×

জাতীয়

উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুঁড়ি দ্রুত ভরাটের গরজ নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৮, ০৩:৪৫ পিএম

উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুঁড়ি দ্রুত ভরাটের গরজ নেই
বছরখানেক ধরে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। দুদিন চলে, তো বন্ধ থাকে ৩ দিন। বৃষ্টি হলে এ মেয়াদ আরো বাড়ে। গাড়ি কিংবা রিকশা দিয়ে যাতায়াত করা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলেরও উপায় নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকল্প পথে চলতে হচ্ছে পথচারীদের। বিভিন্ন অলি-গলি বেঁছে নিতে হয় এলাকাবাসীকে। সেগুলোরও অবস্থা খারাপ। উন্নয়ন কাজের জন্য চলছে রাস্তার খুঁড়োখুঁড়ির কাজ। আবহাওয়া শুষ্ক হলে ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন, আর সামান্য বৃষ্টি হলে পুরো এলাকা হয় জল-কাদায় একাকার। এ বর্ণনা ঢাকার বাসাবো টেম্পোস্ট্যান্ড থেকে মাদারটেক চৌরাস্তা পযন্ত মূল সড়কটির। প্রায় ১০ মাস ধরে চলছে রাস্তাটি সংস্কারের কাজ। পাইপ বসানোর জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে বড় বড় গর্ত। কাজ আর শেষ হয় না। এলাকাবাসীর ধারণা, ঠিকমতো কাজ করলে এই সড়কটি সম্পূর্ণ ঠিক হতে সময় লাগত ২০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ মাস। শুধু এই সড়কটিই নয়, বাসাবো, মাদাটেক, নন্দীপাড়া, মুগদা, মাÐা, প্রজেক্ট, বাগানবাড়ী, কদমতলা, মানিকনগরসহ প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু কোনোটিই নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ হয় না। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তারা ঠিকমতো অফিস-আদালত, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে পারছেন না। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভিন্ন পথ বেঁছে নিতে হচ্ছে তাদের। মাদারটেকের বাগানবাড়ীর বাসিন্দা মোস্তফা ইসলাম শুভ। সরকারি তিতুমীর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সবসময় মাদারটেক চৌরাস্তা দিয়ে বাসাবো বিশ^রোড হয়ে বাসে উঠে কলেজে যাতায়াত করতেন। কিন্তু রাস্তাটি খুঁড়ে রাখায় এই পথ দিয়ে চলাচল করা এক প্রকার বন্ধই করে দিয়েছেন এই শিক্ষার্থী। এখন ভিন্ন রাস্তা দিয়ে কলেজে যাতায়াত করেন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমরা সবসময় চৌরাস্তা থেকে বাসাবো সড়কটিই ব্যবহার করে থাকি। এই পথ দিয়েই চলাচল করেন এই এলাকার মানুষ। কিন্তু গত প্রায় ১০ মাস ধরে মূল সড়কটি সংস্কারের নামে বড় বড় গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। আবহাওয়া শুষ্ক হলে ধুলোবালি আর বৃষ্টি হলে কাদামাটি। পরিস্কার কাপড়-চোপড় গাঁয়ে দিলে, খুব তাড়াতাড়ি নোংরা হয়ে যায়। তাই ৪/৫ মাস ধরে বিকল্প রাস্তা অর্থাৎ বনশ্রী ও প্রজেক্ট হয়ে রামপুরা ব্রিজ সড়ক দিয়ে কলেজে যাতায়াত করি। তার অভিযোগ, একটি রাস্তার কাজ শেষ হতে এত সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু কেন ১০ মাস লেগে যাচ্ছে? সেটা কি দেখার কেউ নেই। একই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন, ওয়াদুদ রহমান, সোহাগ হোসেন, আশরাফুল আলম, শাহরিয়ার, সাইফুল ইসলামসহ আরো বেশ কয়েকজনের। তাদের প্রত্যেকের দাবি অতিদ্রæত রাস্তাটির সংস্কার সম্পন্ন ও যাতায়াত উপযোগী করা হোক। বাসাবো টেম্পোস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের অভিযোগ। প্রায় ১০ মাস ধরে কাজ চললেও, ৩ মাস ধরে পুরো রাস্তাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মানুষ এখন এ পথ দিয়ে চলাচল করতে ভয় পায়। বৃষ্টি হলে গর্তগুলো ভরাট হয়ে আশপাশের পুরো এলাকা পানিতে ডুবে যায়। রাস্তা ঘাট কাঁদা-মাটিতে ভরে যায়। ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকগুলো খুব ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। সারাদিনে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সবমিলিয়ে আমরা আছি এক অসহনীয় যন্ত্রণায়। শুধু মাদারটেক বা তার আশপাশ এলাকায় নয়। রাস্তা খুঁড়োখুড়ির কাজ চলছে রাজধানী জুড়েই। কোনো কাজই সময়মতো শেষ হচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় পাইপ বসানো বা ড্রেনেজের কাজ ২ মাস আগে শেষ হলেও, তা পিচঢালাই করা হয়নি। বৃষ্টি হলেই তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসের পর মাস রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে রাজধানীর কাফরুল, মিরপুর, পল্লবী, খিলগাঁও চৌধুরী পাড়া, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, মতিঝিল, রাজারবাগ, কমলাপুর, আরামবাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা, কাটাবন, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মগবাজার, সিদ্বেশ^রী, পল্টন, পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা। কোনো কোনো এলাকার মূলসড়ক চলাচল উপযোগী থাকলেও ভেতরের অলি-গলির অবস্থা খারাপ। সংস্কারের জন্য রাস্তাগুলোতে খোঁড়াখুঁড়ি করা হলেও ওই অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। এতে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মনিপুরী পাড়া সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। মেট্রোরেলের কাজ চলায় রাস্তার একপাশের বড় একটি অংশ বন্ধ রয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলে সময়ও লাগে প্রচুর। মিরপুর থেকে প্রেসক্লাবমুখী যানবাহনগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনমুখী প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলছে সংস্কার কাজ। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলোতেও থেমে থেমে কাজ করায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কমলাপুরমুখী মানুষকে এসব ভোগান্তি পেরিয়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে আছে শাহজাহানপুর মোড় থেকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও ফকিরাপুলমুখী মূল সড়কটির এক পাশ। পাইপ বসানোর কাজ ২ মাস আগে শেষ হলেও এখনো ঢালাই করা হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী আলী আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঠিকাদাররা প্রভাবশালী। যারা কাজ নিয়েছেন, আমরা দ্রæত শেষ করতে তাদের তাগিদ দিয়ে আসছি। মেয়রও তাদের বারবার বলে আসছেন। এরই মধ্যে আমরা অনেক ঠিকাদারকে জরিমানা করেছি। অর্ডার বাতিল করেছি। অর্থবছরও শেষ হয়ে আসছে। যারা কাজ করছেন, তারা নানা অজুুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ রাখছেন। আমরাও কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যারা সময়মতো কাজ শেষ করতে পারবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App