলীয় সভানেত্রী বলেছেন, যে নেতা তৃণমূলসহ সাধারণ জনগণের আস্থাভাজন ও জনপ্রিয় তাকেই আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। আমার সঙ্গে দলের তৃণমূলসহ সাধারণ জনগণের আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেহেতু আমার বিষয়টা অবশ্যই তিনি বিবেচনা করবেন। আমাকে মনোনয়ন দিলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। এ আসনের চৌগাছা উপজেলার অধিকাংশ জনগণের জোরালো মতে, প্রতিবারই চৌগাছার ভোটে ঝিকরগাছার নেতারা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তাই এবার তারা নিজ উপজেলার নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান ওরফে এস এম হাবিবকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পেতে চান। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকে এ আসনে আবারো ‘নৌকা’ প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন রফিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ’৯১ ও ’৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। একবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং আরেকবার হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ মনিরুল ইসলামের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিতর্কিত হন। এ ছাড়াও, কথিত রয়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহম্মদের (প্রয়াত) মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হলেও রফিকুল ইসলাম নিজে নৌকায় ভোট দেননি এবং তার অনুসারীদেরও দিতে নিষেধ করেছিলেন। এদিকে, এ আসনে বিএনপির মাথাব্যথার বড় কারণ জোটের শরিক জামায়াত। যে কারণে এবার বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ আসনটি আর শরিক দলকে দিতে রাজি নয়। এবার এ আসনে ধানের শীষে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। আর সঙ্গত কারণেই জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খানের নাম জোরেশোরে উঠে আসছে আলোচনায়। স্থানীয়দের মতে, এ আসনে মিজানুর রহমান খান যদি বিএনপির প্রার্থী হন তিনি আওয়ামী লীগ জোটের জন্য শক্ত প্রতিপক্ষ হতে পারেন। এ ছাড়া, এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আরো রয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নি। চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এডভোকেট ইসহাকের নামও আলোচনায় আছে। এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন চৌগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল কদর ও জেলা ওলামা পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফিরোজ। প্রত্যেক দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে জনসমর্থনে যার অবস্থান সবচেয়ে ভালো হবে তিনিই পাবেন একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন। এ জন্য সব রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং গণসংযোগের মাধ্যমে তৃণমূলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তৎপর রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App