×

জাতীয়

লোডশেডিং বিড়ম্বনা চরমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০১৮, ১০:৫২ এএম

লোডশেডিং বিড়ম্বনা চরমে
খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাশেদ গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে পড়েন। ওই সময় আশপাশের প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদেই লোকজনকে ‘হাওয়া খেতে’ দেখা যায়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর রাশেদ আবার ঘরে ফিরে যান। গভীর রাতে তাদের ঘর ছেড়ে ছাদে ওঠার একমাত্র কারণ হলো লোডশেডিং। প্রচন্ড গরমের মধ্যেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অতিষ্ঠ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গতকাল দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। শুধু গতকালই নয়, এমন দুর্ভোগ নিত্যদিনের। রাজধানীর খিলগাঁও, হাজারীবাগ, বনশ্রী, রামপুরা, মগবাজার, মিরপুর, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, শ্যামপুর, চকবাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা নাজিউর রহমান জানান, প্রায় প্রতিদিনই ওই এলাকায় লোডশেডিং হয়। দিনে ২-৩ বার দীর্ঘ লোডশেডিংয়ে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয় তাদের। কখনো কখনো ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে আসে। আবার কখনো ১ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলে। রামপুরা, বনশ্রী ও গোড়ান এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্নতির কথা বলেছেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-বিষয়ক উপদেষ্টা ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় এসেছে এল দাবি করেন। অবস্থার যদি এতই উন্নতি ঘটে তাহলে রাজধানীতে প্রতিদিন কেন দফায় দফায় লোডশেডিং হয়? এই রমজান মাসে প্রচন্ড গরমের মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা রাখেন। এ সময় স্বস্তি পাওয়ার জন্য অন্তত মাথার ওপরে একটি ফ্যান জরুরি হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান ঘোরানোর সুযোগ থাকে না। গত এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেড়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, দেখা গেছে রাতের বেলায় কখনো কখনো হঠাৎ করে ফ্রিজ ও ফ্যান বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু ঘরের ডিমলাইট জ¦লতে থাকে। ভোল্টেজ ব্যাপকভাবে ওঠানামার কারণে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে বাসায় ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মূলত তিনটি কারণে লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটে। প্রথমত চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলে, দ্বিতীয়ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সমস্যা থাকলে এবং তৃতীয়ত রাজধানীতে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনগুলোর কোনো ধরনের কারিগরি ত্রæটি থাকলে। তবে বর্তমান অবস্থায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে এবং সাব-স্টেশনগুলোতে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। শুধু চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কারণেই এলাকা ভাগ করে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কারণেই এখন লোডশেডিং একটু বেশি হচ্ছে। তবে দীর্ঘ সময় যেন কোনো এলাকা লোডশেডিংয়ের আওতায় না থাকে সেদিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে। বর্তমানে তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে সঠিক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না কর্মকর্তারা বলেন, গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। লোডশেডিংয়ের পেছনে এটাই বড় কারণ। উৎপাদন বেশি হলে সরবরাহে কোনো ঘাটতি রাখা হয় না। পর্যাপ্ত সরবরাহ করা গেলে তখন আর লোডশেডিং থাকে না। ডিপিডিসির কর্মকর্তারা জানান, মানসম্মত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়াই লোডশেডিংয়ের প্রধান কারণ। সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ না হওয়ায় বিদ্যুতের ভাল্টেজ সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। হঠাৎ করেই ভোল্টেজ ভয়াবহভাবে ওঠানামা করছে। ২৪০ ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১৬০ বা তার চেয়েও কম ভোল্টেজের বিদ্যুৎ। এ অবস্থায় গ্রাহকরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন কিন্তু ডিপিডিসির এ ব্যাপারে কিছুই করার নেই। ডিপিডিসি যখন পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পায় তখন নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে। দেশের সব এলাকায় লাখ লাখ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ছোট, বড়, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প-কারখানা। তিন লাখের বেশি নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বিঘিœত হয়। উৎপাদিত বিদ্যুৎ অনেক সময় মানসম্মত হয় না। সঞ্চালন লাইনগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না। এ কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই ফলশ্রæতিতে লোডশেডিং হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App