×

পুরনো খবর

বিমানবন্দরের ৮৬ ভাগ মামলাই প্রতারণার

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০১৮, ১২:১৪ পিএম

বিমানবন্দরের ৮৬ ভাগ মামলাই প্রতারণার
আওতাভুক্ত এলাকায় জনবসতি না থাকলেও বিমানবন্দর থানার অধীনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। এর মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিভিল এভিয়েশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ঢাকা কাস্টমস হাউসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতারণা চক্র। অন্য জায়গা থেকে প্রতারণার প্রস্তুতি নিয়ে এসব জায়গায় প্রয়োগ করায় পুলিশ তাদের ধরতে হিমশিম খায়। আবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে আবার একই ধরনের কাজে লিপ্ত হয় তারা। ফলে বিমানবন্দর থানায় প্রতারণা মামলার সংখ্যাই বেশি। এদিকে, বিমানবন্দরে স্বর্ণ আটকের ঘটনায় মামলা হলেও নানা জটিলতায় সেগুলোর তদন্ত আলোর মুখ দেখে না বলে জানা গেছে। থানা সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি গাড়িচুরি ও ১টি মাদক মামলা। বাকিগুলো বিভিন্ন প্রতারণার মামলা। ফেব্রæয়ারিতে ৩৪টি মামলার মধ্যে ৪টি মাদক সংশ্লিষ্ট, বাকি ৩০টিই প্রতারণার। মার্চ মাসে প্রতারণা মামলা হয়েছে ৩১টি। এ ছাড়া ওই মাসে ২টি চুরি ও ৫টি মাদক মামলা হয়েছে। এপ্রিল মাসের ৪৩টি মামলার মধ্যে ১টি গাড়ি চুরি ও ৬টি মাদকের, বাকি ৩৬টি প্রতারণার মামলা। মে মাসের ৪৫টি মামলার মধ্যে ৩৭টিই প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। আর চলতি মাসের প্রথম ৫ দিনে দায়েরকৃত ৭টি মামলার সবগুলোই প্রতারণার। সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের ৫ জুন পর্যন্ত দায়েরকৃত ২১২টি মামলার মধ্যে ১৮৩টি দায়ের হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। যা মোট মামলার প্রায় ৮৬ শতাংশ। আর প্রতারণার মামলাগুলোর মধ্যে পাসপোর্ট প্রতারণার মামলাই বেশি। এ ছাড়া স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় চলতি বছর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২৭টি মামলা দায়ের করলেও বিভিন্ন জটিলতায় সেগুলোর তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। থানার কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দর থানা এলাকায় প্রতারণা বেশি হলেও প্রতারক চক্রগুলোর সব ভুয়া কাগজপত্র তৈরি হয় পল্টন, মতিঝিলসহ বিভিন্ন জায়গায়। ফলে প্রতারণার আগে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাদের সহজে চিহ্নিত করতে পারে না। তবে, অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। থানাটিতে আবাসিক সমস্যা চরমে বলে জানান তারা। সরেজমিন দেখা যায়, র‌্যাব সদর দপ্তরের একটি ভবনের নিচ তলায় কয়েকটি রুম দিয়ে চালানো হচ্ছে বিমানবন্দর থানার কার্যক্রম। ভিআইপি এলাকা হওয়ায় গণপরিবহন চলাচল নেই, ফলে ভুক্তভোগীদের অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে থানায় পৌঁছতে হয়। থানায় অভ্যাগতদের তেমন ভিড় না থাকলেও বসার তেমন ব্যবস্থা নেই। নারী ও শিশু ডেস্ক থাকলেও থানায় কোনো মহিলা অফিসারকে দেখা যায়নি। থানার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বারান্দায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। নেই বিভিন্ন মামলায় আটককৃত গাড়ি রাখার জায়গাও। মহিলা হাজতখানাটি গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মহিলা আসামিদের কোথায় রাখা হয় জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের থানায় মহিলা আসামি কম আটক হয়। তারপরেও আটক হলে এসআই রুমে, সংখ্যায় বেশি হলে ডিউটি অফিসারের রুমে রাখা হয়। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার ওসি নুরে আজম মিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, নিজস্ব ভবন না থাকাটাই আমাদের প্রধান সমস্যা। সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে থানার নিজস্ব জায়গার জন্য আলাপ-আলোচনা চলছে। জায়গা পেয়ে গেলে এ সমস্যাগুলো আর থাকবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস থাকায় এখানে প্রতারণার হারটা বেশি। তবে, আমরা সবসময় সতর্ক থাকি। অভিযোগ পেলেই অপরাধীকে আটক করা হয়। স্বর্ণ চোরাচালান মামলার বিষয়ে ওসি বলেন, মামলাগুলো তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সব মামলা তদন্ত করে থাকি। থানা সূত্র জানায়, রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেঙ্গল সেন্টার, ইঞ্জিনিয়ার জোবায়ের হোসেন স্ট্রিট, কাউলার রেলগেট, হাজিক্যাম্প, বিমানবন্দর-দক্ষিণখান রোড, আশিয়ান সিটি রোড আংশিক, বিমান হাউসিং, জসিমউদ্দিন এভিনিউ, উত্তরা ক্লাব, বটতলা, বেড়িবাঁধ রোড আংশিক এলাকা নিয়ে থানাটি গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২২ জন এসআই, ২৩ জন এএসআই ও ৩৯ জন কনস্টেবল রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App