×

অর্থনীতি

বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা তবু নতুন করারোপ নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০১৮, ১১:০৪ এএম

দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ক্রমেই বাড়ছে। যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন খাত, বেড়েছে বিনিয়োগ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে বাজেটে। এদিকে বিভিন্ন খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ার কারণে রাজস্ব আদায়ের টার্গেটও বেড়েছে। মোট ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু রাজস্ব আদায় করতে হবে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। তবে নতুন করে বাড়বে না কর। তাহলে বাড়তে টাকা আসবে কিভাবে? এ ক্ষেত্রেও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে সাধারণ করাদাতাদেরই। এ লক্ষ্যে করকাঠামো পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির আকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাজেটের আকারও। যদিও গত কয়েক বছরের বাজটে বাস্তবায়নের হার বেশ সুখকর নয়। তবে এবারের বাজেটে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যে আসছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এর মধ্যে মূসকের স্তর ও শুল্ক খাতে বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, নতুন বাজেটে নতুন করে করারোপ হবে না। তবে কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস করার মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সংসদে বাজেট উপস্থাপনে রেকর্ডের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী কষছেন নতুন হিসাবও। ভোটার আকর্ষণই তার বাজেটের মূল লক্ষ্য। বর্তমান কর-জিডিপি অনুপাত ১২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করার আশাবাদ অর্থমন্ত্রীর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৫ শতাংশ। সেখানে এবারের বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩৬ শতাংশ। এ অবস্থায় এনবিআরকে কর, মূসক, শুল্ক তিন শাখা মিলে রাজস্ব আদায় করতে হবে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যদিও বিদায়ী অর্থবছরে ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে কাটছাঁট করা হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বাজেটের আকার বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিজস্ব সম্পদ দিয়েই এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য কর আহরণ বাড়াতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেপালের চেয়েও জিডিপির বিপরীতে কর আহরণ কম বাংলাদেশে। বাজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতির থিংকট্যাঙ্ক খ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, করনীতিতে সংস্কার আনা হয়েছে। তবে এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কাস্টমসে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাস্টমস আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে, ভ্যাট আইনও চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে বাজেটে রাজস্ব আদায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। আর ৪৮তম সম্ভাব্য প্রস্তাবিত বাজেট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার। অর্থাৎ প্রথমটির চেয়ে ৫৯০ গুণ বেশি। কিন্তু অর্থনীতি যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাজেট বড় হয়নি। ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার কোটি ডলার জিডিপির দেশগুলোর ২০১৬ অর্থবছরের বাজেট তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশই সবচেয়ে পেছনে। কিন্তু বাস্তবায়নের সক্ষমতাতেও আজো পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বরাবরের মতো এবারো বাজেটের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরে আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাজেটে বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই তা করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। এসব উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন গত কয়েক বছর ধরে ক্রমেই কমছে। এতে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে এনবিআরের বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ ভোরের কাগজকে বলেন, এবারের বাজেটে ভ্যাট আহরণকে প্রধান খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো করারোপ করতে নাও হতে পারে। তবে বাজেটটি বাস্তবতার আলোকে হওয়া উচিত ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App