×

পুরনো খবর

কোন্দল প্রকট আওয়ামী লীগে : বিএনপির অস্বস্তি জোট শরিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০১৮, ০২:১৮ পিএম

কোন্দল প্রকট আওয়ামী লীগে : বিএনপির অস্বস্তি জোট শরিক
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ না হলেও তাদের মূল অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে জোটের শরিক। এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় অনেক নেতাকর্মী প্রতিনিয়ত জোর তদ্বিরসহ প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ জন। ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী তিনবারের এমপি খান টিপু সুলতানকে (প্রয়াত) হারিয়ে এখানে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য্য। পর্যবেক্ষকদের মতে, অতীতে বিভিন্ন সময় এ আসনে নৌকার হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আর এসব কোন্দল এতটাই প্রকট যে নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মসূচি পালন করেন চার গ্রæপে বিভক্ত হয়ে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দ্ব›দ্ব আরো ব্যাপকতা পেয়েছে। স¤প্রতি কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর পর কোন্দল খানিকটা কমলেও থামছে না কাদা ছোড়াছুড়ি। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রায় এক ডজন নেতা। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় স্বপন ভট্টাচার্য্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তী সময়ে তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। খান টিপু সুলতান মারা যাওয়ায় আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জোর মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য্য। বর্তমানে তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগও করছেন। তবে, সাংসদ বিরোধী একটি পক্ষের ভাষ্য, বিভিন্ন দল থেকে আসা লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন বর্তমান এমপি। তাদের কারণে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এমপির কাছে ভিড়তে পারেনি। তারা মনে করেন দ্ব›দ্ব-সংঘাত কাটিয়ে উঠতে না পারলে এ আসনটি এবারো বিদ্রোহীর কবলে পড়ে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে পারে। তবে, এ ব্যাপারে সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য্যরে অনুসারীরা ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন, স্থ’ানীয় একটি সিন্ডিকেট যারা জনগণের সুবিধা থেকে লুটপাট করত, বর্তমান এমপির সময়ে তা করতে না পেরে তারা এমপির প্রতিপক্ষ সৃষ্টি করতে চাইছে। তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী বর্তমান এমপির সঙ্গেই রয়েছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, তিনি কখনো দলের বাইরের কেউ নন। এমপি হিসেবেও তিনি সব সময় দল ও এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে হাইকমান্ডের সঙ্গে তার যোগাযোগ ভালো রয়েছে। তবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ আসনে বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য ছাড়াও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রয়াত খান টিপু সুলতানের স্ত্রী অধ্যাপক ডা. জেসমিন আরা বেগম, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মজিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজি মাহমুদুল হাসান, মণিরামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ও দলের সহসভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলু, মেজর (অব.) মোস্তফা বনি, মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ আকবর ও কামরুল হাসান বারী। এদের কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিয়ে এলাকায় নতুন করে পরিচিতি সভা করে নিজেকে তুলে ধরছেন। আগামী নির্বাচন বিষয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে আছি। মণিরামপুরে চরম অস্থিরতা চলছে, দলীয় কোন্দলে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা হতাশ। জনগণ পরিবর্তন চায়। তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি প্রার্থী হবেন বলে জানান। এদিকে, প্রয়াত খান টিপু সুলতানের অনুসারীরা তার স্ত্রী অধ্যাপক ডা. জেসমিন আরা বেগমকে প্রার্থী করানোর জন্য সভা সমাবেশসহ গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তাদের বিশ^াস, খান টিপু সুলতানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অধ্যাপক ডা. জেসমিন আরা বেগমই দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। অধ্যাপক ডা. জেসমিন আরা বেগমও এই আশা নিয়ে সবাইকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার আহŸান জানাচ্ছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতান পরলোকগমন করার পর স্থানীয়দের আকৃত্রিম ভালোবাসায় রাজনীতির মাঠে নেমেছি। আপামর জনসাধারণের আমার প্রতি পূর্ণ বিশ^াস ও আস্থা আছে। সংসদ নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারব। এ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সেই থেকে উপজেলা তৃণমূলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। তবে, তিনিসহ অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই থাকবেন। এ ছাড়া, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শিল্পপতি কামরুল হাসান বারী, মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ আকবর ও মেজর (অব.) মোস্তফা বনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ না হলেও তাদের মূল অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম। ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের স্বার্থে অতীতে যশোর-১ এবং যশোর-২ আসনের মতো যশোর-৫ আসনও শরিকদের ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। আগামী নির্বাচনেও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মওলানা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তিনি এ আসন থেকে একাধিকবার সাংসদ হয়েছেন। ২০ দলীয় জোটের স্বার্থে আগামী নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি করছেন তিনি। আবার জামায়াতে ইসলামীও জোরেশোরে আসনটি দাবি করছে। দলটির শুরা সদস্য এডভোকেট গাজী এনামুল হক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টির দুজন নেতা এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য তাদের নিয়ে ভীতি নেই আওয়ামী লীগে। এদিকে, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন দলের মধ্যে প্রায় একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে স্বল্প ভোটে পরাজিত এই নেতা আগামী নির্বাচনেও ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। অন্যদিকে, এ আসন থেকে আফসার আহমেদ সিদ্দিকী একাধিকবার এমপি হয়েছেন। তার ছেলে যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু বাবার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়া, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দিলেও পরে দলে ফিরেছেন। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। প্রত্যেক দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে জনসমর্থনে যার অবস্থান সবচেয়ে ভালো হবে তিনিই পাবেন একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App