×

বিনোদন

মঞ্চের সুবিধা বাড়লেও নেই আলোচিত নাটক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১১:৫৯ এএম

মঞ্চের সুবিধা বাড়লেও নেই আলোচিত নাটক
তখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়াম ছিল না। ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম কিংবা আধুনিক আলোক প্রক্ষেপণ ব্যবস্থাও ছিল কল্পনাতীত। ৭০-৯০ দশকের সেই ‘এনালগ’ সময়টায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি ও গাইড হাউস মিলনায়তনে বেশ কিছু কালজয়ী নাটক মঞ্চস্থ করেছে ঢাকার নাট্য সংগঠনগুলো। অথচ এখন উন্নত প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্তে¡ও মঞ্চ মাতায় না কীর্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, নুরলদীনের সারাজীবন, ওরা কদম আলীর মতো কোনো নাট্য প্রযোজনা। বর্তমানে নাট্যদল, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনয় শিল্পীর অভাব নেই। প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও প্রতি বছর বেরিয়ে আসছে প্রচুর ছেলেমেয়ে। তার পরও তালিকায় যোগ হয় না সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ বা মান্নান হীরার মতো নাট্যকার। মহিলা সমিতি এবং গাইড হাউস অডিটোরিয়াম যুগোপযোগী হওয়ার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক মঞ্চ ও স্টুডিও থিয়েটার। তার পরও নাট্যজগৎ এখন শূন্যতা আর সংকটে নিমজ্জিত। নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এ জন্য পান্ডুলিপি আর ভালোমানের নাট্যকারের অভাবকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, প্রাপ্তি নেই বলে নাট্যকাররা আর মঞ্চের জন্য নাটক লিখছেন না। তা ছাড়া ভালো মানের নাট্যকারও খুবই কম। সর্বোপরি পান্ডুলিপি সংকটের কারণেই বেশির ভাগ নাটকের দল নতুন নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনতে পারছে না। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, ভালোমানের নাট্যকার আর পান্ডুলিপি সংকটে অনেকগুলো নাটকের দল নিজেদের টিকিয়ে রাখতে বিদেশি নাট্যকারদের নাটকের অনুবাদ বা রূপান্তরের মাধ্যমে প্রযোজনা অব্যাহত রাখছে। নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমানও একই ব্যাখ্যা দিয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী নাট্যাঙ্গনে দেশি নাট্যকারদের বিশাল ভ‚মিকা ছিল। মুনীর চৌধুরী, নুরুল মোমেন, আসকার ইবনে শাইখের মতো নাট্যকাররা তাদের সৃজনশীলতাকে দিয়ে নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তী সময় মমতাজ উদ্দীন আহমদ, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হকরা ভালো লিখেছেন। এরপরে মানসম্পন্ন পান্ডুলিপি না পাওয়াতে বিদেশি নাট্যকারদের প্রতি নির্ভর হয়ে পড়তে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হতাশা প্রকাশ করে নাট্যব্যক্তিত্ব ও শিল্পী শম্পা রেজা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী মেধাবী নাট্যকাররা তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তাদের জীবন দর্শনই ছিল অন্যরকম। আর বর্তমানে জনপ্রিয়তার ঘোড় দৌড়ে গভীর চিন্তার মানুষদের উপস্থাপন থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। তবে পান্ডুলিপি সংকটের বিষয়টি মেনে নিলেও ভালো নাট্যকারের অভাব মানতে নারাজ অভিনেতা ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক। গণমাধ্যমের দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, প্রতিক‚লতার মধ্যেও আমাদের নাট্যাঙ্গনে মানসম্পন্ন অনেক নাট্যকার রয়েছেন। তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। মানসম্পন্ন অচেনা নাট্যকারদের তুলে ধরতে গণমাধ্যমেরও একটা বিশাল ভ‚মিকা রয়েছে। শিল্পবোধ না থাকলে মঞ্চনাটক লেখা যায় না। মঞ্চনাটক লিখতে হলে যে ধরনের অভিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার সে ধরনের অভিজ্ঞান এখনকার অনেক লেখকের মধ্যেই নেই বলে মনে করেন অভিনেতা কেরামত মওলা। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মঞ্চনাটকে কোনো ধরনের প্রাপ্তি নেই বলে অনেকেই এখন আর মঞ্চের জন্য নাটক লিখছেন না। টেলিভিশনে প্রাপ্তি আছে বলে নাট্যকাররা এখন টিভিনাটক লেখায় ব্যস্ত। শিল্প মানসম্পন্ন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে পান্ডুলিপি- এমন মন্তব্য করে নাট্যব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের সমাজে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মানুষ একজন শিল্পী। তবে একজন শিল্পীকে শিল্পী হয়ে উঠতে নানা সামাজিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়। তাই একজন লেখক তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। মুক্তিযুদ্ধের পরে প্রথম যারা গ্রুপ থিয়েটার শুরু করেন, সেসময় পাপান্ডুলিপি তৈরি করতে একেক জন নিজেদের আঙ্গিক তৈরি করে তবেই লেখা শুরু করতেন। এখন তেমনটি দেখছি না। বলা যায়, এখন সেই অবস্থা নেই। পান্ডুলিপি সংকট থেকে বের হয়ে আসার উপায় হিসেবে মানসম্পন্ন নাট্যকারদের মূল্যায়নের বিষয় তুলে ধরে অভিনেতা ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক বলেন, তাদের মূল্যায়ন করা হলে তারা ভালো কাজের অনুপ্রেরণা পাবেন। তৈরি হবে নাট্যকার। আর এভাবে আমাদের পান্ডুলিপি সংকট কাটাতে পারি। তবে বিদেশি নাটক বিষয়ে তার মন্তব্য, আমরা সরাসরি অনুবাদ করছি না, বলা যায় রূপান্তর করছি। যেমন আমাদের দলের নাটক ‘পুসি বিড়াল ও একজন প্রকৃত মানুষ’ বিদেশি নাটক হলেও সেটাকে আমরা শুধু অনুবাদই করিনি, রূপান্তরও করেছি। বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে নাটকে দেশি বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দেশে নাট্যকারের সংখ্যা বাড়লে বিদেশি নাট্যকারদের ওপর নির্ভর করতে হতো না মন্তব্য করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমাদের দেশের নামি সাহিত্যিক ও ভালোমানের লেখকদের পান্ডুলিপি রচনায় এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া নাটকের দলগুলোর মধ্যে যাদের ভালো লেখার হাত রয়েছে তাদের কাজে লাগাতে হবে। তবে পান্ডুলিপি সংকটে বিদেশি নাট্যকারদের নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে এই নাট্যব্যক্তিত্বের পরামর্শ হচ্ছে, যেসব বিদেশি নাটকের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সামঞ্জস্য নেই সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজধানী ঢাকায় নাটক মঞ্চায়নে সম্পৃক্ত রয়েছে ২৩০টি নাট্যদল। প্রতিটি দল বছরে একটি করে নাটক উপহার দিলেও অনেক পান্ডুলিপি পাওয়া যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App