×

মুক্তচিন্তা

রোজার মাহাত্ম্য অর্জনে সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি জেনে নিন

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৮, ০৯:০৫ পিএম

সুরা বাক্বারার ১৮৩-১৮৪ আয়াতে আল্লাহ্র বাণী : ‘সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্ত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্য়া- একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সৎ কাজ করে এটা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোজা রাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।’

মাহে রমজানের রহমতের দশক ধীরে ধীরে আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে। আর দুই দিন পরই আসছে মাগফিরাতের পর্র্ব তথা ক্ষমার দশক। রহমতের দশকে আমাদের পূর্ণ নিবিষ্টতার সঙ্গে সিয়াম সাধনা ও ইবাদত বন্দেগি পালনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত তথা করুণার ভাগিদার হতে হবে। এই মাসে প্রতিটি পুণ্যের বিনিময় বা সাওয়াব ৭০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। তাই এই রোজার মাসে বেশি বেশি পুণ্যকর্মের মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে পুণ্যসিক্ত করতে হবে।

যে কোনো দায়িত্ব ও করণীয় সঠিকভাবে যথাশুদ্ধভাবে পালন করতে নির্দিষ্ট কিছু বিধি নিষেধ মেনে চলা জরুরি। নিয়ম-পদ্ধতি ও শর্ত না মেনে যথাযথভাবে কোনো কিছুই সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সঠিকভাবে রোজা রাখার জন্যে, রোজাকে আল্লাহ্র কাছে গ্রহণীয় ও পছন্দনীয় করতে শরিয়তের দিকনির্দেশনা জানা, বোঝা ও সে মতে আমল করা অতীব জরুরি। নিয়ম-পদ্ধতি না মেনে, কায়দা-কানুন না বুঝে ইচ্ছেমতো খেয়ালখুশিকে প্রাধান্য দিয়ে রোজা রাখায় কোনো ফায়দা নেই। স্বেচ্ছাচারিতায় ও নিয়ম-কানুন লংঘনের দ্বারা রোজার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পূর্ণ আশঙ্কা থেকে যায়। তাই, রোজা যার ওপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য তাকে রোজার মাসআলা-মাসায়েল (নিয়ম-পদ্ধতি) জেনে নেয়াও ফরজ হিসেবে গণ্য। অর্থাৎ রোজাদারকে রোজার সমস্ত শর্ত করণীয় জানতে হবে। এখানে গাফিলতি বা উদাসীন হয়ে থাকা মানে নিজের অজান্তেই রোজাকে অন্তঃসারশূন্য শুধুই উপবাসের পর্যায়ে নামিয়ে আনা। রোজার মাহাত্ম্য অর্জনে, আত্মার প্রশান্তি মেটাতে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটাতে তাই যথাশুদ্ধভাবে রোজা রাখায় সচেষ্ট হতে হবে সর্বস্তরের রোজাদারকে। সতর্ক থাকতে হবে, সামান্য উদাসীনতায় রোজা যেন নষ্ট না হয়, ছুটে না যায় যেন একটি রোজাও- তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা চাই এদিকে।

রমজান মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ- ‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশ্ শাহ্রা ফাল্ ইয়াসুম্হু’- অর্থাৎ যে ব্যক্তি রোজার মাসটি পাবে, তারই কর্তব্য হচ্ছে রোজা রাখা। [সুরা বাক্বারা : ১৮৫] আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনা শরিফে হিজরতের [জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে যাওয়া] আঠার মাসের মাথায় শাবান মাসে রোজা ফরজ হওয়ার এই বিধান অবতীর্ণ হয়। এ জন্যে রমজান মাসের রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমান জাতির জন্য ফরজে আইন। অর্থাৎ ঐশী বিধিবদ্ধ দায়িত্ব ও বিধান।

