×

মুক্তচিন্তা

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে প্রিয়নবীর (দ.) ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ুন

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৮, ০৯:২১ পিএম

দরুদ শরিফ পাঠের ফজিলত বর্ণনাতীত। সংক্ষেপে কুরআন ও হাদিস শরিফের আলোকে এতটুকুই বলা যায় ‘যে ব্যক্তি প্রিয় নবীর (দ.) ওপর মাত্র একবার দরুদ শরিফ পড়বে আল্লাহ তা’য়ালা তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করবেন এবং কমপক্ষে তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন, তার আমলনামায় দশটি সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন এবং আল্লাহর দরবারে তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি পাবে।

মাহে রমজানের বিশেষ ইবাদত দরুদ শরিফ পাঠ। দরুদ শরিফ পাঠে আল্লাহ্র দরবারে ইবাদতের বিনিময় নিশ্চিত হয়। ইবাদত বন্দেগি কবুল বা গ্রহণযোগ্য করতে প্রিয় নবীজীর (দ.) ওপর দরুদ পাঠ করা জরুরি। আল্লাহ্র কাছে সমুদয় ইবাদত-আরাধনা গ্রহণযোগ্য করতে ভক্তি-শ্রদ্ধা-ভালোবাসাপূর্ণ অন্তরে নিবিষ্টভাবে প্রিয়নবীর (দ.) ওপর বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা অতীব পুণ্যময় আমল। মাহে রমজানে প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানের উচিত প্রিয়নবীর (দ.) ওপর অধিক দরুদ পাঠ করা। কারণ দরুদ শরিফ পড়া এমন এক ইবাদত যা আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। এমনকি স্বয়ং আল্লাহ পাক তার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সব সময় দরুদ শরিফ পড়েন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- ইন্নাল্লাহা ওয়ামালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান নাবী ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা আমানু সাল্লু আলাইহি ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা এবং তার ফিরিশতারা নবী করীম (দ.) এর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করে এবং তোমরাও নবীজীর (দ.) ওপর দরুদ পড়।’ [আল কুরআন] এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর হাবীবের ওপর ‘দরুদ শরিফ পড়া ও সালাম পেশ করা’ অতীব বরকতময় আমল। কেননা আল্লাহ পাক কোনো কাজ করেন না কিন্তু তিনি তার প্রিয় হাবীবের দরুদ শরিফ পড়েন। দরুদ শরিফ পাঠ আল্লাহর কাছে এতই পছন্দের যে, নিজেও পড়েন এবং তার বান্দাদের দরুদ শরিফ পড়ার হুকুম জারি করেন। সুতরাং যারা প্রিয়নবীর (দ.) ওপর দরুদ শরিফ পড়েন তাদের চেয়ে মহা সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে? তাই যুগে যুগে সব ইমাম, মুজতাহিদ, ফকীহ মুফাসসির মুহাদ্দিস, আউলিয়ায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখ ও সত্যিকার মু’মিন মুসলমানরা নিজেদের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দরুদ শরিফ পঠন পাঠন ও লিখনীতে ব্যয় করেছেন। এতে প্রত্যেকেই দু’জাহানের কামিয়াবি অর্জন করেছেন। কুরআন হাদিসের আলোকে প্রিয় নবীর (দ.) নানা গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তাদের লিখিত দরুদ শরিফে। বিশেষ করে মা’য়ারিফে লাদুন্নিয়ার প্রস্রবণ হজরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রা.) কর্তৃক রচিত ‘মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে দরুদ শরিফ সংকলনটি বিশ্বে র ইতিহাসে অতুলনীয়। ত্রিশ পারার এ দরুদ গ্রন্থটি সারাবিশ্বে আজ সমাদৃত ও বহুল পঠিত। মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসুল (দ.) দরুদ গ্রন্থটি ইশকে রাসুল (দ.) বা নবী প্রেমের আবেগ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সেরা নজরানাস্বরূপ এবং হজরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভীর আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনা ও বুজুর্গ সত্তাই দরুদ গ্রন্থটিতে ফুটে উঠেছে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে দুনিয়া ও আখিরাতের উন্নতি, মুক্তি ও সকল বিপদ-দুর্দশা-দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্যে ওই দরুদ সংকলনটি সংগ্রহ করে নিয়মিত পাঠ করুন অথবা যে কোনো দরুদ শরিফ নিয়মিত পাঠ করার অভ্যাস করুন। এতে অশেষ উন্নতি ও কল্যাণ নিহিত।

