×

পুরনো খবর

আ.লীগে সম্ভাব্য প্রার্থী ২ : বিএনপিতে একাধিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০১৮, ০১:০১ পিএম

আ.লীগে সম্ভাব্য প্রার্থী ২ : বিএনপিতে একাধিক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে মাঠে নামলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে লবিং চালানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের নেতারাও নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর রয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামায় আসনটিতে নির্বাচনী হাওয়া বেশ জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে। এ ছাড়া এ আসনের বর্তমান এমপি এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাবও বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশ নেয়ার পাশাপাশি চালাচ্ছেন নির্বাচনী তৎপরতা। মাগুরা সদরের ১৩টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসন। ১৯৯৬ সাল থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। ৯৬ থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনে পরপর ৪ বার এমপি নির্বাচিত হন প্রফেসর ডাক্তার সিরাজুল আকবর। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ সিরাজুল আকবর এমপির আকস্মিক মৃত্যুর পর এ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল ওযাহ্হাব। এমপি আব্দুল ওয়াহ্হাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে মাঝে মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় এসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলোতে তার উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ে না। জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার বেশ দূরত্ব রয়েছে বলে অভিযোগ অনেকেরই। যা তার প্রার্থিতা ও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা। তবে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ টি এম আব্দুল ওয়াহ্হাব বলেন, এমপি হিসেবে তিনি রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন তৃণমূলের জনগণ তার সঙ্গে আছে। তিনি আশা করছেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারো বিজয়ী হবেন। দলের সঙ্গে দূরত্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, দলের নেতাদের সঙ্গে তার কোনো দূরত্ব নেই। অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আছাদুজ্জামান এমপির ছেলে সাইফুজ্জামান শিখর। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখর নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি ও রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে মাগুরায় আসছেন। দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের আস্থার নেতা মরহুম আছাদুজ্জামানের ছেলে হিসেবে জেলার রাজনীতিতে সাইফুজ্জামান শিখরের একটি অবস্থান রয়েছে। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক কান্ড থেকে শুরু করে নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশে ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন তিনি। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে এসব কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। সর্বোপরি নেতাকর্মীরা মনে করেন, দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও প্রকাশ্যে কোনো গ্রæপিং না থাকায় মাগুরায় ক্ষমতাসীন দলের গোটা রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে সাইফুজ্জামান শিখরকে ঘিরেই। অন্যদিকে সাইফুজ্জামান শিখরের পক্ষে রাজনৈতিক কর্মকান্ড তার বড় বোন মহিলা এমপি কামরুন লাইয়া জলিও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতার দাবি, সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলার রাজনৈতিক সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সহযোগিতা পাচ্ছেন। মাগুরায় রেললাইন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, বন্ধ হয়ে যাওয়া টেক্সটাইল মিল চালু, নবগঙ্গা ব্রিজ ও এলাংখালী সেতুসহ জেলার অন্তত অর্ধশত উন্নয়ন কার্র্যক্রম বাস্তবায়নে তার অবদান রয়েছে। এ ছাড়া জেলার খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করায় দলমত নির্বিশেষে তার প্রতি মানুষের ব্যাপক আস্থা তৈরি হয়েছে। যে কারণে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে ভোটাররা তাকে সহজে গ্রহণ করবেন। জেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ তানজেল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসছেন। সে ক্ষেত্রে তরুণ নেতা হিসেবে সাইফুজ্জামান শিখরের এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে তাকে সহজে বিজয়ী করিয়ে আনতে সমর্থ হবেন। অন্যদিকে দ্ব›দ্ব-কোন্দলে জড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত বিএনপির প্রায় হাফ ডজন নেতা মাগুরা-১ আসনে দলীয় মনোনয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা কবীর মুরাদ, মাগুরা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল আকতার খান কাফুর, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বা য়ক আহসান হাবিব কিশোর ও সাবেক সহসভাপতি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বহুল অলোচিত ট্রাকে পেট্রল বোমা হামলায় ৫ শ্রমিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত মনোয়ার হোসেন খান। কবীর মুরাদ বলেন, বিএনপির চরম দুঃসময়ে তিনি ৮ বছর মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন অত্যাচার নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন। দলের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইকবাল আকতার খান কাফুর বলেন, তিনি দুবার মাগুরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিকবার এমপি ইলেকশন করেছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সামান্য ভোটে হারলেও মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। যে কারণে মনোনয়ন পেলে তিনি সহজে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আলী করিম জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সব নেতাকর্মী তার পক্ষেই কাজ করবে। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা হাসান সিরাজ সুজা জানিয়েছেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন বলে ঘোষাণা করেছেন। যে কারণে জেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা জাসদের সভাপতি এ টি এম মহব্বত আলী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App