×

জাতীয়

আলোচনায় শতাধিক মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৮, ০৩:৪৯ পিএম

আলোচনায় শতাধিক মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম
রাজধানীসহ দেশের অলিগলিতে হরেক রকম মাদক হাতছানি দেয়ায় একযোগে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। র‌্যাব-পুলিশের এই অভিযানে প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটছে। ঊনিশ দিনের টানা অভিযানে ৪৫ জন নিহত হলেও তারা চুনোপুটি বলে চাউর রয়েছে। এখনো ধরা পড়েনি মাদকের কোনো মূলহোতা। অবশ্য মাদক ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত ‘সম্রাজ্ঞীদের ধরতে’ নেই কোনো বিশেষ অভিযান। এদের অনেকেই মাদক বিক্রির টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করেন, আছেন বহালে। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করেন বিমানে, রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট। অনেকের রয়েছে বিদেশে ব্যবসা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত তালিকায় যে ৬শ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে তাতে শতাধিক মাদক সম্রাজ্ঞীর নামও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। কোথাও ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটছে না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে অস্ত্র রয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আক্রমণ করছে। বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন বলেছেন, শ্রেণি-পেশা ও লিঙ্গ নির্বিশেষে অভিযান চলছে। নারী মাদক ব্যবসায়ীরাও ধরা পড়বে। তবে এদের ধরতে বিশেষ কোনো অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি। ডিএনসির ডিআইজি (অপারেসন্স) তৌফিক উদ্দিন আহমেদ গতকাল বুধবার ভোরের কাগজকে বলেন, নারীদের ধরতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ নারী-পুরুষ আলাদা করে দেখা হয় না। মাদক ব্যবসায়ী সব লিঙ্গের পরিচয় একই, তারা অপরাধী। নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, র‌্যাবের জনবল বেশি হওয়ায় তাদের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়। ডিএনসির তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৬শ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। প্রতি জেলার শীর্ষ ১০ মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সব সংস্থার পৃথক তালিকা থেকে সমন্বয় করে মন্ত্রণালয় ৬শ মাদক ব্যবসায়ীর নাম চূড়ান্ত করে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে। তালিকায় নারীদের নামও রয়েছে। ডিএনসি সূত্র জানায়, গত ৪ মে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলবে রোজার মাসজুড়ে। ২০১৫ সালে দেশে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার ৪০০ জন। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৩০ হাজার ১০ জনে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৬০ হাজারে দাঁড়ায়। চলতি বছরে তা আরো বেড়েছে। এর মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজা ব্যবসায়ী রয়েছে। সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় হেরোইন ও গাঁজা ব্যবসায় জড়িতরাও এখন ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকেছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা ও ডিএনসি সূত্র জানায়, রাজধানীতে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে প্রায় অর্ধশত নারী পরিচিত। তারা হলেনÑ মিরপুরে জেসমিন ও ফাতেমা, তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগে পারভীন, গুলশানে মৌ, মহাখালীতে জাকিয়া ওরফে ইভা ও রওশন আরা বানু, মহাখালী সাততলা বস্তিতে সীমা, বনানীতে আইরিন ওরফে ইভা, কড়াইল বস্তিতে রীনা, বারিধারায় নাদিয়া ও যূথী, উত্তরায় গুলবাহার ও মুক্তা, বাড্ডায় সুমি, রামপুরায় সীমা ও শিলা, ভাটারায় পাতা বাবুর মা ও ফুপু, লালবাগে মনোয়ারা, ইসলামবাগে ছাফি, জোসনা ও বিউটি, আনন্দবাজার বস্তিতে বানু, গণকটুলিতে মনেয়ারা বেগম ও নাছিমা, শ্যামপুরে ফজিলা, রানী বেগম ও পারুলী, পাইন্না সর্দার বস্তিতে রেনু, নিমতলী বস্তিতে সাবিনা ও পারুল, হাজারীবাগে স্বপ্না, কলাবাগানে ফারহানা ইসলাম তুলি, শাজাহানপুরে মুক্তা ও চানখাঁরপুলে পারুল, নিকিতা, রিতা, কুলসুম, রুবি, ম্যানিলা, ডালিয়া, স্বপ্না, মনোয়ারা, মাহমুদা রানি, সুমাইয়া সুলতানা রিয়া, বিউটি চৌধুরী, পিয়ারা বেগম, রাবেয়া, পারভীন আক্তার বেবী, রিনা বেগম, জানু বেগম, চট্টগ্রাম অঞ্চলে সানজিদা, রোজিনা, আয়েশা বেগম, রাজিয়া, দেলোয়ারা বেগম (মিয়ানমার নাগরিক), রাশতী, সাদিয়া, ইকরা চৌধুরী, জোসনা, জিডি নাতাশা, নেহা, পরি, ফারজানা, রাজশাহী অঞ্চলে রুবিনা বেগম, সায়লা রহমান মিমি, হাসিনা, ফরিদা বেগম, নওগায় শাহীনা বেগম, ভোলা চরফ্যাশনে ফাতেমা, পিরোজপুরে সাদিয়া আফরোজা দোলা, রংপুরে এহসেনারা বেগম, আমেনা খাতুন, কুড়িগ্রামে নাসরিন বেগম ময়না, সিরাজগঞ্জে হোসনে আরা, সাভারে পারভীন, কেরানীগঞ্জে জাহানারা, জুলি আক্তার, শাহীনা, নারায়ণগঞ্জে ফিরোজা বেগম, শিউলী ও আকলিমা অন্যতম। এরা সবাই ধনাঢ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অনেকেই একাধিকবার আটক হলেও আদালতের মাধ্যমে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের মাদক ব্যবসায় জড়িয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App