×

জাতীয়

বাস-লঞ্চ-ট্রেন স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ঢল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০১৮, ১১:০৫ এএম

বাস-লঞ্চ-ট্রেন স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ঢল
ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার থেকেই সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মাথার ওপরে নিয়েই সবাই ছুটছে। আজ থেকে সব পথেই যাত্রীদের ঢল নামবে। যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পথে পথে বাড়ছে নানা ধরনের বিড়ম্বনা ও হয়রানি। গত দুদিন রেলপথেই ঘরমুখো যাত্রীদের ঈদযাত্রা শুরু হয়। তবে গতকাল থেকে সড়কপথেও যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। কখনো প্রখর রৌদ্র আবার কখনো প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করেই উৎসবমুখর মানুষকে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল সকাল থেকে সড়কপথের যাত্রীদের বাস টার্মিনাল, বাস কাউন্টারের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। সকালের দিকেই বাস টার্মিনালগুলোতে ঈদের চাপ নজরে পড়ার মতো ছিল। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চাপ আরো বাড়তে থাকে। গতকাল দুপুরের পর থেকে রাস্তায় ঘরেফেরা মানুষের ঢল নামে। বৃহস্পতিবার শেষ কর্ম দিবসে বেশিরভাগ অফিসের কর্মজীবী ছুটি নিয়ে রেখেছেন। আজ শবেকদরের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ ঘরমুখো মানুষই গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অফিস করে বাস টার্মিনাল ও বাস কাউন্টারের উদ্দেশ্যে ছুটতে শুরু করে। এ কারণে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালের দিকে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। একই কারণে নগরীর টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, কলেজগেট, কলাবাগান, আরামবাগ, ফকিরাপুল এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতেও মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। রৌদ্রের তাপ মাথায় নিয়েই সব বয়সী মানুষকে ছুটতে দেখা গেছে। বিকাল ৩টার দিকে হঠাৎ করেই আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। বৃষ্টি ও প্রচন্ড বিজলী চমকানো শুরু হয়। কিন্তু উৎসবের আনন্দে মুখরিত ঘরমুখো মানুষের যাত্রায় বিঘ্ন ঘটায়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সবাই রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালের দিকে ছুটে গেছে। সব জায়গাতেই রাতে ভিড় আরো বেড়ে যায়। যাত্রীদের হাতে অগ্রিম টিকেট থাকার কারণে সবাই নির্দিষ্ট সময়ে বাসে ও ট্রেনে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। সড়ক পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। যাত্রীরা সময়মতো বাসে উঠছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। বুধবার থেকে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হবে। রাস্তায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা না হওয়ায় উত্তরবঙ্গগামী বাসগুলো ভালোভাবেই চলছে। গাবতলী ও মহাখালী থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল ও বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসগুলো যাত্রীদের ডেকে ডেকে বাসে তুলে গন্তব্যে রওনা হচ্ছে। তবে বরিশাল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের আরিচা, পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে ফেরির জন্য অনেক সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আজ থেকে সড়কে পুরোদমে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচলে আরো বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে। ঈগল পরিবহনের মকবুল জানান, বুধবার সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ পুরোদমে বেড়ে যাবে। তখন অতিরিক্ত বাস দিয়ে সার্ভিস চালু করা হবে। রাতের বাসগুলোতে কোনো সিট খালি নেই। ওদিকে নৌপথেও গতকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় শুরু হয়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, হুলারহাট, ভান্ডরিয়ার মতো বড় বড় নৌরুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো গতকাল যাত্রীদের নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেছে। দুপুরের দিকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই ঘরমুখো মানুষকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। সদরঘাটে এখন লঞ্চে ওঠা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। যাত্রীরা পায়ে হেঁটে টার্মিনাল হয়ে লঞ্চে ওঠার পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে নৌকার সাহায্যেও লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো মাঝ নদীতে নোঙর ফেলে থাকে। ডেকের যাত্রীরা জায়গা পাওয়ার জন্য আগেভাগে নৌকার মাধ্যমে লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। এতে নৌদুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। গতকাল বিভিন্ন রুটের শতাধিক ছোট-বড় লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক ও নৌ নিরাপত্তা) আলমগীর কবির জানান, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে যথারীতি দেশের নৌপথের বিভিন্ন রুটের লঞ্চ চলাচল করেছে। লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গতকাল দুপুরের দিকে আবহওয়া কিছুটা খারাপ হওয়ায় ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়। কিন্তু কোনো রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়নি। ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি। ফলে এখন থেকে টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। অন্যদিকে নিবিঘ্নে এবং নিরাপদে চলছে ঈদের ঘরমুখো মানুষের ট্রেনযাত্রা। কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সব প্ল্যাটফর্মেই নিজ নিজ গন্তব্যের ট্রেনের জন্য অগণিত যাত্রীদের অপেক্ষার প্রহর গুনতে দেখা গেছে। সকাল ৯টার দিকে ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেস স্টেশনে এসে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়মুড় করে ট্রেনে উঠতে শুরু করে। অথচ তখনো ভেতরের যাত্রীরা নামতে পারেনি। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সব ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছেছে এবং গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। তবে নীলসাগর এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও দিনাজপুর এক্সপ্রেস ট্রেন কয়েক মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের ভ্রমণের ব্যাপারে এবার রেল কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান নিলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। কমলাপুর থেকেই যাত্রীরা ট্রেনগুলোর ছাদে উঠে পড়ছে। বিমানবন্দর, টঙ্গী ও জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর ছাদে আর তিল ধারণের জায়গা থাকছে না। কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, প্রতিদিন ৬৬টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২৫টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এগুলো চলবে। প্রায় ৮০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন যাত্রা করছে। রেলওয়ের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আমাদের সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিডিউল বিপর্যয় যেন না ঘটে সেদিকে গভীরভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ৯৭ কিলোমিটার রাস্তা যানজট ও ঝামেলামুক্ত রাখতে কুমিল্লা জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের ৫ শতাধিক সদস্য মোতায়েন থাকবে। আজ থেকে এই সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানিয়েছেন, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জেলা পুলিশ সদস্যদের ঈদের দিন পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে দাউদকান্দি টোল প্লাজায় যানবাহনের ভিড় ছিল না। এখানে কোনো ভোগান্তি নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App