×

পুরনো খবর

হারানো আসন উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, বিভক্তি আ.লীগে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০১৮, ০২:৫৮ পিএম

হারানো আসন উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, বিভক্তি আ.লীগে
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ। এর কারণ দলীয় কোন্দল ও বিভক্তি। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে না তেমন দৌড়ঝাঁপ। বলা হচ্ছে, হামলা-মামলার কারণে তাদের এই নীরবতা। বরিশাল জেলার একমাত্র নদীবেষ্টিত ও অবহেলিত বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ-কাজিরহাট) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ২৪৫ জন। এ আসনের ভোটাররা বরাবরই স্বাস্থ্য চিকিৎসাসহ মৌলিক বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। কারণ হিসেবে ভোটারদের দাবি, তিন থানার সঙ্গে জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা। সড়ক পথে জেলা শহরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষা নেয়া যেন এখানকার মানুষের কাছে স্বপ্ন। আর এখানে উন্নয়ন যেটুকু হয়েছে তার বেশিরভাগই সাবেক এমপি মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদের আমলে। আর বাকিটা অন্যান্যের। তাই মহিউদ্দিন আহমেদকে ঘিরে এখানকার মানুষের মাঝে একটা চাওয়া পাওয়ার ভরসাও ছিল। তার মৃত্যুর পর এখানকার আ.লীগ ঘরানার রাজনীতিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বলে দাবি করেন পোড়খাওয়া আ.লীগার মাস্টার দেলওয়ার হোসেন। তার মতে দলে এখন আর আমাদের মূল্যায়ন নেই। এ আসনে ১৯৯১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয় পান বিএনপির শাহ মো. আবুল হোসাইন। আর ২০০৮ সালে সাংসদ হন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমান সাংসদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক সাংসদ ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলামের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলে আসছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পংকজ দেবনাথ সাংসদ হওয়ার পরই মূলত এ বিরোধের শুরু। তাদের বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত বছরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার অন্তত সাতটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অনুগত ব্যক্তিদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান পংকজ দেবনাথ। তার কারণে পাঁচটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হন বলে অভিযোগ ওঠে। একটিতে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। গত বছরের ২৩ মে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাহে আলম ঢালী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হন পংকজের অনুসারী বাহাউদ্দিন। তিনি জয়ীও হন। কেন্দ্র দখল ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করে দলীয় প্রার্থী মাহে আলম নির্বাচন বর্জন করেন। ওই দিনই বরিশাল শহরে সংবাদ সম্মেলন করে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করে জমি দখল, সরকারি অর্থ লুট এবং ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগ করা হয়। পরে পংকজ দেবনাথ সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো মইদুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। দলের আরেকজন নেতা বলেন, ২০০৩ সালে মইদুল জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০৮ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। অন্য দল থেকে এসে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানতে পারেননি। তবে পংকজ দেবনাথ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিযোগিতা আছে। কেউ কেউ নানা মন্তব্য করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন। দলের কোন্দল সম্পর্কে মইদুল ইসলাম বলেন, দলের ওপর মহল থেকে আমাকে চুপ থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাই আর মেহেন্দিগঞ্জ যাইনি। তা ছাড়া আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছি। সংসদ নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়েই কাজ করব। এ আসন থেকে এবার আ.লীগের মনোনয়ন চাইছেন ২০০১ সালে দলের মনোনীত প্রার্থী বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক মেজর (অব.) মহসিন সিকদার, মহানগর আ.লীগ নেতা আফজালুল করিম, লায়ন মজিবুর রহমান। মেজর (অব.) মহসিন সিকদার বলেন, এলাকায় আমার ব্যাপক জনসমর্থন আছে। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ চালিয়ে আসছি। এখন দল মনোনয়ন দিলে এই আসন আমি শেখ হাসিনাকে উপহার দেব ইনশাআল্লাহ। এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন তৎপরতা নেই। তারা বলছেন, চেয়ারপারসন কারাগারে। ঘরোয়াভাবেও কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কথা ভাবা অবান্তর। হিজলা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক গণসংযোগ তো দূরের কথা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পর্যন্ত পালন করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হবে কীভাবে? তবে দলীয় সূত্র জানায়, এ আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বেশকিছু দিন ধরে এখানে গণসংযোগ করছেন বরিশাল মহানগর বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান ওহিদ। তাকে ঘিরে এখানে নতুন একটি বলয় তৈরি হয়েছে। আর এতেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া এ আসনে সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, সাবেক সাংসদ শাহ মো. আবুল হোসাইনের নাম আলোচনায় আছে। তবে সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন এ আসনের সাবেক সাংসদ থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় আসেন না। তেমন যোগাযোগও নেই। আবুল হোসাইনের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজিব আহসান বর্তমানে কারাগারে। তার ঘনিষ্ঠজনরা বলেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, বর্তমানে হিজলা মেহেন্দিগঞ্জে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। বিএনপি সংগঠিত থাকলেও মাঠে নামতে পারছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App