×

বিনোদন

২৫ বছরের রাজত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০১৮, ০৩:১৯ পিএম

২৫ বছরের রাজত্ব
বলিউড জগতের অন্যতম উজ্জ্বল এক নাম হচ্ছে সালমান খান। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বলিউডে যে কয়েকজন ব্যক্তি একচেটিয়া রাজত্ব করে গেছেন এবং যাচ্ছেন তার মধ্যে সালমান খান শীর্ষে। স্বভাব চরিত্রে অমায়িক, সুদর্শন এবং উচ্চাকাক্সক্ষী এই অভিনেতার জীবনে রয়েছে সব ধরনের অভিজ্ঞতা। বাবার খাতিরে কিংবা পরিচিত মুখের জন্য যে কেবল তিনি টিকে গেছেন এই বিশাল জগতে তা নয়, তার এই খ্যাতির পেছনে তার নিজের পরিশ্রম ছিল প্রশংসাযোগ্য। ১৯৬৫ সালে মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে সেলিম খান ও সালমা খানের পুত্র হয়ে জন্ম নেন সালমান। দুই ভাই আরবাজ খান ও সোহেল খান ছাড়াও তার আরো দুই বোন আছেন। বাবা সেলিম খান এক সময়ে লিপিলেখক বা স্ক্রিপ্টরাইটার ছিলেন। সালমান খানের দুই ভাই ও বলিউডে কিছু সময়ের জন্য থাকলেও তার মতো জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। তার সৎ মা হেলেন ছিলেন এককালের বিখ্যাত আইটেম সংয়ের নৃত্যশিল্পী। ক্যারিয়ারের প্রথমেই নায়ক হিসেবে আবির্ভাব হয়নি সালমানের। ১৯৮৮ সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ সিনেমার সাইড চরিত্র হসেবে আসেন তিনি। সেখানে তার অভিনয়দক্ষতা দেখে ঠিক তার পরের বছর রাজশ্রী প্রোডাকশন ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া’ সিনেমায় ভাগ্যশ্রীর বিপরীতে সালমানকে পর্দার সামনে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৪ সালে ‘হাম আপকে হ্যা কোন’ সিনেমার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। এই ছবিগুলোর পর কখনো ক্যারিয়ার নিয়ে তাকে মাথা ঘামাতে হয়নি। এরপর নিয়মিত প্রতি বছর তিনি বড় বাজেটের ছবিতে কাজ করে যান এবং সবগুলোই বক্স অফিসে হিট হয়। হাম সাথ সাথ হ্যায়, কারান-অর্জুন, বাগবান, মুঝসে শাদি কারো গি, গড তুসি গ্রেট হো, এক থা টাইগার, দাবাং, রেডি সবগুলোই তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করে। আপাতদৃষ্টিতে, সালমান খান একজন সফল অভিনেতা হলেও তাকে এই উচ্চতায় পৌঁছাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তার বাবা স্ক্রিপ্টরাইটার ছিলেন ঠিকই কিন্তু এ জন্য তিনি কখনো কোনো প্রকার সুবিধা পাননি। এমনকি একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এটাও বলেন যে, তার উপস্থিতিতে তার বাবা সঞ্জয় দত্ত, সানি দেওল, অনীল কাপুরসহ অনেকের জন্যই সুপারিশ করতেন কিন্তু তিনি কখনো সালমানের জন্য কাউকে কোনো অনুরোধ করেননি। এ ব্যাপারে সালমানের বাবা সালিম খানের সঙ্গে এক পত্রিকা কথা বললে তিনিও অকপটে এটা স্বীকার করে নেন এবং বলেন যে, কেউ কখনো তাকে সালমানের কথা জিজ্ঞাসা করেনি এবং এজন্য তিনিও কাউকে কিছু নিজে থেকে বলেননি। তিনি আরো বলেন, তিনি সবসময় চাইতেন যাতে তার কথায় নয় বরং নির্মাতারা নিজে থেকে সালমানকে দেখে এবং তাকে ডাকে। সালমানের ভাষায় তিনি কখনো তার বাবা থেকে কোনো সাহায্য পাননি বলেই তাকে বাইরে যেতে হয় নিজে থেকে। যেখানে আমরা এই যুগে বাবার প্রভাব এবং ক্ষমতার জোরে বলিউডে নতুন মুখ দেখি অবিরত সেখানে সালমানের জীবনের এসব দিক তার অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের কথা প্রকাশ করে। প্রথমদিকে সালমান খানকে অনেক অপমানও সহ্য করতে হয়। