×

পুরনো খবর

আ.লীগে ব্যাপক কোন্দল বিএনপিতে স্থবিরতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৮, ০৪:৩২ পিএম

আ.লীগে ব্যাপক কোন্দল বিএনপিতে স্থবিরতা
নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-২ নির্বাচনী আসন। আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠ গরম করতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন পেতে অনেক নেতাই কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে রয়েছে ব্যাপক দ্ব›দ্ব ও কোন্দল। আর বিএনপিতে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল ২০১৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর নাটোরের মানুষ আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর অভিযোগ, শফিকুল ইসলাম শিমুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার নাম ভাঙতে শুরু করে নাটোর জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গজিয়ে ওঠে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী যার মধ্যে সাব্বির বাহিনী, মিলন বাহিনী, বাপ্পী বাহিনী (কান্দিভিটা), বাপ্পী বাহিনী (কানাইখালী) উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন নামে-বেনামে শহর ও শহরতলীতে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক কার্যালয়। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলতে থাকায় জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তাদের ছত্রছায়ায় চলে অস্ত্র ও মাদকের জমজমাট ব্যবসা। সাব্বির বাহিনীর সাব্বির ও তার দুই সহযোগী অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও পরে ওইসব ত্যাগী নেতাকর্মীকে দূরে ঠেলে দিয়ে চলতে থাকে বিভিন্ন কার্যক্রম। ক্রমে ক্রমে ওইসব ত্যাগী নেতাকর্মীর সঙ্গে দূরত্বের সৃষ্টি হয় বর্তমান সংসদ সদস্যের। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, সব ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিরোধ এবং এই বিরোধ থেকে সৃষ্টি হয় পক্ষ-বিপক্ষ। একদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সিনিয়র সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সহসভাপতি উমা চৌধুরী জলি, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অপরদিকে শফিকুল ইসলাম শিমুল হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকে নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আলী বাবলু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অপূর্ব চক্রবর্তী, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দীলিপ দাস, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল হাসান জেমস ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম। যদিও অতিসম্প্রতি এই পক্ষ-বিপক্ষের বিরোধ মেটাতে জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব রয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এসব দ্ব›দ্ব দূর করে একটি প্ল্যাটফর্মে আসতে না পারলে এ আসনটি আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হবে বলে দলের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করেন। অবশ্য এ ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সঠিক নয়। তার সময়ে সন্ত্রাস দূর হয়ে নাটোর শান্তির শহরে পরিণত হয়েছে। তিনি কোনো সন্ত্রাসীকে মদদ দেননি বরং তাদের দমন করেছেন। সামনে নির্বাচন আসছে তাই দলকে বিভক্ত করে ফায়দা লুটতে দলের মধ্যে থেকে একশ্রেণির নেতা তার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রাপ্তির পর এসব কোন্দল বা দ্বিধাবিভক্তি থাকবে না। যদি আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে তিনি জয়লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এ আসনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহাদ আলী সরকার, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, নাটোর পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও প্রয়াত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে উমা চৌধুরী জলি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হানিফ আলী শেখের ছোট ভাই দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তার সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মালেক শেখ। এ আসনে বিএনপি বেশ সংগঠিত হলেও জেলা বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মাঠে না থাকায় দলটি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকায় তিনি নাটোরে আসতে পারেন না। ফলে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোও কোনো রকমে পালন করা হয়। কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় কোনো কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশি বাধায় তা দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়েই সীমাবদ্ধ থাকে। যে কোনো কর্মসূচি দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার মধ্য দিয়েই শেষ করতে হয়। ফলে বিএনপির কর্মকান্ডে অনেকটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। জেলায় বিএনপির তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে না থাকা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বর্তমান সরকারের দমন-পীড়নমূলক আচরণের কারণে সারা দেশের ন্যায় নাটোরেও বিএনপি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। পুলিশ কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। অপরদিকে তিনি নাটোরে এলে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এমনকি প্রাণনাশের আশঙ্কাও রয়েছে তার। সে কারণে তিনি নাটোরে আসেন না বললেই চলে। তবে তিনি নিশ্চিত যে বিএনপির ব্যাপক গণসমর্থন রয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে ৪টি আসনেই বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এ আসনে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নামই শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, তিনি নাটোর-২ এবং নাটোর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। কারণ বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর এলাকায় বিএনপির তেমন কোনো নেতৃত্ব না থাকায় ওই এলাকার জনগণ তাকে ওই আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করছেন। যদি কোনো কারণে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে ব্যর্থ হন তাহলে নাটোর সদর আসনে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নাটোর-২ আসনে জাপার কেন্দ্রীয় নেতা ও নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মজিবর রহমান সেন্টুর নাম শোনা যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App