কিংবদন্তিদের মজার তথ্য
মেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০১৮, ০২:৪১ পিএম
শোবিজ জগতে বলিউড তারকাদের কত মুখরোচক, কত গরম খবরাখবর আমরা প্রতিনিয়ত জানতে পাই। শতবর্ষী এ জগতের কিছু অজানা তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের এই লেখা। চলুন পাঠক, জেনে নেই সেসব মজার তথ্যগুলোসময়ানুবর্তী অমিতাভ বর্তমানে দেখা যায় যে, পরিচালকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন অভিনেতা, অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে শিডিউল ফাঁসানোর জন্য! কিন্তু দেখুন ‘বিগ বি’ খ্যাত অমিতাভ বচ্চন সেই শুরু থেকেই ছিলেন সময়ানুবর্তী। এমনো অনেক সময় গিয়েছে যখন তিনি এত আগে এসেছেন যে ফিল্মিস্তান স্টুডিওর গেট তিনি নিজেই খুলেছেন এবং তখন পর্যন্ত প্রহরীও আসেনি। একই অভিনেতার সঙ্গে প্রেমিকা ও মা’র চরিত্রে আমির খান অভিনীত বিখ্যাত সিনেমা রাং দে বাসান্তি অনেকেই হয়তো দেখেছেন। সে সিনেমায় শহীদ হওয়া এয়ার ফোর্স পাইলট অফিসার অজয় রাথোডের মা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি, তিনি হলেন প্রথিতযশা অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে অসংখ্য হিট সিনেমা উপহার দেয়া এ অভিনেত্রী, ১৯৭৬ সালে আদালত সিনেমায়, ‘বিগ বি’ খ্যাত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তী সময়ে, ১৯৭৮ সালে মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে ত্রিশুল সিনেমায় অমিতাভ বচ্চনের মা’র চরিত্রে দেখা যায়। প্রথমে পরিবার এরপর সিনেমা আমরা বর্তমানে অভিনেত্রী কাজলকে দেখেছি সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা করতে তিনি পরিবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ ধরনের সাহসী কাজ করেছেন যিনি সেই ৭০-এর দশকে, তিনি হলেন ডিম্পল কাপাডিয়া। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি রিশি কাপুরের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে ববি সিনেমায় অভিনয় করেন। অসাধারণ অভিনয় করে সে বছর জিতে নেন ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার। সে বছরই রাজেশ খান্নার সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর পরিবারকে সময় দিতে ও সন্তান প্রতিপালনের জন্য ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি সাময়িক অবসর নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৮৫ সালে সাগর সিনেমার মধ্য দিয়ে রাজসিক প্রত্যাবর্তন করেন। মুঘল-ই-আজম (১৯৬০) যারা ক্লাসিক ঘরানার মুভি দেখেন তারা মুঘল-ই-আজম নাম শুনেই বলতে পারবেন কি অসাধারণ একটি সিনেমা এটি! এক সময় বলিউডের সর্বকালের ব্যবসাসফল সিনেমা হিসেবে তকমা পাওয়া সিনেমাটি তিনটি ভাষায় শুট করা হয়েছিল। যখন সিনেমাটির তামিল ভার্সন ফ্লপ খায়, তখন ইংরেজি ভাষার ভার্সনটিও বন্ধ করে দিয়েছিল সিনেমাটির সংশ্লিষ্টরা। দিলীপ কুমারের প্রত্যাখ্যান বর্তমানে বলিউড শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই মুখিয়ে থাকেন ইংরেজি সিনেমায় অভিনয় করবেন বলে। কিন্তু ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্রকার ডেভিড লিন হতে পাওয়া আন্তর্জাতিক প্রকল্প ‘খধৎিবহপব ড়ভ অৎধনরধ’ সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়া সত্তে¡ও অভিনেতা দীলিপ কুমার অজানা কারণে তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরিচালক অগত্যা মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরীফকে দিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেন। লতা মুঙ্গেশকর ও বিদ্যালয়ের থিম