×

পুরনো খবর

তেজগাঁওয়ে রমরমা আটক বাণিজ্য

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ৩০ মে ২০১৮, ০১:১৫ পিএম

তেজগাঁওয়ে রমরমা আটক বাণিজ্য
অপরাধ করলে আসামিকে আটক করবে পুলিশ, চালান দেবে কোর্টে এটাই স্বাভাবিক। তেজগাঁও থানাতেও আটক করা হয় আসামি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আটকের পর টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। জানা গেছে, তেজগাঁও থানা এলাকার বস্তিগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্য। মাদক ব্যবসা, ছিনতাই থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধই সংগঠিত হয় এখানে। এই সুযোগে বস্তির অপরাধীদের নিয়মিত ধরা এবং টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তেজগাঁও থানা পুলিশের। আসামির স্বজনরাও জানেন, টাকা ছাড়া পুলিশ ছাড়বে না। তাই কোনো আসামি আটক হলেই তার স্বজনরা টাকা নিয়ে হাজির হন থানায়। গত ২৮ মে সরজমিনে দেখা যায়, থানার গেটের ভেতরে একটি ভবনের নিচে বসে আছেন ২ মহিলা, ১ যুবক ও ১ শিশু। তাদের চোখে বিষণœতার ছাপ। ওই যুবকটি কাকে যেন একের পর এক ফোন করে যাচ্ছেন। কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ না করায় গালমন্দ করছেন। পরে ওই যুবকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, গত রাতে (২৭ মে রাতে) আমার ছোট ভাই আল আমিনকে বসুন্ধরা মার্কেট এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। সকালে এক এসআই ফোন করে আমাদের থানায় আসতে বলেন। আমরাও থানায় আসি, তারপর কম হলেও ৩০০ বার তার মোবাইল ফোনে কল করেছি। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করছেন না। এরপর দুপুর ১২টার দিকে কল রিসিভ করেন ওই পুলিশ সদস্য। একটি কালো টি-শার্ট ও নীল ট্রাউজার পড়ে থানার চতুর্থতলা থেকে নেমে আসেন তিনি। ওই ২ মহিলা ও যুবকের সঙ্গে দেখা করে আবার চলে যান। পরে ওই ২ মহিলার মধ্যে আল আমিনের খালা কোহিনূর বেগম এই প্রতিবেদককে বলেন, দারোগা (এসআই) ১০ হাজার টাকা চাচ্ছে। কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়? আমরাও জানি টাকা লাগবে। কারণ আগেও কয়েকবার আমাদের স্বজনরা ধরা পড়েছে। টাকা দিলেই এই থানার পুলিশ আসামি ছেড়ে দেয়। তার এই কথার প্রমাণও মিলতেও দেরি হলো না। কিছুক্ষণ পর আবার ওই এসআই ফোন করে তাদের দেখা করতে বলেন। পরে ৩ হাজার টাকা নিয়ে আল আমিনকে হাজতখানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপরই তারা থানা ত্যাগ করেন। তবে বার বার জিজ্ঞেস করা সত্তে¡ও তারা ওই এসআইয়ের নাম বলেননি। থানার কর্মকর্তারাও আল আমিনের আটকের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। সন্ধ্যার পরে থানার গেটে ৫-৭ জন মহিলাকে বসে থাকতে দেখা যায়। কারওয়ানবাজার রেলওয়ে বস্তির বাসিন্দা ওই নারীদের স্বামী অথবা সন্তানকে আটক করে আনা হয়েছে। তাদের কথোপকথনের মধ্যে এক মহিলা বলতে থাকেন, রশিদ স্যার ভালো মানুষ। কিছু টাকা খাইলেও ছেড়ে দিবে। থানার গেটে অপেক্ষমাণ সুমি নামে এক মহিলা জানান, তাদের বস্তি থেকে প্রায়ই অনেককে আটক করে আনা হয়। বেশিরভাগ সময় টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যায় তারা। অভিযোগ গুরুতর হলেও সমস্যা নেই, বেশি করে টাকা দিলেই মামলার এজাহারে তা হালকা করে দেয়া হয়। ফলে কোর্ট থেকে সহজেই ছাড়িয়ে আনা যায় তাদের। তবে, ওইদিন কাকে কী কারণে আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সুমি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এই থানার সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাসমান অপরাধীরা। কারওয়ানবাজার রেলওয়ে বস্তির বাসিন্দারা মূলত সব ধরনের অপকর্মে জড়িত। এ ছাড়া রাত গভীর হলেই ফার্মগেট পার্কও অপরাধের স্বর্গ হয়ে ওঠে। এদিকে, পুলিশের বিরুদ্ধে এই দুই জায়গা থেকেই মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া আটক বাণিজ্যের কারণে অপরাধীরা আবার একই অপরাধে যুুক্ত হওয়ায় এই থানার অপরাধ কমছে না। এর বাইরে জিডিতে টাকা নেয়া, হাজতখানায় বন্দিদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সাক্ষাৎসহ আরো নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে এই থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, সব পুলিশ সদস্য সমান না। কেউ কেউ অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। তবে, আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আটক বাণিজ্য ও মামলায় অভিযোগ কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে, এ বিষয়ে আমরা কখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভাসমান অপরাধীরা এই থানার সবচেয়ে বড় সমস্যা। বস্তিবাসিরা পুনর্বাসনের আওতায় আসলে এই সমস্যা আর থাকবে না। থানা সূত্র জানায়, তেজগাঁও, মনিপুরীপাড়া, শাহিনবাগ, এলেনবাড়ি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দক্ষিণ নাখালপাড়া, কাজীপাড়া, কারওয়ানবাজার, তেজকুনিপাড়া, আরজতপাড়া, তেজতুরি বাজার, ফার্মগেট ও খামারবাড়ি এলাকা নিয়ে তেজগাঁও থানা গঠিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App