×

পুরনো খবর

জরাজীর্ণ ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ওয়ারীর কার্যক্রম

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০১৮, ০৩:৪৪ পিএম

জরাজীর্ণ ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ওয়ারীর কার্যক্রম
এক সময় ৪ তলা ভবনের পুরোটাই ছিল আবদুর রহিম কমিউনিটি সেন্টার। বর্তমানে শুধু নিচতলায় চলে কমিউনিটি সেন্টারের কার্যক্রম। দ্বিতীয় তলায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক সেন্টার। চতুর্থ তলায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস। আর তৃতীয়তলাটি ভাড়া নিয়ে চলছে ওয়ারী থানার কার্যক্রম। ফলে এ থানায় নেই কোনো পার্কিং ব্যবস্থা। থানার গাড়িগুলো তাই পার্ক করে রাখা হয় অন্যদের বাসার সামনে। এর মধ্যে আবার ড্রাইভার সংকটে একটি গাড়ি অচল অবস্থায় পড়ে থাকে। জায়গার অভাবে থানায় নেই শিশু ও নারীবিষয়ক ডেস্ক। হাজতখানার সামনে কাঠের তাক দিয়ে বানানো হয়েছে গোডাউন। ভবনটিও বয়সের ভারে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। প্রায়ই খসে পড়ে দেয়ালের পলেস্তারা। ছাদের ফাটল চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। এ রকম নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ওয়ারী থানার কার্যক্রম। গত ৭ জুন সরেজমিন দেখা যায়, একই ভবনে কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল, কাউন্সিলরের অফিস ও থানার কার্যক্রম চলায় ওই ভবনের আশপাশে সারা দিনই থাকে বিপুল লোকের সমাগম। থানাটিতে অভ্যর্থনা কক্ষ না থাকায় ডিউটি অফিসারের রুমের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। ওই দিন দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টা পর্যন্ত থানার এসআই কক্ষে কাউকে দেখা যায়নি। এ ছাড়া থানায় কোনো মহিলা পুলিশ অফিসারও চোখে পড়েনি। থানার সামনে রাস্তার দুপাশজুড়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন মামলায় আটককৃত গাড়ি। রাস্তার পাশে রাখায় গাড়িগুলোর অধিকাংশ পার্টস ও চাকা চুরি হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য যে ট্যাংক আছে সেটিও থানার বিপরীত পাশের রাস্তায় রাখা হয়েছে। সেটি দিয়ে পানি সাপ্লাই করা হয় না। এদিকে ওয়ারী রাজধানীর অন্যতম অপরাধ স্পট। মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন ও নারী নির্যাতনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে এখানে। পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কমতি নেই। বাস কাউন্টার থেকে টাকা নেয়া, সোর্সের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় ইন্ধন দেয়া, স্বর্ণের দোকান থেকে টাকা নেয়া ও ফুটপাতের চাঁদা উঠানো এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। থানা সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৮টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ১৮টিই মাদক মামলা। ফেব্রæয়ারি মাসের ৩৭টি মামলার মধ্যে ১৮টি মাদক মামলা, মার্চের ৩৬টি মামলার মধ্যে ২২টি মাদকের, এপ্রিলের ৩৮টি মামলার মধ্যে ১৯টি মাদক মামলা এবং মে মাসের ৩৪টি মামলার মধ্যে ২৩টি মাদকসংক্রান্ত। অন্যান্য মামলার মধ্যে এই ৫ মাসে ৬টি খুন, ১৩টি ডাকাতি ও ছিনতাই এবং ৯টি নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে। থানার কর্মকর্তারা জানান, বলধা গার্ডেন, দক্ষিণ মুসুন্দি লেন, নারিন্দা, ধোলাইখাল, গোয়ালঘাট লেন, লালচান মকিম লেন, টিপু সুলতান রোড, নবাবপুর রোড, চন্দ্রনাথ বসাক লেন, বনগ্রাম রোড, রবিদাসপাড়া রোড, মহাজন লেন, সুরিটোলা লেন, বিসিসি রোড, কাপ্তান বাজার, জুগিনগর, র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট এলাকা নিয়ে থানাটি গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২২ জন এসআই, ৩৩ জন এএসআই ও ৬৩ জন কনস্টেবল রয়েছে। ওয়ারী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ সেলিম মিঞা ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের থানায় নিজস্ব ভবন না থাকায় প্রায় সব কিছুতেই সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক সমস্যা অন্যতম। এ ছাড়াও জব্দকৃত আলামত রাখা নিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওয়ারীতে মাদক মামলা বেশি এটা ঠিক। কিন্তু এখানে কোনো মাদক স্পট নেই। আমরা সব সময় নজরদারির মাধ্যমে মাদক প্রতিহত করার চেষ্টা করি। এর বাইরে, ওয়ারীতে আগে ছিনতাই লেগেই থাকত। আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রায় প্রতিহত করেছি। এখন আর আগের মতো ছিনতাই হয় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App