×

পুরনো খবর

টাকা দিন-সেবা নিন নীতি চলে ভাটারায়

Icon

ইমরান রহমান

প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৮, ০৪:০৫ পিএম

টাকা দিন-সেবা নিন নীতি চলে ভাটারায়
একটা সময় মানুষের ধারণাই জন্মেছিল, থানায় গেলেই কারণে-অকারণে গুনতে হবে টাকা। বাস্তবে হতোও তাই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমুল পরিবর্তন এসেছে পুলিশবাহিনীতেও। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবার মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। হয়রানি বন্ধে প্রতিটি থানায় লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, দেয়া হয়েছে জিডির নতুন বই। থানার দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ব্যানার। কিন্তু এত সবের পরেও অনিয়মের বেড়াজাল থেকে বেরুতে পারেনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভাটারা থানা। যে কোনো সমস্যা নিয়ে থানায় এলেই গুণতে হচ্ছে টাকা। যেনÑ টাকা দিনÑ সেবা নিন নীতিতে চলছে ভাটারা থানা। গত ২২ মে সরেজমিন ভাটারা থানায় গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হলেও চা বিলের নামে গুনতে হচ্ছে ১০০-২০০ টাকা। অনেক সময় কারণে-অকারণে করা হচ্ছে হয়রানি। ডিপিএসের কাগজ হারানোর বিষয়ে বেলা ১২টার দিকে থানায় জিডি করতে আসেন আবদুল আলিম নামে এক ব্যক্তি। পরে তাকে বিভিন্ন কাগজপত্রের দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর তিনি সব কাগজপত্র নিয়ে এলে ইফতারের পর চা খাব জানিয়ে নেয়া হয় ১০০ টাকা। দুপুর ১টার দিকে থানার সামনে সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আলাপ করছিলেন বাবুল নামে এক লেগুনা চালক। কিছুক্ষণ পর আলাপের বিষয় জানতে চাইলে বাবুল অভিযোগ করে বলেন, দুর্ঘটনার কারণে আমার গাড়ি আটক করা হয়েছে। এখন জরিমানা বাদে পুলিশকে ১ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে গাড়ি ছাড়াতে হবে। অথচ আমার তেমন দোষ ছিল না। সাদা পোশাকে থাকা ওই পুলিশ সদস্যের নাম জানাতে পারেননি তিনি। রাত ৮টার দিকে সার্টিফিকেট হারানো বিষয়ে জিডি করতে আসেন এক শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, জিডি করে চা-নাস্তার জন্য ১০০ বা ২০০ টাকা দিতে হয়; এটা আপনিও জানেন আমিও জানি। এসব ব্যাপারে কথা বলে কোনো লাভ নেই। যার কাছ থেকে যেমনটা পারে নিয়ে নিচ্ছে। আমার কাছ থেকেও ১০০ টাকা নিছে। রাত ৯টার দিকে জিডি করতে আসা জনি আহম্মেদ নামে এক লোক জানান, তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা। অথচ থানার গেটেই সাইনবোর্ডে লেখাÑ পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ। থানার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডিউটি অফিসার এসআই মনির জিডি বা যে কোনো পরামর্শে লোক বুঝে সুযোগ পেলেই চায়ের টাকা বলে ১০০-২০০ টাকা করে নিচ্ছেন। পরে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মনির বলেন, আমি কোনো টাকা নিচ্ছি না। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তাহলে ৫০ লাখ টাকা দেব। যারা অভিযোগ করছে তারা ফালতু লোক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটারা থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, পুরো থানাটি সিসি ক্যামেরার অন্তর্ভুক্ত। আমি সবই দেখতে পাই। আমার থানায় এসব করার কোনো সুযোগ নেই। এদিকে অন্যান্য থানার মতো এই থানাটিতেও রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। জায়গার অভাবে থানার বাইরে সড়কে পার্ক করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন মামলায় জব্দকৃত গাড়ি। থানায় নেই কোনো মহিলা ও শিশু ডেস্ক। গাড়ি ও জনবল সমস্যা না থাকলেও আবাসিক সমস্যা চরম বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া অভ্যাগতদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা। জিডি করার জন্য এসে অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। থানার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যমুনা ফিউচার পার্ক, লিচুবাগান, ওলিপাড়া, কাজীপাড়া, কুড়িল, কুড়ালিটোলা, বসুন্ধরা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, ভাটারা, জগন্নাপুর, কাঁঠালদিয়া, সোলমাইদ, সূতিভোলা, খিলবাড়ীটেক, সৈয়দনগর ও মন্দির রোড এলাকা নিয়ে ভাটারা থানা গঠিত। বর্তমানে থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৩ জন এসআই, ২৭ জন এএসআই ও অর্ধশতাধিক কনস্টেবল কর্মরত রয়েছেন। থানার সার্বিক বিষয়ে ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এই থানায় মাদক মামলা বেশি হয়। আমরাও মাদককে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কিছু সমস্যা ডিএমপি সৃষ্টির পর থেকেই আছে। তবে, সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App