×

জাতীয়

নারীর টান শাড়িতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০১৮, ০১:৩৮ পিএম

নারীর টান শাড়িতে
শাড়িতেই অনন্য নারী। অন্য যে কোনো পোশাকের চেয়ে শাড়িই নারীকে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। উৎসবে-পার্বণে তাই শাড়িই হয়ে ওঠে প্রিয় পোশাক। তবে ফ্যাশনপ্রিয় অনেক নারী শাড়িকে ঝামেলাও মনে করেন। এর পরও ঈদ এলেই নারীরা পছন্দের কাক্সিক্ষত শাড়িটিই কেনেন। অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে একটি শাড়ি না হলে ঈদ আনন্দ যেন ম্যাটম্যাটেই থেকে যায়। তাই নারীরা এখন শাড়ির দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। দোকানিরা জানান, এ ঈদে জামদানি শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও দেশি শাড়ির প্রতি নারীর আগ্রহ অনেক বেশি। মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রং ও পেটানো কাজের সব কাতান শাড়ি ছাড়াও উজ্জ্বল রং সোনালি পাড় আঁচলের কাজের শাড়িগুলোই নজর কাড়ছে বেশি। এ ছাড়াও সিল্ক, হাল্ফ সিল্ক শাড়ির চাহিদাও প্রচুর। উৎসব আর বর্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই সুতি দেশি শাড়িগুলোর নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে ট্র্যাডিশনাল মোটিফ। সুতি, সিল্ক আর তঁতের শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ি দোকানিরা। তাঁত আর সুতি শাড়ির মধ্যেও আছে নানা রকমের টাঙ্গাইলের তাঁত, জুট কটন, সফট কটন, অ্যান্ডি কটনসহ আরো নানা ধরনের সুতি আর তাঁতের শাড়ি। দুই বা তিনটি ভিন্ন কাপড়ের কন্ট্রাস্টও এবার বেশ চলছে। আর সিল্ক শাড়ির মধ্যে বাজারে চাহিদা বেশি টাঙ্গাইলের সিল্ক, হাফ সিল্ক, সিল্ক জামদানি, পিওর সিল্ক, এÐি সিল্ক এবং অবশ্যই রাজশাহী সিল্ক। তা ছাড়া এ ঈদে দেশি শাড়ির বেশ বড় কালেকশন নিয়ে বাজারে এসেছে দোয়েল সিল্ক, ঊষা সিল্ক এবং সপুরা সিল্ক। সপুরা সিল্কের শোরুম ঘুরে দেখা যায়, তাদের ঈদ কালেকশনে সিল্কের পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছে মসলিন, এÐি, বলাকা সিল্ক, সফট সিল্ক আর তসর সিল্ক। এসবের ওপর নানা ধরনের নকশার কাজ রয়েছে। হাতের কাজের পাশাপাশি এতে স্ক্রিন প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি করা হয়ে থাকে। এসব শাড়ি সব বয়সী নারীকেই ভালো মানায়। রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে শাড়ির দোকানগুলোতে দেখা গেল বিভিন্ন বয়সী নারীদের পদচারণা। মোটে দুমাস হলো বিয়ে হয়েছে তুলির। বিয়ের পরে এবারের প্রথম ঈদ করতে হবে শ্বশুরবাড়িতেই। বৌ-শাশুড়ি মিলে বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে শাড়ি দেখছেন। কিন্তু বৌমার জন্য ঠিক যেন পছন্দসই শাড়ি খুঁজেই পাচ্ছেন না ফিরোজা বেগম। তবে দেখে বোঝা গেল, শাড়ি কেনায় তিনি বেশ অভিজ্ঞ। পাড়, জমিন, সুতা, কালার কম্বিনেশন খুব নিখুঁদভাবে মেলাচ্ছেন। অনেক শাড়ির ভিড়ে অবশেষে একটা গাঢ় জাম রংয়ের কাতানেই চোখ আটকে গেল তার। বৌমার সম্মতি নিয়ে, বেশ দরদাম করে শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেললেন শাড়িটা। বৌ-শাশুড়ি দুজনই খুব খুশি। বিভিন্ন