×

পুরনো খবর

শিল্পাঞ্চলে ঢুকলেই ধান্দা করে পুলিশ

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৮, ০৪:১৬ পিএম

শিল্পাঞ্চলে ঢুকলেই ধান্দা করে পুলিশ
কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে আইনি পদক্ষেপ নিতে থানার দারস্থ হন। অন্যদিকে কেউ অপরাধে জড়ালে অথবা কারো চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হলে তাকে আটক করে পুলিশ। আর এসবের মাঝখানেই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কিছু অসৎ সদস্য হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। কাউকে আটক করে থানায় আনা হলেই তাকে ছাড়াতে থানার বাইরে অথবা ভেতরেই চলে রফাদফা। এ ছাড়াও হাজতখানায় দেখা করা ও খাবার পাঠাতে টাকা নেয়া, জিডিতে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে এই থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ২৯ মে সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে থানার সামনে ভিড় করে আছেন ৬ জন মহিলা ও ২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ থানার ভেতরে যাচ্ছেন আবার কিছুক্ষণ পরই থানার গেটের বাইরে এসে বসছেন। এভাবেই বেজে যায় দুপুর সাড়ে ১২টা। তখনো তারা থানার সামনেই ছিলেন। ঘটনা কী? জানতে চাইলে তাদের মধ্য থেকে কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তি বলেন, আর বইলেন না ভাই। টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করছে। এক পর্যায়ে মারামারি হয়। এরপর পুলিশ আমার ভাইকে ধরে আনছে। থানায় আনার পরে দেখছি আরেক সমস্যা। এই থানার ভেতরে ঢুকলে পুলিশ পেয়ে বসে। কারণে অকারণে ধান্দা করে। সকালে পান্তা ভাত আর তরকারি পাঠাইতে ১০০ টাকা দিছি। এখন বিষয়টি মীমাংসা করতেও টাকা চাচ্ছে। টাকা জোগাড় করে লোক পাঠাইছি। একটু পরেই ছেড়ে দেবে। কোন পুলিশ সদস্য টাকা নিয়েছে? জানতে চাইলে বলেন, হাজতখানায় টাকা নিয়েছে কনস্টেবল সুশান্ত। আর যে স্যার আটক করেছেন তার নাম জানি না। দেখলে চিনি। কত টাকা নিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এসব শুনে আর কী করবেন। থানায় এলে টাকা দিতে হয় সেটা কে না জানে। এরপর থানা থেকে আটক আসামি বের হয়ে এলে এ বিষয়ে আর কথা বলেননি তিনি। আগের দিন ২৮ মে দুপুরে থানার সামনে এসে দাঁড়ান ৩ ব্যক্তি। একজনের মোবাইল ফোন বেজে উঠলে তিনি রিসিভ করে বলেন, স্যার আপনার থানার গেটের সামনে আছি। পরে নীল টি-শার্ট ও জিন্স পড়া এক পুলিশ সদস্য থানা থেকে বের হয়ে এসে তাদের ভেতরের একটি কক্ষে নিয়ে যান। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ওই ব্যক্তিরা থানা থেকে বের হয়ে আসেন। কেন থানায় এসেছেন? জানতে চাইলে একজন বলেন, আমরা ঈগলু কোম্পানিতে চাকরি করি। আমাদের কোম্পানির এক চালককে স্ত্রী মারধরের অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। ছেলেটির মা কান্নাকাটি করায় আমরা বিষয়টি দেখতে এসেছি। কিছু টাকা দিলেই ছাড়িয়ে নিতে পারব আশা করি। ওইদিনই থানার ভেতরে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করছিলেন রহিমা নামে এক নারী। বাইরে এলে কথা হয় তার সঙ্গে। নিজেকে শিল্পাঞ্চল থানা শ্রমিকলীগের নেত্রী পরিচয় দিয়ে রহিমা বলেন, থানায় কোনো সমস্যা আছে নাকি? এই থানার সবার সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক। তুমি কোনো কাজ করতে গেলে টাকা লাগবে। কিন্তু আমি সেগুলো ফ্রিতে করিয়ে দিতে পারব। কথায় কথায় তিনি বলেন, এই থানায় গেট দিয়ে ঢুকলে সব পুলিশ টাকা খাবে। সাক্ষাৎ, জিডি বা মামলা সব কিছুতেই টাকা নেয় পুলিশ। একই দিন থানায় জিডি করতে আসা ৩ ব্যক্তি জানান, জিডি করে টাকা দিতে হয়, এ আর নতুন কি। আমরা খুশি মনেই দুই তিনশত টাকা দিয়ে আসি। ওই দুই দিন থানায় অবস্থান করে দেখা যায়, শিল্পাঞ্চল থানার গেটে দায়িত্ব পালন করেন ২ জন করে পুলিশ সদস্য। তারা অভ্যাগত পেলে আগে কারণ শোনেন। এরপর সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের কাছে পৌঁছে দেন। অনেক সময় সুযোগ বুঝে তারা নিজেরাও হাতিয়ে নেন টাকা। এসব বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. আবদুল রশিদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সব থানাতেই কিছু সমস্যা থাকে, আমাদেরও আছে। থানার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। ফাঁড়িতে কোনো মতে থানার কার্যক্রম চলছে। থানায় টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার থানায় এ ধরনের কোনো কাজ হয় না। পরে কয়েকটি ঘটনা বললে জানান, যদি কেউ এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App