×

মুক্তচিন্তা

ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কুরআনের নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০১৮, ০৮:৪৮ পিএম

পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত হচ্ছে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত। কুরআন মজিদ তেলাওয়াতে অশেষ সওয়াব তথা পুণ্য অর্জিত হয়। এই মাসে দিনে রাতে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে যথেষ্ট সওয়াব মিলে। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের সেরা উসিলা হচ্ছে কুরআন মজিদ তেলাওয়াত। তাই প্রতিটি রোজাদারকে ব্যস্ততা সত্ত্বেও সময় বের করে নিয়ে প্রতিদিনই কুরআন মজিদ তেলাওয়াতের মাধ্যমে অশেষ পুণ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

বছরের এই একটি মাস রমজানের মুহূর্তগুলো কাটে ইমানদার জনতার উচ্ছ্বসমুখরতায়, অতীব উৎসাহ-উদ্দীপনায়। মানুষের সঙ্গে মহান স্রষ্টা আল্লাহর সংযোগ-সম্পর্ক নৈকট্য সুদৃঢ় হয় পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা এবং নানামুখী ইবাদত-বন্দেগির উসিলায়। ইবাদত-আরাধনার বহু উপায় আছে। এই উপায় এবং ইবাদত বন্দেগি কীভাবে করা হবে তার সঠিক পদ্ধতি ও রূপরেখা পেশ করেছেন প্রিয়নবী হজরত মুহম্মদ মুস্তফা (দ.)। আল্লাহপাক তো মানুষ সৃষ্টির একটি বড় কারণ হিসেবে স্বয়ং ঘোষণা দিয়ে রেখে গেছেন ‘ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা লিয়া’বুদুন’- ‘আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই পাঠিয়েছি।’ মহান প্রভু আল্লাহর ইবাদত যথাযথ উপায়ে সঠিক নিয়মে করার বাস্তব নির্দেশনা রয়েছে মহানবীর (দ.) বাণী ও হাদিস শরিফে বেশ উজ্জ্বলভাবে। মহানবী (দ.) ইসলামের প্রবর্তক এবং ইসলামি জীবন দর্শনের মডেল ও রূপকার হিসেবে যা কিছু মানুষের জন্য করণীয় নির্ধারণ করেছেন তাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যথেষ্ট। কিছু ইবাদতের কথা কুরআন মজিদে আল্লাহপাক সরাসরি মানুষের উদ্দেশে বলেছেন। যেমন নামাজ রোজা হজ জাকাত ইত্যাদি অতি আবশ্যকীয় ইবাদত বা করণীয়গুলো কুরআন মজিদে সরাসরি নির্দেশিত আল্লাহর পক্ষ থেকে। এর বাইরেও বহু করণীয় আছে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের অনেক পথ-পদ্ধতি রয়েছে। যা মানুষের সামনে নানাভাবে পেশ করেছেন মহানবী (দ.)। কুরআন মজিদের নির্দেশ এবং মহানবীর (দ.) প্রদর্শিত যাবতীয় কাজ ও করণীয় নিয়েই ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। মানুষকে হেদায়েতের পথে, সৎ কাজে ও কর্তব্যে দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়ার জোরালো আহ্বান রয়েছে ঐশী গ্রন্থ কুরআন মজিদে। আল্লাহপাক বলেন, তিবইয়ানাল্লিকুল্লি শাইয়্যিন- প্রত্যেক বস্তু, প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে কুরআন মজিদে। সুরা ইয়াসিনে আল্লাহপাক কুরআন মজিদকে অভিহিত করেছেন- ওয়াল কুরআনিল হাকিম- ‘বিজ্ঞানময় কুরআন’ হিসেবে। আজ শুধু মুসলিম মনীষীরা নয়- অন্য ধর্মবিশ্বাসী জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত, বিজ্ঞানী ও বিদগ্ধজনের মধ্যে কুরআন মজিদের ব্যাপক পঠন-পাঠন-অধ্যয়ন-গবেষণা শুরু হয়েছে। কুরআন মজিদের অধ্যয়নে এসব জ্ঞানপিপাসু রহস্যসন্ধানী মানুষের মাঝে নিত্য-নতুন চিন্তা, জিজ্ঞাসা ও রহস্যের দুয়ার দিনে দিনে উন্মুক্ত হচ্ছে। দারুণ বিস্ময়, কৌত‚হল, রহস্যভেদী মন নিয়ে কুরআন মজিদের প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্যের তাৎপর্য অনুধাবনে বিশ্বের বিদ্বৎ সমাজ আজ বহুদূর এগিয়েছে। কুরআন মজিদ কেবল মুসলমান স¤প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ তা নয়, সর্বমানবতার কল্যাণের জন্যই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