কারা, কোন অবস্থায় রোজার বাধ্যবাধকতা থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি পাবে কুরআন মজিদে এর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। সুরা বাক্বারার ১৮৩-১৮৪ আয়াতে আল্লাহ্র বাণী : ‘সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যাধিগ্রস্ত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্য়া- একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সৎ কাজ করে এটা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোজা রাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।’ এই অতিশয় কষ্ট বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা জানা থাকা দরকার। তা হচ্ছে- এমন কষ্ট যা শরিয়তের দৃষ্টিতে ওজর বলে গণ্য, যেমন অতি বার্ধক্য, চিরস্থায়ী রোগ ইত্যাদি। অনুরূপ রোজা রাখতে না পারায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান’ মানে একদিনের রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে দুই বেলা পেট ভরে খেতে দেয়া।

তা ছাড়া রোগগ্রস্ত ব্যক্তি বলতে বোঝাবে- যার রোগজনিত দুর্বলতা রয়েছে বলে রোজা রাখা অতীব কষ্টকর, তার জন্য ঐ মাসে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। পরে কাজা আদায় করলেই চলবে। তবে রোজা রাখায় প্রবল অসুস্থতা বা মৃত্যুর আশঙ্কা আছে, এ কথাটি কোনো মুত্তাকি ও অভিজ্ঞ চিকিৎসককে বলতে হবে। সফরে রত ব্যক্তি রোজা রাখার সুযোগ না পেলে পরে ওই রোজা আদায় করবে। গর্ভবতী মহিলার যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা হয় অথবা স্তন্যদায়ী মা যদি রোজা দ্বারা তার নিজের বা তার স্তন্য পানকারী শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে সেও এই মাসে রোজা না রেখে পরে সুবিধামতো সময়ে কাজা আদায় করতে পারে। ঋতুবতী মহিলা বা সন্তান প্রসবকারিনী নেফাছ থেকে পূর্ণ পবিত্র হওয়ার আগে রোজা রাখবে না। নাবালেগ বা যারা প্রাপ্ত বয়স্ক নয় তারা রোজা রাখার হুকুমের মধ্যে পড়ে না। অবশ্য খুশি মনে বালেগের কাছাকাছি বয়সে পৌঁছা কেউ রোজা রাখতে চাইলে ভাল অভ্যাস রপ্ত করার জন্য তাকে বাধা না দেয়া ভাল। কিন্তু জোর করে রোজা থাকতে বাধ্য করা যাবে না কোনো অক্ষম শিশুকে। কোনো মহিলা যদি রাতের বেলা হায়েজ-নেফাছ থেকে পবিত্র হয়ে থাকে, তবে পরদিনে তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। যদি পবিত্রতার গোসল নাও করে থাকে। গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় সময়াভাবে গোসল করতে না পারলেও সেহরি খাওয়া যায়। তবে নামাজ আদায়ের জন্য অবশ্যই ফরজ গোসল করতে হবে। ভুলবশত পানাহারে রোজা ভঙ্গ হয় না। অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি কানে ঢুকলে তাতে রোজা নষ্ট হবে না। তবে গোসলের সময় গলায় পানি ঢুকলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য সাবধানতা খুবই জরুরি। ধূমপান ও ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমির জন্য রোজা নষ্ট হবে। অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি হলেও রোজা নষ্ট হবে নাÑ যদি না তা পুনরায় গিলে ফেলে। রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার ও যৌনাচারে রোজা ভঙ্গ হবে। এখানে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বলা দরকার, আর তা হলো অনেক রোজাদারকে দেখা যায় ফজরের সময় (আজান) শুরু হয়েছে তখনো সেহরি খাওয়া বন্ধ করেননি। অথবা ঘুম থেকে দেরিতে ওঠে খুব তাড়াতাড়ি সেহরি খেতে গিয়ে ফজরের সময় হয়ে যায়। যদি এরকম হয় অর্থাৎ ফজরের সময় বা ফজরের আজান শুরু হওয়া সত্তে¡ও সেহরি খাওয়া চলতে থাকে তখন ওই ব্যক্তির ওই দিনের রোজাই হবে না। কিন্তু এ অবস্থায় ওই দিনের রোজা ভাঙা যাবে না। তবে ওই রোজাটি পুনরায় কাজা আদায় করতে হবে মাহে রমজানের পরবর্তী কোনো সময়ে। আরো বহু নিয়ম রয়েছে, রোজাদারকে তা জেনে নিতে হবে।

আ ব ম খোরশিদ আলম খান : সাংবাদিক ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App