×

পুরনো খবর

আ.লীগে দুই পরিবারের লড়াই বিএনপিতেও দ্বিধাবিভক্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০১৮, ০১:৫২ পিএম

আ.লীগে দুই পরিবারের লড়াই বিএনপিতেও দ্বিধাবিভক্তি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনেও সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব ক’টি রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগে অনেকদিন ধরেই চলছে কায়সার ও বাবু পরিবারের লড়াই। এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। বিএনপির মধ্যেও রয়েছে তীব্র কোন্দল। এদিকে ইসলামী দলগুলোও কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে জানান দিতে চাচ্ছে মাঠ পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান। নির্বাচনকে সামনে রেখে রমজান উপলক্ষে ইফতারসামগ্রী বিতরণ, ইফতার পার্টির আয়োজনসহ বিভিন্ন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকেই ঝুলিয়েছেন ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। আবার কেউ কেউ মসজিদ-মন্দিরে দান-খয়রাত করা ছাড়াও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দিয়েছেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ততই বাড়ছে মাঠ দখলের কৌশল ও পরিকল্পনা। আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এবং কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত উপজেলা নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারায় এগিয়ে থাকলেও কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তবে গত ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন মন্ত্রী জাবেদ। এ ছাড়া কর্ণফুলীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, কর্ণফুলীকে উপজেলা ঘোষণার পেছনেও প্রতিমন্ত্রীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বর্তমানে দুটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ ভালো অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দুগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম। অপরাংশের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এডভোকেট কবির চৌধুরী। দুই গ্রুপেরই উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন করা হলে বিএনপির বিজয় অনিশ্চিত। আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে বর্তমান ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রতি শুক্রবার নির্বাচনী এলাকার কোনো না কোনো মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে জনগণের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ও মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওয়াসিকা আয়েশা খান। এ লক্ষ্যে তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। ওয়াসিকা আয়েশা খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ব্যুরো অফ ওমেন পার্লামেন্টারিয়ানসের সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছেন। আনোয়ারায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আতাউর রহমান খান কায়সার পরিবারের সঙ্গে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পরিবারের প্রতিযোগিতা-রেষারেষি যেন পারিবারিক এতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবু পরিবারের উত্তরাধিকার সাইফুজামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে কায়সার পরিবারের উত্তরাধিকার ওয়াশিকা আয়েশা খানমের প্রতিযোগিতা-রেষারেষি চলছে পারিবারিক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে। এ আসনে আগামী নির্বাচনে উভয়েই মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এলাকায় জনসংযোগ ও দলের শীর্ষ পর্যায়ে নজর কাড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুজনই আশাবাদী। বর্তমান সাংসদ ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বিষয়টি তুলে ধরে বললেন, এলাকাবাসী আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে আবারো বিপুল ভোটে জয়ী করবে বলে আমার বিশ্বাস। দলে কোনো বিভক্তি নেই, যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক তাকে জয়যুক্ত করতে সবাই মাঠে থাকবে। আমার বাবার নেতৃত্বে আমরা এলাকার মানুষের দুঃখে-কষ্টে তাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। এলাকায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী তার ওপর আস্থা রাখলে দলকে তিনি বিজয় উপহার দিতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন। বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খানমও মনোনয়নের ব্যাপারে তার বাবা আতাউর রহমান খান কায়সারের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, মনোনয়ন চাওয়া রাজনৈতিক কর্মীদের অধিকার। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আমি আমার প্রয়াত বাবা আতাউর রহমান খান কায়সার আনোয়ারা-কর্ণফুলীবাসীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তবায়বন করতে কাজ করব। নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রদূত আমার অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশা করি। তবে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। আমি এলাকার জনগণের সঙ্গে আছি সবসময়। অপরদিকে দ্বিধাবিভক্ত আনোয়ারা-কর্ণফুলী বিএনপিতে চলছে হিসাবের লড়াই। সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজাম নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় নেতাদের কোনো খোঁজখবর রাখেননি বলে অভিযোগ দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া জনপ্রিয় বিএনপি নেতা জামাল উদ্দীন অপহরণ ইস্যুতে নাজুক অবস্থায় আছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে জয়ী হওয়া কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন অনেকে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এডভোকেট কবীর চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি কাস্টম জালাল উদ্দীন আহমদ গ্রুপের সমর্থন নিয়ে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন তরুণ বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, বিএনপি বড় দল। আনোয়ারা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কাকে মনোনয়ন দিলে জয় উপহার দিতে পারবেন, সেটা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভালোই জানেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেবেন সবাই। এ আসনে বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, ম্যাডাম দলের ত্যাগী ও তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে দলকে সংগঠিত করছেন সারা দেশে। তাই আমি আশা করি আমি মনোনয়ন পেলে বিএনপির হারানো আসন ম্যাডামকে পুনরায় উপহার দিতে পারব। এদিকে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি তপন চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যান আমাকে আনোয়ারা আসনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্র ঘোষিত ১৫০ প্রার্থীর তালিকায় আমার নাম রয়েছে। তাই আমি নিশ্চিত দলের মনোনয়ন পাব বলে। তবে নবগঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোটের শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন এ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। সে হিসেবে জাতীয় পার্টি এ আসনটি ইসলামী ফ্রন্টকে ছেড়ে দিতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App