সং লতা মুঙ্গেশকরের গান শোনেননি এমন মানুষ হয়তো কমই আছেন। ভারতের নন্দিত শিল্পীদের একজন তিনি। হাজার হাজার গান রয়েছে তার গাওয়া। ১৯৫৭ সালে দো আখে বারাহ হাত সিনেমায় ভাসান্ত দেসাইয়ের পরিচালনায় ‘অ্যায় মালিক তেরে বান্দে হাম’ গানটি পাকিস্তানের একটি বিদ্যালয়ে থিম সং হিসেবে নির্ধারিত হয়। গাব্বার সিং-এর গলায় কমজোরি জনপ্রিয় গাব্বার সিং খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা আমজাদ খান প্রায় বাদই পড়ে যেতেন শোলে সিনেমা হতে। পাÐুলিপির নির্মাতা জাভেদ আখতার তার গলার কমজোরির জন্য গাব্বার সিং চরিত্রে তাকে অনুপযুক্ত মনে করেছিলেন। তাই প্রাথমিক বাছাই হিসেবে ড্যানি ড্যাঞ্জোংপাকে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তাকেই নির্ধারণ করে সিনেমাটির জন্য। এ কারণে ভাগ্যদ্রষ্টাকে ধন্যবাদ দেয়াই যায়! এত অসাধারণ অভিনয় দেখার সুযোগ না হলে মিস হয়ে যেত! ধর্মেন্দ্র ও তার পাগলামি যৌবনকালে অভিনেতা ধর্মেন্দ্র, নায়িকা সুরাইয়ার অনেক বড় ভক্ত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে সুরাইয়ার মুক্তি পাওয়া সিনেমা দিল্লাগি দেখার জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতেন ধর্মেন্দ্র। তার পাগলামির মাত্রাটা সহজেই অনুমান করা যায় যখন তিনি চল্লিশবারেরও অধিক একই সিনেমা দেখার জন্য দীর্ঘ পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়েছেন প্রিয় নায়িকাকে দেখার জন্য! মুহাম্মদ আলী ও মুহাম্মদ রফির সাক্ষাৎ মুষ্টিযুদ্ধের রাজা খ্যাত মোহাম্মদ আলীকে চিনে না এমন মানুষ পাওয়া ভার। সুরের পাখি মোহাম্মদ রফিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তার শিকাগো ভ্রমণের সময় তিনি অনুষ্ঠান সংগঠকদের অনুরোধ করেন যাতে তিনি আলীর সাক্ষাৎ পান। পরবর্তী সময়ে মুহাম্মদ আলী ও মুহাম্মদ রফি হোটেল রুমে অনেক আড্ডা দেন। তারা সঙ্গীত ও মুষ্টিযুদ্ধ নিয়ে নানাবিধ আলোচনা করেন। পরে একসঙ্গে তারা ছবিও তোলেন। সুনীল দত্ত ও নার্গিসের প্রেম বিখ্যাত অভিনেতা সুনীল দত্ত রেডিও সিলনের রেডিও জকি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার প্রিয় নায়িকা নার্গিসকে তিনি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় তিনি কোনো শব্দই উচারণ করতে পারেননি। যার জন্য সেটি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৫৭ সালে মাদার ইন্ডিয়া সিনেমার সময় নার্গিসের সঙ্গে শুটিং করতে গিয়ে প্রেমে পড়েন ও ১৯৫৮ সালে তারা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজকের প্রজন্মের কাছে ‘মুন্নাভাই’ খ্যাত সঞ্জয় দত্ত তাদেরই সন্তান। দেবিকা রানী বলিউড ইতিহাসে সর্বপ্রথম যিনি অভিনয়ের ওপর শিক্ষা লাভ করেন তিনি হলেন ভারতীয় সিনেমার ফার্স্ট লেডি খ্যাত দেবিকা রানী। তিনি জার্মানির বার্লিনের ইউএফএ স্টুডিও থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। ত্রিশ ও চল্লিশের দশক কাঁপানো এ গুণী শিল্পী পরবর্তী সময়ে পদ্মশ্রী ও দাদাসাহেব ফালকে পদকপ্রাপ্ত হন। জীবন নাইয়া, জন্মভ‚মি, ইজাজত প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা। রকস্টার ও রণবীর ইমতিয়াজ আলী নির্মিত রকস্টার সিনেমাটি অনেকেই দেখেছেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়টি হলো এ মুভিটি নির্মিত হয়েছে উল্টো দিক থেকে। ক্লাইমেক্স মুহ‚র্ত থেকে শুটিং শুরু হওয়া এ মুভিটির এ উল্টোপথে শুরুর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, পরিচালক চাননি রণবীর কাপুরের চুলের স্টাইল নষ্ট হোক! কারিনা ও ১৩০ খানা কাপড় হিরোইন সিনেমায় কারিনা কাপুর বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা সব ডিজাইনারদের ডিজাইনকৃত পোশাক গায়ে দেন। সব মিলিয়ে মোট ১৩০ খানা কাপড় আলমারি বন্দি করেন এ অভিনেত্রী। এ সিনেমায় কারিনার কস্টিউমে মোট খরচ হয়েছে দেড় কোটি রুপি; যা একটি রেকর্ড বটে! দুই বিরতির সিনেমা সাধারণত কোনো সিনেমায় আমরা একটি বিরতি দেখি। কিন্তু ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজ কাপুর অভিনীত মেরা নাম জোকার সিনেমাটিতে ২টি বিরতি দেখা যায়! যা বলিউডের ইতিহাসে প্রথম। ম্যারাথন সিনেমা একটি সিনেমার দৈর্ঘ্য কতক্ষণ হতে পারে? স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে যে দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে। কিন্তু আপনার আমার অনুমানকে মিথ্যা করে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সিনেমা হলো বলিউডের লক কারগিল। যার সময়কাল ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। আপনি যদি যুদ্ধভিত্তিক সিনেমা দেখার জন্য প্রস্তুত থাকেন তাহলে এটি নিশ্চিন্তে দেখতে পারেন। এ সিনেমায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কারগিল যুদ্ধের কাহিনী ফুটে উঠেছে। বিদেশি অভিনেতাদের ছড়াছড়ি যে ভারতীয় সিনেমায় খেলাধুলা বিষয়ক সিনেমা দেখেছেন কিন্তু লাগান সিনেমাটি দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন! ‘মি. পারফেকশনিস্ট’ খ্যাত আমির খানের এ সিনেমায় বলিউড ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশি অভিনেতার সমাগম হয়েছিল। এ সিনেমায় ক্যাপ্টেন রাসেল চরিত্রে অভিনয় করেন পল বø্যাকথ্রোন। আমির খানকে সাহায্যকারী ব্রিটিশ কন্যা চরিত্রে অভিনয় করেন র্যাচেল শ্যালি। এ সিনেমাটি অস্কারের জন্য বিদেশি ভাষায় চলচ্চিত্র বিভাগের শর্টলিস্টে মনোনীত হয়েছিল। এক পুরস্কার দুই শিল্পী ভারতীয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ইতিহাসে মাত্র একবারই এমন হয়েছে যে, একই সঙ্গে দুজন সেরা গায়িকার পুরস্কার ভাগাভাগি করেছেন! ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া সঞ্জয় দত্ত ও মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত খলনায়ক সিনেমায় জনপ্রিয় ‘চোলি কি পিছে’ গানটিতে ইলা অরুণ ও আলকা ইয়াগনিক কণ্ঠ দেন। তাদের এ গানটি তৎকালীন সময়ে খুব সাড়া ফেলেছিল। যার ফলে তারা সেরা গায়িকার পুরস্কারে ভ‚ষিত হন। এ গানটির আরেকটি মজার বিষয় হলো, এ গানটি ৪২টি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল। ধর্মেন্দ্র ও ঘুষ প্রিয় মানুষটিকে জড়িয়ে ধরতে কারই না ইচ্ছা করে। কিন্তু সে যদি হয় শুটিংয়ের কল্যাণে তাহলে তো তাকে সোনায় সোহাগা বলতেই হয়! শোলে সিনেমার সময় লাইট বয়কে ভুল করার জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র যাতে করে তিনি হেমা মালিনীকে বারবার জড়িয়ে ধরতে পারেন। রজনীকান্তের সৎ মা শ্রীদেবী শ্রীদেবী ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথিতযশা শিল্পীদের একজন। তিনি ১৯৭৩ সালে তামিল ভাষার মনদ্রমদিচু সিনেমায় মাত্র তেরো বছর বয়সে রজনীকান্তের সৎ মায়ের ভ‚মিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে অভিনয়ের হাতেখড়ি হওয়া এ শিল্পী প্রথমবারের মতো নারী হিসেবে অভিনয় করেন এ সিনেমায়। এর আগে তিনি ধারাবাহিকভাবে শিশুশিল্পী হিসেবে তামিল, মালায়ালাম, তেলেগু, কন্নড় ভাষার সিনেমাতে অভিনয় করেন। ধূমপান বন্ধে ঋত্বিক অভিনেতা ঋত্বিক রোশন কীভাবে ধূমপান বন্ধ করা যায় বিষয়ক ৫০টি বই অনলাইনে অর্ডার দেন। যা তিনি তার ধূমপায়ী বন্ধুদের বিতরণ করেন। এবার তাহলে আপনারও পালা শুরু হোক!