×

পুরনো খবর

আ.লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী : গোপনে প্রচারণা জামায়াত-বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০১৮, ০৪:০২ পিএম

আ.লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী : গোপনে প্রচারণা জামায়াত-বিএনপির
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ, উঠান বৈঠক এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে জামায়াত-বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো দলীয় কর্মকান্ড কিংবা সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও গোপনে সংঘবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নের জন্য মাঠে তৎপর থাকায় সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীই এখন পুরোদমে নির্বাচনমুখী। গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার, বন্দর, রাস্তায়-ঘাট, চা স্টল, দোকান পাট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব স্থানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একটাই, কোন দলের প্রার্থী কে? ফলে মনোনয়ন নিয়ে সর্বত্রই চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৮১৮ ও পুরুষ ভোটার রয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩ জন। জেলার সবচেয়ে রাজনৈতিক সহিংসতাপ্রবণ এ আসন নিয়েই চলে জেলা পর্যায়ের রাজনীতি। বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ আসনটি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। মূলত এ কারণে সাতক্ষীরা জেলায় সাতক্ষীরা-১ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট করে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এবারো নির্বাচনে অংশ নিতে চান। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত তালা-কলারোয়া আসনটিকে ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন প্রার্থী হওয়ার জন্য জোর লবিং করে চলেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কর্মকর্তা এবং তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট অনিত কুমার মুখার্জী, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন এবং জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। কিন্তু নিজের দপ্তরে নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে এবং বেনামে ঠিকাদারি কাজ করাসহ অন্যান্য কারণে মাঝপথে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ হারাতে হয়। সে কারণে ওই সময় তালা-কলারোয়ার মানুষের মনে দেখা দিয়েছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অপর দিকে সরদার মুজিব গত ২০১৪ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে না পেরে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে ভালভাবে গ্রহণ করেনি। এদিকে বিএনপি-জামায়াত এ আসনটি দখল করতে গত চার বছরে তারা দলীয় কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি। সাতক্ষীরা জেলায় ২০১৩ সালের সহিংসতা পরবর্তী শত শত জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থক মামলার শিকার হয়ে জেল-হাজতসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে থাকায় প্রকাশ্যে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাÐে দেখা যায় না। অপরদিকে তালা ও কলরোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ভালো অবস্থানে নেই এ আসনের আওয়ামী লীগ। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলামের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনদ কুমারের আভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে। পরবর্তী কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের চিত্র একই রকমের। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপনের সঙ্গে রয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম লাল্টুর চরম দ্ব›দ্ব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ায় গত বছর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে দ্ব›দ্ব চরমে পৌঁছে। সেই দ্ব›দ্ব এখনো চলছে দুই পক্ষের মধ্যে। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম ১৯৭৯ সালে ছাত্র রাজনীতি থেকে যাত্রা শুরু। বর্তমানে শেখ নুরুল ইসলাম মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য সাতক্ষীরার স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সাতক্ষীরার স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার সম্পাদক মিষ্টিভাষী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের বলিষ্ঠ নেত্রী লায়লা পারভিন সেঁজুতির যথেষ্ট ইমেজ রয়েছে বলে এলাকার সাধারণ মানুষ ভোরের কাগজকে জানান। লায়লা পারভিন সেঁজুতি ভোরের কাগজকে বলেন, একজন সৎ নিষ্ঠাবান ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতেন এমন মানুষের সন্তান তিনি। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনী লড়াই হবে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে । স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির নতুন প্রজন্মের মানুষ হিসেবে তিনি মনোনয়ন পেলে এ নির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদী। তালা কলারোয়ার সাবেক সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টজন প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখত্ সাকীর একমাত্র সন্তান সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে মনোনয়ন লাভের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলামও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনিও এ আসনে কাজ করে চলেছেন। এদিকে দলের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কর্মকর্তা এডভোকেট অনিত কুমার মুখার্জী। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের মানবাধিকার আইনজীবী অনিত কুমার মুখার্জী দীর্ঘদিন ধরে তালা ও কলারোয়ার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করে ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এডভোকেট অনিত কুমার মুখার্জী ভোরের কাগজকে বলেন, তিনি তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তৃণমূল মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে সব সময় তাদের পাশে রয়েছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে আশা করছেন। অপরদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব দলের একক প্রার্থী হিসেবে সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। এ আসনে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের তথ্য উপদেষ্টা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত নির্বাচনে মহাজোট অথবা নিজ দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্যাহও। এ ছাড়া মাঠে রয়েছেন জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলুও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App