মার্কেটের শাড়ির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি রং, কাপড়ের ভিন্নতা আর ডিজাইনে নতুনত্ব শাড়ির জনপ্রিয়তা এখনো বহাল রেখেছে। এবার সুতির পাশাপাশি সিল্কের চাহিদাও অনেক বেশি চোখে পড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি চলছে কাতান। দোকানিরা জানান, একটু জমকালো ভাব আনতে কাতান শাড়িই বেছে নেন সবাই। আর কাতানেরও রয়েছে নানা পদ। জুট কাতান, কাঞ্চিবরণ কাতান, চেন্নাই কাতান, মসলিন কাতান, মিলেনিয়াম কাতান, কোটা কাতানসহ বাহারি সব কাতান। এসব কাতানে জরি সুতা দিয়ে কারচুপির কাজ করা হয়েছে। আর জামদানি বরাবরই তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। রং আর ডিজাইনে নতুনত্ব তো রয়েছেই। গৎ বাঁধা কাজের পাশাপাশি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে নিত্যনতুন কাজের ছড়াছড়ি। তারা জানান, এ ঈদে কাতান শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৯ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। ময়নামতি কাতান সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সিল্ক শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, জামদানির দাম পড়বে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ঈদ উপলক্ষে মসলিন শাড়িতে করা হয়েছে বিটস, দপকা, জরি কম্বিনেশনে হাতের কাজ। জামদানি শাড়িতে করা হয়েছে পালস, বিটস দিয়ে হাতের কাজ। এ ছাড়া আছে শিপন ও জর্জেট শাড়ি। গরমের কারণে শাড়ির রং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হালকা রং। তা ছাড়া দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোতে রং এবং ভিন্নতায় এসেছে নতুনত্ব। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাদা-কালো, বুনন, প্রবর্তনা, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, ড্রেসিডেল, ওজি, বাংলার মেলা, নিপুণ, বিবিয়ানা, ঊষা, সপুরা সিল্ক, দেশাল, নিত্য উপহার, আবর্তন, নবরূপা, অন্যমেলা, নারীমেলা, রঙ, আইরিশ, মিয়াবিবি, তহুস ক্রিয়েশন, নন্দিনী, এম ক্র্যাফট, ডলস হাউস, উদয়ন, ময়ূরী, আড়ম্বর, ফারাস ক্রিয়েশন, ঝলক, ফড়িং, লাল নীল বেগুনিসহ অনেক ফ্যাশন হাউস। রাজধানীর ফরচুন শপিংমলের ‘জান্নাত’ শাড়ি বিতানের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদ বাজারে এবার কাতানই সবার ওপরে। তবে ভারতীয় রাজকোট কাতান সবচেয়ে বেশি চলছে, যার দাম ৯ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া রয়েছে কাঞ্চিবরণ, তাইঞ্জবরণ, ক্যাটালগ, বিনয়, সুইট গার্ল, নাইন এম এম, লেহেঙ্গাসহ নানা ডিজাইনের শাড়ি। প্রিয় শাড়ি গ্যালারির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, কাতান, সিল্কের পাশাপশি এ ঈদে ইন্ডিয়ার গাফ হাফ-হাফ ক্যাটালগ, ক্যাটালগ প্রিন্ট শাড়ির বেশ চাহিদা। এ ছাড়া কুচি নেট কুচি জর্জেটসহ বিভিন্ন ডিজাইনের ভারতীয় শাড়ির চাহিদাও রয়েছে। নাজিব শাড়ি কটন বিতানের মো. জুয়েল বলেন, আমরা চাই ইন্ডিয়ান শাড়ি আর দেশে না আসুক। দেশি শাড়ির বেচা-বিক্রি ভালো। আশা করছি আগামীতে আরো বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App