×

পুরনো খবর

শেরেবাংলা নগরে মামলার তদন্তে ধীরগতি

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ০১ জুন ২০১৮, ০৪:৩৫ পিএম

শেরেবাংলা নগরে মামলার তদন্তে ধীরগতি
ভিভিআইপি থেকে শুরু করে একদম নিম্ন শ্রেণি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় বাস করেন সব ধরনের লোক। ফলে এ এলাকায় কম-বেশি সব রকম অপরাধই সংঘটিত হয়। আর এসব ঘটনায় থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বেশিরভাগ মামলারই জট খোলে না। ফলে তৈরি হয় না ফাইনাল রিপোর্ট, দেয়া হয় না চার্জশিট। থানার সেরেস্তা সূত্র জানায়, চলতি বছরে ৫ মাসে থানাটিতে ১৪০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৮টি, মার্চে ২৭টি, এপ্রিলে ৩২টি এবং মে মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ২৫টি মামলা দায়ের করা হয়। এগুলোর মধ্যে কতটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট করে তা বলতে পারেননি সেরেস্তা রুমের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন জানান, তদন্তে ধীরগতির কারণে বেশিরভাগ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়নি। এ দিকে থানাটি নিজেও নানা সমস্যায় জর্জরিত। গত ৩১ মে সরেজমিন দেখা যায়, টিনশেডের কয়েকটি রুমে জোড়াতালি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে থানার কার্যক্রম। অভ্যর্থনার তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেই। ডিউটি অফিসারের রুমে মাত্র একটি চেয়ার থাকায় অন্য অভ্যাগতদের দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। একটি জরাজীর্ণ কক্ষের বারান্দা গ্রিল দিয়ে আটকিয়ে হাজতখানা করা হয়েছে। ফলে রাস্তা থেকেও দেখা যায় হাজতখানায় বন্দি আছে কারা। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। জায়গার অভাবে থানার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বারান্দায় ঠাঁই পেয়েছে। নেই পার্কিংয়েরও জায়গা। আবাসিক সমস্যাও প্রকট। ঈদের পরে থানাটি নতুন ভবনে স্থানান্তরের কথা রয়েছে। তখন আর এই সমস্যা থাকবে না বলে জানান থানার কর্মকর্তারা। অন্যদিকে থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুপস্থিত থাকায় জনবল-গাড়ির সংখ্যাসহ অন্যান্য তথ্য জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ডিউটি অফিসার এসআই শরীফ। তিনি এ প্রতিবেদককে নানা রকম অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্ন করতে থাকেন এবং সবাইকে বলতে থাকেন থানা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে। এগুলো পত্রিকায় আসা শুরু হয়েছে। কেউ কোনো তথ্য দেবেন না। Ñ এসব বিষয়ে আপনাদের ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বললে তিনি ডিউটি অফিসারের সহযোগিতা নিতে বলেছেন। তাই আপনার কাছে এসেছি। এটা জানানোর পর এসআই শরীফ বলেন, আমি কিছু জানি না। থানা সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ কাফরুল, তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর, খামারবাড়ি, শুক্রাবাদ, মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদগেট, আসাদ এভিনিউ, মিরপুর রোড, লালমাটিয়া, কলাবাগানের একাংশ, জাফরাবাদ, এয়ারপোর্ট রোডের একাংশ, রাজাবাজার, ডক্টরস কোয়ার্টার, মোহাম্মদপুর, জেনেভা ক্যাম্প, খিজির বাজার, রিং রোড, শেওড়াপাড়ার একাংশ, বশিরউদ্দিন রোড, মহাখালী ডিওএইচএস ও পাইকপাড়ার একাংশ নিয়ে শেরেবাংলা নগর থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৩ জন এসআই, ৩৮ জন এএসআই ও ৮৩ জন কনস্টেবল রয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১১টি, ফেব্রæয়ারিতে ১৪টি, মার্চে ১১টি, এপ্রিলে ১৪টি ও মে’তে ১২টি মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা হয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশ অধিকাংশ মাদক স্পট থেকে মাসোয়ারা নেয়ায় মামলাগুলোর বেশিরভাগই তদন্তাধীন থাকে। শেরেবাংলা নগর থানার ওসি গণেশ গোপাল বিশ্বাস অবশ্য মাসোয়ারা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমার থানায় কোনো ধরনের সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত জনবল ও গাড়ি থাকায় জনসাধারণদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছি। মামলার তদন্তেও সমস্যা হচ্ছে না। থানাটিতে সাময়িক কিছু সমস্যা থাকলেও ঈদের পরে আমরা নতুন ৮ তলা ভবন পাচ্ছি। এরপর এ সমস্যাগুলোও থাকবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, সব থানার চেয়ে আমার থানা এলাকায় রাস্তার সংখ্যা বেশি। ফলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশকেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ট্রাফিক বিভাগ যদি বিষয়টিতে আরো গুরুত্ব দেয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App