দরুদ শরিফ পাঠের ফজিলত বর্ণনাতীত। সংক্ষেপে কুরআন ও হাদিস শরিফের আলোকে এতটুকুই বলা যায় ‘যে ব্যক্তি প্রিয় নবীর (দ.) ওপর মাত্র একবার দরুদ শরিফ পড়বে আল্লাহ তা’য়ালা তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করবেন এবং কমপক্ষে তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন, তার আমলনামায় দশটি সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন এবং আল্লাহর দরবারে তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি পাবে। (আল হাদিস)। হাদিস শরিফে আছে ‘কোনো দোয়াই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না যতক্ষণ না সে দোয়ার আগে ও পরে প্রিয় নবীর (দ.) ওপর দরুদ শরিফ পড়া না হয়।’ হাদিসে পাকে আরো বর্ণিত আছে ‘যে ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র নাম শোনার পর তার ওপর দরুদ শরিফ পড়ে না সে ব্যক্তি সবচেয়ে বড় কৃপণ। তার ধ্বংসের জন্য জিব্রাইল আলাইহিস সালাম দোয়া করেন।’ (আল হাদিস)।

মানবজাতির করুণার উৎসস্থল প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জগতকে আলোময় ও মানবমণ্ডলীকে ধন্য করার ঐশী যে কর্মসূচি তার প্রথম পদক্ষেপ হলো প্রিয়নবীর (দ.) নূরানী সত্তাকে সৃষ্টি। তাঁর আবির্ভাবও ঘটেছে মানবজাতির ঘোর দুর্দিনে, চরম বিপর্যস্ত মুহূর্তে। তমশাচ্ছন্ন যুগের আরবের অন্ধকার তাড়িত মানুষেরা প্রিয় নবীর (দ.) আবির্ভাবের ছোঁয়ায় স্পন্দিত ও উজ্জীবিত হয়ে উঠল। নারী-পুরুষ-শিশুসহ সবাই ফিরে পেল বেঁচে থাকার প্রেরণা ও অধিকার। এমনকি পশু-পাখিসহ জগতের সকল সৃষ্টির করুণার মূর্ত প্রতীকরূপে প্রেরিত হন প্রিয় নবী (দ.)। আল্লাহ পাক কুরআন মজিদে প্রিয় নবীর (দ.) আবির্ভাবের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেন, ওয়ামা আরসাল্নাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামীন- অর্থাৎ হে রাসুল! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতের করুণাসিন্ধু হিসেবে। তাই, প্রিয় নবী (দ.) হচ্ছেন মানবতার করুণাধারা ও আল্লাহর রহমতের কেন্দ্রবিন্দু। দুনিয়ায় এতো পাপাচার, অনাচার, হানাহানি ও জুলুম-নিপীড়নে মানুষের সম্পৃক্ততা সত্তে¡ও শুধু প্রিয় নবীর (দ.) কারণেই এখনো আল্লাহর রহমতের প্রস্রবণ অবারিত রয়েছে। নবীজীর (দ.) এ ধরায় শুভাগমন ও উপস্থিতির সুবাদে আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ায় সমগ্র মানবতা ধন্য হচ্ছে জগৎ জুড়ে। কুরআন পাকে একথা সত্যায়িত ও গুরুত্বের সঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন আল্লাহপাক বলছেন, ‘ওয়ামা কানাল্লাহু লিয়ুআজ্জিবাহুম ওয়ান্তা ফীহিম’ অর্থাৎ হে রাসুল! ‘আপনি যাদের মধ্যে আছেন (যে জগৎ ও মানুষদের বেষ্টন করে রেখেছেন) তাদের ওপর গজব বা শাস্তি দেয়া আমি আল্লাহ সমীচীন মনে করছি না’। ওই কুরআন পাকের আয়াত দুটি থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, জগতে আল্লাহর রহমতের উসিলা যেমন আমাদের প্রিয় নবী (দ.), তেমনি পাপাচার-অনাচারে ডুবে থাকা সত্তে¡ও আল্লাহর কঠিন শাস্তি বা গজব থেকে নিষ্কৃতি মিলছে স্বয়ং নবীজীর (দ.) কারণে। এ জন্য উম্মতকে সবসময় প্রিয় নবীর (দ.) মেহেরবানির কথা স্মরণ, কৃতজ্ঞতার প্রতিদান হিসেবে বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠে সচেষ্ট হতে হবে। ইবাদত-বন্দেগিকালে যখনই সুযোগ হয় তার ওপর সালাত-সালাম, মিলাদ-কিয়ামের হাদিয়া বখশিশ করতে হবে। মাহে রমজানে প্রতিদিনের নামাজে তারাবিহ শেষে সংক্ষিপ্ত আয়োজনে হলেও নবীজীর (দ.) ওপর সালাত-সালাম পেশ করার উদ্যোগ নেয়া হলে আল্লাহর রহমত ও প্রিয় নবীর (দ.) সন্তুষ্টি অর্জিত হবে এ আশা পোষণ করা যায়। আল্লাহ্ পাক মাহে রমজানে আমাদের বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠে শান্তি-সৌভাগ্যের দ্বার উন্মুক্ত করার সুযোগ দিন। আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জনে এবং পরকালে প্রিয় নবীর (দ.) সুপারিশ পেতে বেশি বেশি দরুদ পড়ার অভ্যাস রপ্ত করা জরুরি।

আ ব ম খোরশিদ আলম খান : সাংবাদিক ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App