×

পুরনো খবর

কামরাঙ্গীরচরে অবৈধ সব কাজের সহযোগী পুলিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০১৮, ০৫:৩৩ পিএম

কামরাঙ্গীরচরে অবৈধ সব কাজের সহযোগী পুলিশ
    ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অন্যতম বৃহত্তম থানা কামরাঙ্গীরচর। এ থানা এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। লোক যেমন বেশি, অপরাধের হারও তেমন বেশি। রাজধানীতে ছড়িয়ে দেয়া অবৈধ ও নকল মালামালের অধিকাংশের কারখানা এই কামরাঙ্গীরচরে। রয়েছে অবৈধ প্রায় ৭ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। অবৈধ গ্যাস সংযোগ মাকড়সার জালের মতো বিস্তার করে আছে। রয়েছে মাদকের একাধিক স্পটও। আর এসব কিছুর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে থানা পুলিশ। সাপ্তাহিক ও মাসিক বিভিন্ন হারে চাঁদা নিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে সব ধরনের অপরাধ কার্যক্রম। অন্যদিকে জনবল সঙ্কটের কারণে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে থানাটি। সরেজমিন পাওয়া তথ্যানুসারে, কামরাঙ্গীরচরে প্রায় ৭ হাজার ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা চলে। এক কথায় এই এলাকায় চলাচলের একমাত্র বাহক এই অবৈধ যানটি। এগুলো রাখা হয় ২ শতাধিক গ্যারেজে। আর এই গ্যারেজগুলো থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা নিয়ে অবৈধ গাড়িকে বৈধতা দেয় পুলিশ। যে গ্যারেজে যত বেশি অটোরিকশা সেই গ্যারেজকে গুনতে হয় তত বেশি টাকা। কামরাঙ্গীরচর থানার কনস্টেবল রেজাউল এই টাকাগুলো তোলেন। তাকে সব গ্যারেজ মালিক থানার ক্যাশিয়ার হিসেবে চেনে। প্রতি সপ্তাহে উঠানো এই টাকা রেজাউলের হাত ঘুরে চলে যায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে। এই থানা এলাকায় রয়েছে ২৫০ ভাঙারি দোকান। পুলিশ তাদের ভয় দেখিয়ে প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাঙারি দোকানি বলেন, প্রতি মাসে ২০০ টাকা চাঁদা দিলে পুলিশ আমাদের কিছু বলে না। কিন্তু না দিলেই বাধে বিপত্তি। অনেক সময় ফেলে দেয়া সরকারি জিনিস আমরা কিনি। তখন সেগুলো বের করে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ২৫০ ভাঙারি দোকান থেকে চাঁদা উঠায় পুলিশের সোর্স কালাম। আবার মাঝে মধ্যে সব ধরনের দোকান থেকেই চাঁদা উঠায় এএসআই জিয়া। সোর্স কালামের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, অনেক আগে এই কাজ করতাম। বিনিময়ে পুলিশ আমাকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দিত। বছরখানেক হয়েছে বাদ দিয়ে দিছি। এক প্রশ্নের উত্তরে কালাম বলেন, এই থানায় টাকা খায় না কে? যার যে দায়িত্ব সে ওই সেক্টর থেকেই টাকা কামায়। এলাকাবাসী জানায়, এই এলাকায় কিছু কারখানা আছে। যেখানে অবৈধ গ্যাসের লাইনের বিনিময়ে পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা খায়। পরে খোঁজ মেলে মিটসেফে রং প্লেটিং করার একটি চেম্বারের। ওই চেম্বারের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিটসেফে আমরা বিভিন্ন রংয়ের যে প্লেটিং করি সেটা সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে হয় না। আবার গ্যাসের বৈধ লাইনও আমরা পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষ ও থানা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে অবৈধ লাইন নিয়েছি। প্রতি মাসে পুলিশকে কত টাকা দেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ৫০ দোকানি আছি, যারা এ ধরনের প্লেটিং করি। এ জন্য ৫০ দোকান থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে পুলিশকে দিতে হয়। এ থানা এলাকায় রয়েছে ৭টি অবৈধ পলিথিন কারখানাও। যেখান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় পুলিশ। গত ৩১ মে রাত ১০টার দিকে দেখা যায়, থানার সামনে সেই চাঁদাবাজ এএসআই জিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন দুজন লোক। একটু পর এএসআই জিয়া থানার ভেতরে গেলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন নামে এক গ্যারেজ মালিক বলেন, কোম্পানিঘাটে আমার গ্যারেজ। ৭টি অটোরিকশা আছে। ২-৩ দিন আগে নতুন এক চালককে একটি অটোরিকশা ভাড়া দিয়েছিলাম। আজ (৩১ মে) দুপুরে বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ওই চালককে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। তখন ওই চালকের কাছে অটোরিকশা ছিল না। পরে পুলিশ শুধু শুধুই গ্যারেজে গিয়ে অটোরিকশা নিয়ে আসে। এখন এএসআই জিয়া ২৫ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছেন। এত টাকা দিয়ে অটোরিকশা ছাড়ানোর চেয়ে আর কিছু টাকা দিয়ে নতুন আরেকটি কেনা যাবে। যদি টাকার পরিমাণ কমায় তাহলে পরে আসব। এ বিষয়ে জানতে এএসআই জিয়ার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেন। কিন্তু অভিযোগ শোনার পর কিছু না বলেই লাইন কেটে দেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, কামরাঙ্গীরচর থানায় বিষয়ভিত্তিক ঘুষ নেয় আলাদা আলাদা পুলিশ সদস্য। রাজনৈতিক বিষয় ফলো করে এসআই মামুন। এসব মামলার বিষয়ে তদবির করতে হলে দ্বারস্থ হতে হয় মামুনের কাছে। এ ছাড়া এসআই মাহফুজ ও রনজু মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কামরারঙ্গীর থানার ওসি শাহিন ফকির বলেন, কোনো ধরনের অনিয়ম আমি সহ্য করি না। যদি সত্যি কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে অবশ্যই নিউজ করেন। আমরা নামগুলো দেখে ব্যবস্থা নেব। থানার কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর কোম্পানি ঘাট, লোহার ব্রিজ, মাহতাবগঞ্জ, গাজীরহাট, ঠুডা, খোলাপাড়া, মাদবর বাজার এলাকা নিয়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ১৭ জন এসআই, ২২ জন এএসআই, ৪৩ জন কনস্টেবল রয়েছে। এই স্বল্প জনবল দিয়ে ১৫ লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব বলে জানান তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App