কুরআন মজিদকে বলা হয়েছে- ‘হুদাল্লিন্নাছ’ তথা মানবজাতির পথপ্রদর্শক। যদিও একটি সম্প্রদায় কুরআন মজিদকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মানে, কিন্তু সব জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে কুরআনের নির্দেশনা অনুসরণে জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে পারে। কুরআনের হেদায়তের বাণী সর্বজনীন ও উন্মুক্ত। ইসলাম একটি জীবনমুখী বাস্তববাদী জীবন ব্যবস্থা হিসেবে এর বিশ্বজনীন আবেদন ও প্রাসঙ্গিকতা এখন প্রশ্নাতীত। আর ইসলামি জীবন দর্শনের সেরা গাইডবুক হচ্ছে ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন মজিদ। মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির নির্ভুল অব্যর্থ দিকনির্দেশনাই হলো কুরআন মজিদ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ, রাজনীতি, অর্থ ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মানুষকে ঘিরে যা কিছু দুনিয়ায় আবর্তিত সব কিছুরই অনুপুঙ্খ বর্ণনা ও করণীয় নিয়ে কুরআন মজিদ পাঠানো হয়েছে মানুষের মাঝে। কুরআন মজিদের অবতীর্ণের সময় ও প্রেক্ষাপট একদিনের নয়। আল্লাহপাক বলেন, বাল হুয়া কুরআনুম মজিদ, ফি লাউহিম মাহফুজ- ‘কুরআন মজিদ (মানুষ সৃষ্টির বহু আগে থেকেই) লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত।’ তাই, কুরআন মজিদের লিখনশৈলী ও বর্ণনা স্বয়ং আল্লাহর। এখানে কোনো মানুষের হাত বা নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্য কুরআন পাকের শুরুতেই বলা হয়েছে ‘জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিহি, হুদাল্লিল মুত্তাকিন ‘কুরআন মজিদের ব্যাপারে নেই কোনো সন্দেহের অবকাশ। এটি পরহেজগার মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক’। [সুরা বাক্বারাহ : আয়াত : ২]। কুরআন মজিদ যে ঐশীগ্রন্থ এতে সন্দেহাতীত বিশ্বাস পোষণই ইমান। কুরআন মজিদের ঐশীগ্রন্থের সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে বহুভাবে একে মানবরচিত বলে যুক্তি ব্যাখ্যা দাঁড় করা হয়েছিল প্রিয়নবীর (দ.) জীবদ্দশায় আরবের জমিনে। বিরুদ্ধবাদীদের সব মনগড়া যুক্তি অপবাদ ও বিদ্বেষী প্রচার অংকুরেই ধামাচাপা পড়ে যায় কুরআন মজিদের বিস্ময়কর মুজেজার কাছে। আরবের বাঘা বাঘা পণ্ডিত কবিদের মুখে কুরআন মজিদের বিশ্বস্ততা নিয়ে নানা সংশয়পূর্ণ কথাবার্তা উচ্চারিত হয়েছে।

ফলে এদের কুরআন মজিদের একটি সুরা বা আয়াতের মতো বিকল্প কুরআন গ্রন্থ রচনা করার চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল। অথচ বহু চেষ্টার পরও কুরআন মজিদের একটি শব্দ বা আয়াতের সমতুল্য কোনো বাক্যই এই পণ্ডিতরা উপস্থাপনে সক্ষম হয়নি। সবাই ব্যর্থতা স্বীকার করে নির্দ্বিধায় কুরআন মজিদের ঐশী অবস্থানই সেদিন মেনে নিয়েছিল। আল্লাহর কালামের অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য, এর বর্ণনাভঙ্গি, রচনাশৈলী, শব্দ ঝঙ্কার, বাক্যের স্পষ্টতা এবং গদ্য-পদ্যের আদলে এর বিস্ময়কর উপস্থাপনা জ্ঞানী-গুণী-মনীষীদের কাছে উজ্জ্বলভাবে দিন দিন ফুটে উঠছে। প্রিয়নবী হজরত মুহম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ এ কুরআন মজিদ দিকভ্রান্ত মানবতার জন্য আলোর দিশারী।

কুরআন মজিদ পঠন-পাঠনে মানুষের জন্য রয়েছে অনেক ফায়দা ও কল্যাণ। প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, আফজালুল ইবাদাতে তেলাওয়াতিল কুরআন ‘কুরআন মজিদ তেলাওয়াত করাই সর্বোত্তম ইবাদত।’ আরো বলা হয়েছে ‘যার অন্তরে কুরআন শরিফের কিছু অংশও নেই সে যেন একটি উজাড় গৃহ।’ অর্থাৎ মাল সামাল আসবাবপত্র না থাকলে যেমন গৃহের দাম নেই তেমনি মানুষের অন্তরে কুরআন মজিদের প্রতি ভালোবাসা, এর পড়াশোনা না থাকলে উজাড় গৃহের ন্যায় ওই মানুষটিও কপর্দকশূন্য, রিক্ত। সবকিছু থাকতেও যেন কুরআনের জ্ঞানশূন্য মানুষটি জীবন্মৃত।

সমাজে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টিতে অপরাধী অপরাধ করে নিষ্কৃতি না পাওয়াই কুরআনের হুকুম। খুন, সহিংসতায় যারা লিপ্ত তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পেতেই হবে। এটাই কুরআনের বিধান। সন্ত্রাসী, মাদকসেবী এবং দেশ ও সামাজে শান্তি হরণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করাই হচ্ছে ইসলামের বিধান ও কুরআন মজিদের শাশ্বত নির্দেশনা। ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কুরআন মজিদের নির্দেশনার অনুসৃতি প্রয়োজন।

আ ব ম খোরশিদ আলম খান : সাংবাদিক, লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App