×

জাতীয়

স্বল্প আয়ের মানুষের ফুটপাতই ভরসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০১৮, ১২:০৬ পিএম

স্বল্প আয়ের মানুষের ফুটপাতই ভরসা
রাস্তার পাশ ঘেঁষে থরে থরে সাজানো জিনিস। জুতা থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি পিস, কমসেটিকস, পারফিউম কি নেই এখানে! ‘দেইখ্যা লন তিনশ, বাইছা লন তিনশ, যেইটাই লইবেন তিনশ। কিছুক্ষণ থেমে থেমেই হকারদের এমন হাকডাক। ক্রেতারাও ঝুঁকে পড়ে কেনাকাটা করছেন এখানে। ঈদকে সামনে রেখে পুরো রাজধানীর ফুটপাতই এখন ঈদ মার্কেট। যদিও এখানে সারি সারি দোকান নেই, এসি নেই, নেই কোনো ঝলমলে আলোকসজ্জা। এমনকি ক্রেতা আকর্ষণে নেই র‌্যাফেল ড্র। তবে তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা বলা যায় এসব অস্থায়ী মার্কেটই। অবশ্য এখন শুধু স্বল্প আয় বা নি¤œবিত্তরাই নন, বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজার দরের কারণে কিছু কিছু উচ্চবিত্তও কেনাকাটায় ঠিকানা খুঁজছেন ফুটপাতেই। তবে এ বছর ফুটপাতের পণ্য আর দামি দোকানের পণ্যের খুব একটা পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তবে হ্যাঁ, জিনিসপত্রের চড়া দামে মধ্য আয়ের জীবনে সাদ আর সাধ্যের সমন্বয় করা কঠিন। তাই নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তদের কেনাকাটা নির্ভর করছে ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোর ওপর। কিছু পয়সা বাঁচাতে রাজপথের ফুটপাতের দোকানগুলো ঘুরে তারা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পোশাক। রাজধানীর নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, মালিবাগ-মৌচাক, গুলিস্তানসহ রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতাদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ, যাদের অভিজাত শপিংমলগুলোতে যাওয়ার সাধ্য নেই। কিন্তু কোনো কোনো সময় ফুটপাতে ভালো পণ্য পাওয়া যায় বলে উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরাও ভিড় জমাচ্ছেন। এসব দোকানের বিক্রেতারা জানান, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে বেচাকেনাও ততই বাড়ছে। ঈদ দোরগোড়ায় হওয়ার কারণে বেচাকেনা আরো বেশি জমজমাট হয়ে উঠছে বলে জানান দোকানিরা। অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো জিনিস কিনতে চাকরিজীবীরাও ছুটে আসছেন এ দোকানগুলোতে। দেখা গেল, ফুটপাতের এসব মার্কেটে শোভা পাচ্ছে নারীদের জন্য দেশি সুতি কাপড়ের বিভিন্ন পোশাক। তাতে রয়েছে হাতের ও এমব্রয়ডারি করা রকমারি কারুকাজ। আছে ব্লক বাটিকের ওপর বাহারি পোশাক। আরো আছে কাশ্মীরি ডিজাইনের শাড়ি ও থ্রি পিস, জরি ও সুতার মিশেলে বাহারি নকশার শাড়ি, উজ্জ্বল রঙের জর্জেট শাড়ি ও থ্রি পিস, টিস্যু কাপড়। অন্যদিকে ছেলেদের জন্য রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শার্ট, সুতির প্যান্ট, টি-শার্ট, জিনস প্যান্ট, ফতুয়া প্রভৃতি। রয়েছে শার্ট ও প্যান্টের থান কাপড়। একই সঙ্গে লং গ্রাউন, কিরণ মালা, সারারা, ফ্লোরটার্চ পাখি, লং কামিজের মতো আধুনিক সব ড্রেস ও পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে। হকার নজরুল ইসলাম নিউমার্কেটের ফুটপাতে শিশু ও মেয়েদের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এখানে পোশাক-পরিচ্ছদ যে দামে বিক্রি হয় তা অন্যান্য বড় শপিংমলে বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। নজরুল বলেন, মার্কেটের দোকানের ভাড়া গুনতে হয় অনেক বেশি। ফুটপাত তো আর তেমন নয়। তা ছাড়া আমরা সরাসরি বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে মালামালের লট কিনে আনি। ফলে আমরা কম দামে কিনতে পারি। তাই বিক্রিও করি কম দামে। তবে কেনাবেচা বেশ ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি। বলাকা সিনেমা হলের সামনে গজ কাপড় কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শামীমা বলেন, বাইরের