×

জাতীয়

মহারশি থেকে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে ব্রিজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০১৮, ০১:৪১ পিএম

মহারশি থেকে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে ব্রিজ
ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদী থেকে গত এক যুগ ধরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে বালু উত্তোলন। ফলে মহারশি নদীর সন্ধ্যাকুড়া এলজিইডি ব্রিজটি হুমকির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি মহারশি নদীর বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। জানা যায়, রামেরকুড়া গ্রামের সামিউল ফকির ২০০৪ সালে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মহারশি নদীর ৬টি মৌজার ৩৫ হেক্টর জমি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ৩০ হাজার টাকা মূল্যে ১ বছর মেয়াদে বালু উত্তোলনের অনুমতি পায়। ১ বছর বালু উত্তোলনের পর সামিউল ফকির পুনরায় খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ইজারা নবায়নের আবেদন করেন। এ সময় মন্ত্রণালয় এক পত্রের মাধ্যমে বালু মহালের ইজারার কর্তৃত্ব জেলা প্রশাসকের ওপর ন্যস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তার আবেদনটি বাতিল করে দেন। এ সময় সামিউল ফকির বালু মহালের ওপর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি রাজস্ব পরিশোধ সাপেক্ষে ৩ সপ্তাহের জন্যে বালু মহালের ওপর স্থিতাবস্থার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ বলে সামিউল ফকির গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বালু উত্তোলন করে আসছেন। হাইকোর্টের ওই রিট মামলার অজুহাতে সামিউল ফকির বালু উত্তোলনের ইজারা মূল্য হিসেবে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রতি বছর ৩০ হাজার টাকা খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে সামিউল ফকিরের লোকজন শুরু থেকেই মহারশি নদীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক শ্যালো মেশিন বসিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। হাইকোর্টের রিটের অজুহাতে বালু উত্তোলন করায় স্থানীয় প্রশাসন কোনো খোঁজখবর নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সুবাদে গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বালু উত্তোলন। বর্তমানে ৪০/৫০টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। হলদি গ্রামবাসী জানান, বর্তমানে মহারশি নদীর সন্ধ্যাকুড়া, হলদিগ্রাম, গোমড়া, ফাকরাবাদসহ সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত চলছে বালু লুটপাট। তারা বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮০/৯০ ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয়। দিন-রাতে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। প্রতি ট্রাক বালু থেকে সামিউল ফকির আদায় করেন ২ হাজার টাকা করে। প্রতিদিন গড়ে এখান থেকে বালু বিক্রি হচ্ছে ৯ লাখ টাকার। তা থেকে সামিউল ফকিরের আয় হয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ এ নদীর পাশে সোমেশ^রী নদীর ৬ একর এলাকা থেকে ১ বছরের জন্য বালু উত্তোলনের ইজারা দেয়া হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ হিসাবে মহারশি নদী ইজারা দেয়া হলে প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে আসবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে। উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, মহারশি নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এলজিইডির সন্ধ্যাকুড়া ব্রিজ হুমকির মুখে। এছাড়া বালু ভর্তি ট্রাক যাতায়াতের কারণে আশপাশের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি এখন হুমকির সম্মুখীন। এ ব্যাপারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান। সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের সামাজিক বনের সদস্য শাহ জাহানসহ গ্রামবাসীরা জানায়, গোমড়া মৌজা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের বাগানটি এখন হুমকির সম্মুখীন। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। অভিযোগ রয়েছে, হাইকোর্টের রিট সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক থাকলেও গোমড়া মৌজাটি রিট এরিয়ার বাইরে। গত এক যুগের অধিক সময় ধরে চলছে এখানে বালু উত্তোলন। এ ব্যপারে সামিউল ফকির জানান, আদালতের নির্দেশে রাজস্ব পরিশোধ সাপেক্ষেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ জানান, রিট আছে। তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App