×

মুক্তচিন্তা

সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত হোক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ০৮:২৪ পিএম

স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময় হয়েছে, এর ধারাবাহিকতায় বহুল প্রত্যাশিত পানি বণ্টন ইস্যুরও নিষ্পত্তি হবে। মোদি সরকার এ ব্যাপারে সংবেদনশীল। সন্দেহাতীতভাবেই শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধনটি আরো মজবুত হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডক্টর অব লিটারেচার (ডি লিট) ডিগ্রি দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন থেকে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ ডিগ্রি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানসূচক ওই ডিগ্রি গ্রহণ করেন। আগের দিন শুক্রবার বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন ছিল এবারের সফরের মূল উদ্দেশ্য। সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে বেশ আলোচ্য বিষয় ছিল। বিশেষ করে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি সামনে ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় এই সফরে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কিত দুই দেশের মধ্যকার আস্থা ও বিশ্বাসের বন্ধনটি সুদৃঢ় হয়েছে, যা যে কোনো সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- সবার বক্তৃতায়ই ঘুরেফিরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের গভীরতা ও নৈকট্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘একটি প্রতিবেশী দেশ থাকলে সমস্যাও থাকতে পারে, আমরা সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করে ফেলেছি। হয়তো কিছু বাকি, আমি সে কথা বলে আমাদের এ চমৎকার অনুষ্ঠান নষ্ট করতে চাই না।’ কবি নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তোলা ও পরিচালনা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওই চেতনা নিয়ে চলার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এবং নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রতিটি দুঃসময়ে ভারতবাসী এ দেশের পাশে ছিল। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষায় বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রযাত্রার সূত্র একটি সুন্দর মালার মতো। তিনি মনে করেন- প্রগতি, সমৃদ্ধি, শান্তি ও ঐক্যের জন্য দরকার ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘অবিরল-অবিচল, একেবারে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মতো অনেক জল গড়িয়ে গেছে, অনেক জল গড়াবে। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্ক আরো অনেক অনেক ভালো হবে।’ অর্থাৎ পারস্পরিক সম্পর্কের জায়গাটি সম্পর্কে উভয় দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা অত্যন্ত স্বচ্ছ।

ভারত এখন শুধু বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশীই নয়, উন্নয়নের অংশীদারও। দুই দেশের মধ্যে নানামুখী সহযোগিতার সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এই সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগানো এবং বিদ্যমান সংকটগুলোর আশু নিরসনই আমাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময় হয়েছে, এর ধারাবাহিকতায় বহুল প্রত্যাশিত পানি বণ্টন ইস্যুরও নিষ্পত্তি হবে। মোদি সরকার এ ব্যাপারে সংবেদনশীল। আমাদেরও অধিকার আদায়ে সক্রিয় থাকতে হবে। সন্দেহাতীতভাবেই শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধনটি আরো মজবুত হলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App