দোকানগুলো থেকে কেনাকাটা করতে ভালো লাগে। কারণ এখানে দাম হাতের নাগালে রয়েছে। একই জিনিস ভেতরের দোকানগুলোতে দাম অনেক বেশি। তবে এখানেও দাম বেড়ে চলছে। রোজার অর্ধেক বলেই বিকিকিনি মোটামুটি জমে উঠেছে বলে জানান বিক্রেতারা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রেতাদের বিক্রিও তত বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। এখানকার ফুটপাতের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে জুতা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা সামগ্রী। আর কিনছেন সব শ্রেণির মানুষ। এমনই একজন আজিমপুর থেকে আসা শামসুন্নাহার বলেন, আমি বেশিরভাগ সময় নিউমার্কেট থেকেই কেনাকাটা করি, তবে ফুটপাতেও ভালো কিছু পাওয়া যায়। ফলে দোকানে কেনার পাশাপাশি ফুটপাত থেকেও কিনে নিই। মালিবাগ-মৌচাকের মাঝখানে অনেক শার্ট, টি-শার্ট আর ফতুয়া-পাঞ্জাবি নিয়ে বসে আছে দোকানিরা। সেখানে চলে রমরমা ব্যবসা। সেখানে ছেলেদের শার্ট, টি-শার্ট ফতুয়া আর পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন মাহবুবুল হক। সারা বছর তিনি সেখানে বিক্রি করেন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে তার দোকানে অতিরিক্ত যোগ হয়েছে বাহারি রং ও ডিজাইনের ফতুয়া আর স্টাইলিশ পাঞ্জাবি, যা পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশপাশের রাস্তার পাশের ফুটপাতে টুপি থেকে শুরু করে ঈদের সব ধরনের কাপড় মিলছে। এখানে ডেকে ডেকে পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন। এক দাম ২৫০ টাকা। এ ছাড়াও ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি। মৌচাক মার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসার খোঁজ নিয়ে জানা গেল এখানে জমজমাট কসমেটিক্স পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। নানা ধরনের নেলপলিশ, লিপস্টিক, কাজল, বিভিন্ন মাথার খোঁপা ও মাথার ক্লিপসহ হরেক রকমের কসমেটিক্স পণ্য সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাও কম নয়। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না এখানে। পরিবারের প্রয়োজনীয় পণ্যটি আগেভাগেই কিনে ফেলছেন সবাই। তবে এখানকার ফুটপাতের জামা বা জুতার ব্যবসায়ীরাও বসে নেই। তাদের বিকিকিনিও বেশ ভালো। সবজি ব্যবসায়ী সোলায়মান পোশাক কিনতে এসেছেন বায়তুল মোকাররমের পাশের ফুটপাতের দোকানে। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য কাপড় কিনতে এসেছি। এখানে কম দামে অপেক্ষাকৃত ভালো কাপড় পাওয়া যাচ্ছে বলেই তার এখানে আসা। ফুটপাতের দোকানগুলোতে বেচাকেনা ভালো হলেও হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই হানা দেয় পুলিশ ও চাঁদাবাজরা। তার ওপর সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান তো আছেই। আবার বৃষ্টি এলেও দোকানপাট গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। ফুটপাতের মার্কেটভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিনস প্যান্ট ৩৫০ থেকে সাড়ে ৭০০, টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৪০০, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০, শাড়ি ৪৫০ থেকে ২ হাজার, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ৩০০, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০, শাড়ি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের মানসিক হাসপাতালের সামনে ফুটপাতের বাজারে রয়েছে সুতির শাড়ি, মেয়েদের সালোয়ার, চুড়ি ও ফিতা। শাড়ি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সালোয়ার ১৫০ টাকা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সাদ ও সাধ্যের কেনাকাটার প্রিয় স্থান রাজধানীর ফুটপাতের বাজারগুলো। ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে এসব বাজারে বেচাকেনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App