×

পুরনো খবর

আ.লীগে ৬, বিএনপি ও জাপায় একক প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১২:২৯ পিএম

আ.লীগে ৬, বিএনপি ও জাপায় একক প্রার্থী
খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে খুলনা-১ আসনে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জোরেশোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ দখলে এলাকায় প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশে যোগ দেয়ার পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিং গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে এবার ক্ষমতাসীন দলের ৬ এবং বিএনপি, জাপা ও সিপিবির ১ জন করে প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। জানা যায়, বটিয়াঘাটার ৭টি, দাকোপ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে খুলনা-১ আসন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য একাধিক তরুণ প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে অন্যান্য দলের একক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এই আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী প্রায় চ‚ড়ান্ত তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে প্রায় হাফ ডজন নেতার নাম। তারা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আর এই কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের দুর্গে আঘাত হানতে চায় বিএনপি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাটি আওয়ামী লীগের ‘রিজার্ভ’ আসন হিসেবেই পরিচিত। স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালের নির্বাচন ছাড়া সব নির্বাচনেই জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগসহ দেশের প্রধান দলগুলো ১৯৮৮ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রফুল্ল কুমার শীল, ১৯৮৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে বিজয়ী হয়েছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল হোসেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নিজেদের কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশীদ। দলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পঞ্চানন বিশ^াস ওই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় দল তাকে বহিষ্কার করে। পরে বিজয়ী হলে আবার তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডল ৫২ হাজার ৩৮১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির আমীর এজাজ খান পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৪২০ ভোট। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ^াস বিজয়ী হন। ভোটারের আনুপাতিক হিসাবে দেশ স্বাধীনের পর থেকে সংখ্যালঘু ভোটারদের প্রভাবে এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা কারণে সেই হিসাব এখন বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে দুই উপজেলা মিলে মোট ২ লাখ ১১ হাজার ভোটারের মধ্যে দাকোপে ৫১ ভাগ হিন্দু, ৪৪ ভাগ মুসলিম এবং অবশিষ্টরা খ্রিস্টান ধর্মানুসারী। বটিয়াঘাটায় ৬৭ ভাগ মুসলিম ও ৩৩ ভাগ হিন্দু ভোটার রয়েছেন। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। এ সব কর্মকান্ডের পাশাপাশি মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং-গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৬ সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস, দুবারের সাবেক এমপি বর্তমান খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, দাকোপের দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শেখ আবুল হোসেন, সাবেক এমপি বিগত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ননী গোপাল মন্ডল, বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান এবং বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা খুলনা সদর থানার উপদেষ্টা শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল। অপরদিকে গত দুবারের বিএনপি দলীয় প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমির এজাজ খান এবার দলের একক প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য দলীয় চেয়ারম্যানের প্রেস এন্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়, সিপিবির বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন। বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল দলে ফিরে এলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে তিনি বর্তমান কমিটির বাইরে থাকা দলের নেতাকর্মী নিজ অনুসারীদের নিয়ে মাঠে আছেন। নৌকার সঠিক প্রার্থী নির্ধারণ এবং বিভক্ত দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে লাগাতে পারলে অনায়াসে বিজয় সম্ভব হবে এমন ধারণা সাধারণ ভোটারদের। অন্যদিকে বিগত দুটি নির্বাচনে বিএনপি ধারাবাহিক ভোট বৃদ্ধির মাধ্যমে নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের ভোটের ব্যবধান কমিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে। ২০০১ সালে আমির এজাজ খান ৪৮ হাজার এবং ২০০৮ সালে ৭৮ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এবার নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস জানান, তিনি ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৪ সালে এই আসনে নির্বাচিত হন। তাকে আবারো মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী। কারণ, তার বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মী বা এলাকাবাসীর কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, এবার অনেকেই মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তদ্বির করছেন। দলীয় সভানেত্রী যাকে যোগ্য মনে করেন, তাকেই মনোনয়ন দেবেন। তার সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি আস্থাশীল। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, দলের দুঃসময়ে অন্য নেতারা যখন এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন তখন তিনি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনো নেতাকর্মীদের পাশেই আছেন। দলের নেতাকর্মীসহ দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে খুলনা-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। এ ছাড়া জেলার অন্য ৩টি আসনের নেতাকর্মীরাও তাকে প্রার্থী হতে বলছেন। দলীয় সভানেত্রী তাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবেন তিনি সেখানেই নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। আর যদি তাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য কাউকে দেয়া হয় তাহলে তার পক্ষেই তিনি কাজ করবেন বলে জানান। বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান বলেন, অনেকেই আছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই তারাও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে চান। এজন্য এ আসনে সঠিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে হবে। যারা এলাকায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করেন তাদের নির্বাচিত হওয়া উচিত। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি নির্বাচনে অংশ নেবো। সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল বলেন, বিগত নির্বাচনে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যে কারণে ওই সময়ে যে সব কমিটি হয়েছে তাদের বর্তমান কর্মকান্ডের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এ অঞ্চলের অনেক কাজ বাকি আছে সেগুলো আমি করতে পারব। বিএনপির আমীর এজাজ খান বলেন, নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। সে কারণে এলাকায় ঠিকমতো ঢুকতে পারেন না। তবে তার কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই আসনটিতে আগে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ভোটারের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি ছিল। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে বিএনপির প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নিপীড়নে সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায় জানান, দলের পক্ষ থেকে এই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তিনি অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App