×

পুরনো খবর

লালবাগে পুলিশই মাদক ব্যবসায়ী!

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০১৮, ০৩:২৮ পিএম

লালবাগে পুলিশই মাদক ব্যবসায়ী!
প্রতিটি থানা এলাকায় যে কোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের। যদি কেউ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে অথবা কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা পুলিশের গুরু দায়িত্ব। কিন্তু ডিএমপির লালবাগ থানা একদমই ব্যতিক্রম। এই থানার কিছু অসৎ কর্মকর্তা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছেন মাদক ব্যবসায়। সোর্সের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি করে অনেকেই রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি। তবুও তাদের টাকার খিদে মেটে না। নিজেরা সদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা, আবার অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়Ñ ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান, ট্রাক স্ট্যান্ড ও ভাঙ্গারি দোকান থেকে পুলিশের নামে চাঁদা উঠানো হয়। রয়েছে জিডির বিনিময়ে টাকা নেয়া ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগও। পুলিশের একাধিক সোর্স ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, লালবাগ থানার এসআই মিজান ও এসআই দেলোয়ার মূলত মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারাই বিভিন্ন আসামির কাছ থেকে জব্দ করা ইয়াবা ও বিভিন্ন মাধ্যমে আনা ইয়াবা ট্যাবলেট তাদের প্রধান সোর্স বাবু ও রিপনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন অন্য ডিলারদের কাছে। ইয়াবা বিক্রির একটি নির্দিষ্ট টাকা ডিলাররা রেখে সব টাকাই বাবুর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন এই দুই এসআইয়ের কাছে। এই টাকা দিয়ে এসআই মিজান ও দেলোয়ার রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। সম্প্রতি এসআই মিজান কামরাঙ্গীরচরে তার সোর্স মাদক ব্যবসায়ী খলিলের বোন জামাইয়ের কাছ থেকে একটি বহুতল ভবন কিনে সেখানেই বসবাস করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। পুলিশের এ ইয়াবা চক্রে জড়িত আছেন এসআই মতিন এবং এএসআই একরামও। তবে, মাদকের ব্যবসা করে এসআই মিজান ও দেলোয়ারের ভাগ্য রাতারাতি খুলেছে বলে সূত্রের খবর। গত ১ জুন দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, এসআই মিজান ও এএসআই একরাম তাদের আস্থাভাজন সোর্স বাবুর সঙ্গে থানার পাশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন। এর একটু পরেই এসআই মিজান নিজ মোটরসাইকেলে বাবুকে নিয়ে চলে যান। এদিকে, পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও। একাধিক সূত্র জানায়, লালবাগ মাদকের অভয়ারণ্য। সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রভাব পড়েনি এখানে। ফলে লালবাগের ডালঅলা গলিতে আলমগীর; বিস্কুট কারখানার ৩ নম্বর গলিতে জামাল, রুবেল ও ওয়াসী; শহীদনগর ২ নম্বর গলিতে আনোয়ার হোসেন স্কুলের পাশে টাক রাসেল ও সজল; তাউলার পাড় এলাকায় আজব শাহীন ও সুমন; বালুঘাট আদা গলি, শহীদনগর বউ বাজার ও ১ নম্বর গলিতে রাসেল, ফারুক, কুন্দা ফজর আলী ও দিপু; লোহার ব্রিজ এলাকায় আয়নাল সরদার, সুমন ও বিল্লাল; বেড়িবাঁধ ঘোড়ার গাড়ি স্ট্যান্ডে আলমগীর অবাধে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও লালবাগের বাঁশপট্টি, শ্মশানঘাট, বালুঘাট, নবাবগঞ্জ সেকেন্ড লেন ও ট্রাক স্ট্যান্ডে রয়েছে একাধিক মাদক স্পট। এদের ইয়াবা সাপ্লাই করে সুকানি বাদল ও মাইকেল। মাইকেল প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা থানা-পুলিশ ও সোর্সদের মাসোয়ারা দেয়। ফলে উপরের চাপে পুলিশ মাঝেমধ্যে মাদক অভিযান চালালেও সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা ঠিকই সটকে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে এসআই মিজান ও এসআই দেলোয়ারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, লালবাগ পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে ফুটপাত, ট্রাক স্ট্যান্ড ও ভাঙ্গারি দোকানে চাঁদাবাজির অভিযোগ। ট্রাক স্ট্যান্ডে চালক ও একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেড়িবাঁধে ফুটপাত ও ভাঙ্গারি দোকান থেকে পুলিশের নামে ৫০-১০০ টাকা করে চাঁদা উঠায় শুকুর মিয়া। আরএন্ডডি রোড থেকে একই হারে চাঁদা নেয় সোনাই। ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা নেয় মনির তালুকদার। মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির পাশাপাশি এ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে আটক বাণিজ্য এবং হয়রানির অভিযোগও। ১ জুন দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, থানার গেটের পাশে একটি বন্ধ চায়ের দোকানে বসে আছেন বোরকা পড়া এক মহিলা। থানায় কেন এসেছেন? জানতে চাইলে ওই মহিলা বলেন, আমার স্বামীর নাম সাঈদ। মুদির দোকানদার। শুধু শুধু পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। এখন বলছে সঙ্গে ৫০টি ইয়াবা ছিল। মামলা করা হবে। আমার স্বামী ইয়াবা খেত মাঝে মাঝে। কিন্তু যখন আটক করা হয়েছে তখন তার সঙ্গে কিছুই ছিল না। একটু পরই একটি এফজেড-এস (ঢাকা মেট্রো-ল ৩৪৬১৫৯) মোটরসাইকেলে থানার সামনে আসেন নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আনিস। ওই মহিলা এসআই আনিসের সঙ্গে থানার ভেতরে যান। কিছুক্ষণ পর ওই মহিলা বাইরে এসে এ প্রতিবেদককে বলেন, এখন আমাকে চলে যেতে বলেছে। কাল (২ মে) জানানো হবে ছাড়াতে কত টাকা লাগবে। দুপুর ২টার দিকে থানার সামনে আসেন মধ্যবয়স্ক এক মহিলা ও তার স্বামী। মহিলাটি তার স্বামীকে বলছিলেনÑ প্রতিবার লোন করে ছেলেকে ছাড়াবা। আবার এই কু-কাজ (ইয়াবা বিক্রি) শুরু করবে। এর চেয়ে ভালো কারাগারে যাক। তবে, এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সরজমিনে থানায় একাধিক দালালের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। মূলত তারাই আসামি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়। থানায় জিডি করতে আসা এক যুবক জিডির বিনিময়ে টাকা নেয়ার অভিযোগও করেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ থানার ওসি সুবাস কুমার পাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমার থানায় কোনো মাদক স্পট নেই। আর পুলিশ মাদক ব্যবসা করবে, সে প্রশ্নই আসে না। এরপর কয়েকটি স্পট ও কয়েকজন সোর্সের নাম বললে ওসি বলেন, পুলিশ অফিসারের নাম বলেন। তাহলে বুঝতে পারব সে ব্যবসা করে কিনা। কিভাবে বুঝবেন জানতে চাইলে প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে ওসি বলেন, আপনি যেমন অভিযোগ জানালেন। এ ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। থানায় আটক বাণিজ্য হয় না বলেও জানান ওসি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App