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সালমান খান বি গ্রেড সিনেমার পরিচালক আনন্দ গিরিধরের কাছে সাহায্যের জন্য যান এবং অপমানিত হন। আনন্দ তাকে কেবল মানাই করেননি বরং সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে দিতে আদেশ দেন। এখন কোটি টাকার গাড়িতে চলাচল করলেও এক সময়ে তাকে লোকাল বাসে চড়ে অডিশনের জন্য যেতে হয়েছে এবং বড় বড় বাজেটের ছবির জন্য সাইন করলেও জীবনের প্রথমদিকে তাকে বেশ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ৭৫ রুপি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি তার প্রথম কোকাকোলার বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। সালমান খান তার প্রথম ছবি ১৯৮৮ সালের ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’তে নিজের মনমতো কাজ করতে পারেননি। রেনু আরিয়ার বিপরীতে করা এই সিনেমার মূল চরিত্রে ছিলেন তখনকার জনপ্রিয় নায়িকা রেখা ও ফারুক শেখ। তার জন্য মিউজিক ডিরেক্টর ল²ীকান্ত পেয়ারেলালের কোনো গানও নির্ধারিত ছিল না। সেই সময়ে কুমার গৌরব নামক এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সঙ্গে সালমানের পরিচয় ছিল এবং তিনি তার ডেনিম কারখানা থেকে কিছু পুরনো জিন্স সালমানকে মাঝে মাঝে শুট করার জন্য পাঠাতেন। এসবের পরও সালমান একবারের জন্যও কারো কাছে নিজের বাবার পরিচয় প্রকাশ করেননি। সালমান যখন একজন উঠতি তারকা তখন তার সঙ্গে গোবিন্দরও পরিচয় ছিল এবং তার ব্যক্তিত্ব তাকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে। সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে আমির খান এবং শাহরুখ খান মাত্র প্রবেশ করেন এবং তাদের সঙ্গে একরকম পাল্লা দিয়েই সালমান খান ছুটে চলেন। বাঘি, সাজান সিনেমার পর বেশ কিছু সময় তাকে মাঝামাঝি সাফল্যের ছবিতে দেখা যায় এবং ১৯৯৪ সালে আবার ‘হাম আপকে হ্যা কোন’র মাধ্যমে তিনি আবার ফর্মে ফিরে আসেন। কারান-অর্জুন এবং আন্দাজ আপনা আপনা ওই সময়ে সাময়িকভাবে ফ্লপ হলেও এখনো মানুষের কাছে তা অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০০০ সালের পর সালমানের ক্যারিয়ারে বেশ কিছু খারাপ দিক নেমে আসে। সেই সময় দীপাবলি ছাড়া আর কখনো সিনেমা রিলিজ হতো না এবং পরপর কয়েকটা দীপাবলিতে কিউ কি, জানেমান, সাওয়ারিয়া মুক্তি পায় এবং ব্যাপক ফ্লপ হয়। এ সময় তার উপদেষ্টা এবং ব্যক্তিগত সহকারীসহ সবাই বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। নিঃসন্দেহে সালমানের সিনেমার টপিক পছন্দ করার ব্যাপারে বেশ গাফিলতি দেখা যায়। এরপর তার বাবা তাকে সিনেমার চরিত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে আবেগী না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। অতঃপর তিনি তার ভাই আরবাজ খানের দাবাংয়ে অভিনয় করেন যা বক্স অফিসে এখনো জনপ্রিয় এবং পরে তার সিক্যুয়েলও নির্মিত হয়। আমির খান, শাহরুখ খানের সঙ্গে সালমান খান মিলে প্রায় ২৫ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে খানের একচেটিয়া রাজত্ব বজায় রেখেছেন। এর মধ্যে তিনি কোনোরকম সহায়তা ছাড়াই অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ জন্যই হয়তো তিনি ‘বিং হিউম্যান’ নামক এনজিওটিও সফলতার সঙ্গে চালাতে পারছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App