×

পুরনো খবর

বড় ৩ দলেই একাধিক প্রার্থী শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৮, ০১:৪৫ পিএম

বড় ৩ দলেই একাধিক প্রার্থী শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ
কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাট-১ আসন (হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম) জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের ভিত অনেকটাই শক্তিশালী। বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন এই পরিবর্তনের কারিগর। টানা ৩ বারের এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন তিনি। মোতাহার হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে নির্বাচনী এলাকার অধিকাংশ নেতাকর্মী তারই অনুসারী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার মনোনয়নের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় আছেন পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল। তিনি দলের পাটগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আবেদ আলী এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে আসনটি প্রথমে বিএনপি এবং পরে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন সরকার দখলে নেন। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির দুর্গ ভেঙে আবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হন। এমপি মোতাহার হোসেন বলেন, টানা ৩ বার ক্ষমতায় থেকে এলাকার সব রাস্তা পাকা করেছি। স্কুল, কলেজ, সেতু, কালভার্ট, মসজিদ, মন্দির, বাঁধ নির্মাণসহ তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে আমার আমলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনার হাত ধরে এ জেলায় উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দিয়েছি। লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কপথ ও রেলপথ সংস্কার করা করেছি। দ্বিতীয় তিস্তা সেতু ও দ্বিতীয় ধরলা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ ভবন ও থানা ভবন কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়েছে। এক কথায় উন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। আগামী দিনে তিনিই নৌকার টিকেট পাবেন এবং বিগত সময়ের মতো সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে দাবি করেন মোতাহার হোসেন। যদিও দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে স্বজনদের নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে মোতাহারের বেশ সমালোচনা রয়েছে। এদিকে নানা কারণে বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। দুই উপজেলার মধ্যে পাটগ্রাম উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত। একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন। অপর অংশ উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুলের নিয়ন্ত্রণে। তবে এখন পর্যন্ত হাতীবান্ধা উপজেলায় কোনো কোন্দল নেই। দলীয় কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে রুহুল আমিন বাবুল বলেন, সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী দল। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত প্রতিটি কমিটি গোছালো ও সক্রিয়। এখানে নৌকার বিকল্প নেই। তবে জনগণ নতুন মুখ দেখতে চায়। সেদিক থেকে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পেয়েছি আর সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমাণে প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়নে সৎ, যোগ্য, উদ্যমী ও অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরাই এবার মনোনয়ন পাবেন। এতে তিনি একধাপ এগিয়ে আছেন বলেও দাবি করেন। আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিলে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বাবুল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ এখন অনেক বেশি শক্তিশালী দল। এখানে নৌকার বিকল্প নেই। যেহেতু জনগণ নতুন মুখ দেখতে চায় সে ক্ষেত্রে আমিও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটিতে দ্ব›দ্ব বিরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। ৩ ভাগে বিভক্ত এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে দলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোও এখানে তেমন একটা বাস্তবায়ন হয় না। ১৯৯৬ সালের পর থেকে এই আসনে দলের কোনো প্রার্থী ছিল না। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শরিক দল জামায়াতের প্রার্থী আবু হেনা মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন ৪৮ হাজার ৯০৭ ভোট এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাবিবুর রহমান ৭৪ হাজার ২১৯ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী হয়েছিলেন। সেদিক থেকে বলা যায়, এ আসনের জামায়াতের বড় একটি ভোট ব্যাংক আছে। বর্তমানে সেই জামায়াতের সঙ্গেও বিএনপির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এরপরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। জোটগত নির্বাচন না হলে জামায়াত নেতা আবু হেনা মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন সাজু স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আসনটিতে একসময় জাতীয় পার্টির অবস্থান শক্তিশালী থাকলেও এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দলটি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন। সেবার মাত্র ৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এবার আগেভাগেই প্রার্থী হিসেবে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তার ব্যক্তিগত একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আকতারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম জি মোস্তফাকে সম্প্রতি জাপা থেকে বহিষ্কার বরা হয়েছে। যদিও তিনি এখনো গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এম জি মোস্তফা বলেন, শুরু থেকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছি। পার্টির পেছনে সময় দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রেখেছি। সেদিক থেকে তৃণমূলের কথা বিবেচনা করলে কেন্দ্রীয় নেতারা এই আসনের কথা বিবেচনা করে তারা ওই বহিষ্কারাদেশ তুলে নেবেন এবং আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। তবে তা না হলে আসনটিকে পুনরুদ্ধারে পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ অথবা তার ছোট ভাই পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে প্রার্থিতা দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এরশাদের একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আকতার বলেন, জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এখানে লাঙ্গলের জোয়ার উঠেছে। পার্টি আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও রয়েছে আমার। আগামীতে হারিয়ে যাওয়া এ আসন আবারো উদ্ধার করবো। সব মিলে লালমনিরহাট-১ আসন আগাম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এখন সরগরম। ৩ দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতাও বেশ চোখে পড়ার মতো। তবে জোটগত ভোট হলে সমীকরণ পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App