×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব প্রকট বিএনপির অস্বস্তি জামায়াত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০১৮, ০৩:০২ পিএম

আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব প্রকট বিএনপির অস্বস্তি জামায়াত
জেলার চৌগাছা-ঝিকরগাছা উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে জাতীয় সংসদের যশোর-২ আসন গঠিত। এ আসনে আগের দশটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচবার, জামায়াত তিনবার ও বিএনপি-জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ গ্রুপিং আর বিভক্তিতে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সফলতা তুলে ধরে ত্যাগী ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের জের এখনো টানতে হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। দলের ক্ষত দূর করে সবাইকে এক কাতারে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। তবে দলটির বড় মাথাব্যথা জোটের শরিক জামায়াত। আগের জোটবদ্ধ দুটি নির্বাচনেই আসনটি জামায়াতের ভাগে গেছে। আগামীতেও জামায়াত এ আসনটি চায়। আসনটি বারবার জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। যে কারণে এবার বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ আসনটি আর শরিক দলকে দিতে নারাজ। নির্বাচনী এ এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনগণ ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বললে এ সব তথ্য জানা যায়। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোর মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট মনিরুল ইসলাম, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন, চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমান, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাসির উদ্দীন এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট আহসানুল হক আহসান সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। এদের কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিয়ে এলাকায় নতুন করে পরিচিতি সভা করে নিজেকে তুলে ধরছেন। তারা বিগত সময়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজের কঠোর সমালোচনা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ আসনে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান এডভোকেট মনিরুল ইসলাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রফিকুল ইসলামও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বঞ্চিত হওয়ায় তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সেই থেকে ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয় বিভক্তি। এবারো স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল বিদ্যমান। এ ব্যাপারে বর্তমান সাংসদ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব। তিনি আরো বলেন, আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন কর্মী। ৩২ বছর ধরে রাজনীতির বারান্দায় ঘুরছি। ফুলটাইম রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জনগণের কাতারে আছি। ৯ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা করছি। আমি নিজের মনোনয়ন নিয়ে চিন্তিত নই। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনার জন্য নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন করে যাচ্ছি। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, চৌগাছা ও ঝিকরগাছায় আওয়ামী লীগে চরম অস্থিরতা চলছে। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আর্দশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে আছি। আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের তুলনায় তৃণমূলে আমার যোগাযোগ বেশি ভালো। প্রত্যেক গ্রামে আমার নেতাকর্মী ও সমর্থক আছে। দলের নিপীড়িত নির্যাতিত ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আমি দলীয় কর্মকান্ড করছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। এ দিকে, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটির গত দশটি নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য ঝিকরগাছা উপজেলার বাসিন্দা। এ আসনের চৌগাছা উপজেলার বাসিন্দাদের একাংশের জোরালো দাবি প্রতিবারই চৌগাছার ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমপি হন। নিজ উপজেলার কোনো নেতাকে তারা সংসদ সদস্য হিসেবে পাননি। এবার তারা নিজ উপজেলার নেতা মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমান ওরফে এস এম হাবিবকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পেতে চান। এ ব্যাপারে এস এম হাবিব এ প্রতিবেদককে বলেন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধিকার আন্দোলনের মুক্তির সনদ ৬ দফা, ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এলাকার গণমানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করি এবং গণঅভ্যুত্থানে শামিল হই। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরে অংশ নেই। এরপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ৩৭ বছর ধরে চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করি। বর্তমানে সভাপতি পদে আছি। ১৯৮৬ সাল থেকে অদ্যাবধি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবেও আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে আমার কোনো বেইমানি নেই। আমি তৃণমূলের নেতাকর্মী সমর্থকদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতিতে আছি। আর যেহেতু দলীয় সভানেত্রী বলেছেন, যে নেতা তৃণমূলসহ সাধারণ জনগণের আস্থাভাজন ও জনপ্রিয় তাকেই আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। আমার সঙ্গে দলের তৃণমূলসহ সাধারণ জনগণের আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আমার বিষয়টা অবশ্যই তিনি বিবেচনা করবেন। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকে এ আসনে আবারো নৌকা প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন রফিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ’৯১ ও ’৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। একবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং আরেকবার হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ মনিরুল ইসলামের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিতর্কিত হন। এ দিকে, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ ছিল। এখানে প্রার্থী হন জামায়াত নেতা আবু সাঈদ মো. শাহাদাৎ হুসাইন। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে হেরে যান। এ আসনে বিএনপির বড় মাথাব্যথা দলীয় কোন্দল নয়, জোটের শরিক জামায়াত। আর এ কারণে বিএনপিও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। তবে জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ভোটের জোট। আসনটি বারবার জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ায় ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। যে কারণে এবার বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ আসনটি আর শরিক দলকে দিতে নারাজ। এবার এ আসনে ধানের শীষে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন পাবে। এটাই আমাদের জোরালো দাবি। আর সঙ্গত কারণেই জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খানের নাম জোরেশোরে উঠে আসছে আলোচনায়। তিনি রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের একজন নেতা। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এ আসনে মিজানুর রহমান খান যদি বিএনপির ধানের প্রার্থী হন তাবে তা আওয়ামী লীগ জোটের শক্ত প্রতিপক্ষ হতে পারে। এ ছাড়া, এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নির নাম। এ ছাড়া, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এডভোকেট ইসহাকের নামও আলোচনায় আছে। এ দিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন চৌগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল কাদের ও জেলা ওলামা পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফিরোজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App