×

জাতীয়

বন্ধ হয়নি মাদকের বিকিকিনি হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ০২:৫৭ পিএম

বন্ধ হয়নি মাদকের বিকিকিনি হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা
সারা দেশে একযোগে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চলমান এ অভিযানে গত সাত দিনে বন্দুকযুদ্ধে ১৮ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার এবং কয়েক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার ও বিপুল পরিমাণ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু তাতেও বন্ধ হয়নি মাদকের খুচরা বিকিকিনি। বিশেষ করে ইয়াবা সেবনকারীরা এখনো নেশায় বুঁদ হয়ে ছুটছে এর পেছনে। এখনো অনেক স্থানে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী গতকাল সোমবার দুপুরে তার কার্যালয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান সব সময় চলে আসছে। মাদক ব্যবসায়ীরা অনেক সুযোগ পেয়েও সংশোধন হয়নি। সমাজ তথা দেশকে রক্ষার জন্য অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাদক সমস্যা জঙ্গি সমস্যার মতোই। সরকার জঙ্গি দমনে যেমন সফল হয়েছে তেমনিভাবে মাদক নির্মূলেও সক্ষম হবে। চলমান অভিযানে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, সব ধরনের মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা হবে। মাদকের ডিলার, গডফাদার ও চোরাচালানি থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী এমনকি সেবনকারীদেরও ছাড় দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে উল্লেখ করে ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, দেশের স্বার্থে সবাইকে মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করতে হবে। তথ্য দিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। এদিকে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ স্পষ্ট করে বলেছেন, অভিযান জোরদারের আগে মাদক ব্যবসায়ীদের সুপথে ফিরতে ঘোষণা দিয়ে আহŸান জানানো হয়েছিল। তারা তাতে সাড়া দেয়নি। মাদক নির্মূলে র‌্যাব যে অভিযানে নেমেছে এতে এরই মধ্যে জনসন্তুষ্টি মিলতে শুরু করেছে। অভিভাবক মহলে ফিরে এসেছে স্বস্তি। অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবশ্য সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল গতকাল অভিযানের ধরন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মাদক দমন অভিযানে যেভাবে বন্দুকযুদ্ধের খবর আসছে তা কোনো সমাধানের পথ নয়। তিনি এমন অভিযান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিচারের নামে মানুষ হত্যা করা হোক, তা চায় না বিএনপি। সূত্র মতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা মাদক চোরাচালানিদের আলাদা তালিকা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এলাকাভিত্তিক ব্যবসায়ীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকায় সহ¯্রাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নাম আছে। অবশ্য গত ডিসেম্ব^রে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেয়া ডিএনসির তালিকায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে ১৪১ জনের তথ্য দেয়া হয়। সব সংস্থার তথ্য নিয়ে সারা দেশের মাদক চোরাচালানিদের সমন্বিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যমান সব তালিকায় দুই শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। সরকারের একটি সংস্থা এরই মধ্যে কারা সড়ক ও আকাশ পথে ঘন ঘন কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে আসছে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের এসব সদস্য ইয়াবার চালান হাতবদলে জড়িত বলে তথ্য রয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে। সূত্র মতে, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ১৪ দিনে ৩ হাজারের কাছাকাছি মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এত কিছুর পরও রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার পৌর এলাকার বেদেপাড়া, গেÐা, কাতলাপুর, সিরামিকস বাজার, ধামরাই এবং জেলা শহর মানিকগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও রাজশাহীর বিভিন্ন স্পটে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে হরদম। ইয়াবার উৎস হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার চোরাচালানিরা এখনো অধরা থাকায় তাদের নেটওয়ার্ক এখনো সচল রয়েছে। ওই সব এলাকার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম ইয়াবা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়লেও অভিযানের পরও তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকার ইয়াবার মধ্যে গতকাল সোমবার গাঢ় লাল রংয়ের ‘চম্পা’ প্রতি পিস খুচরা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। টেকনাফে এটি কেনা হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। হালকা গোলাপি রংয়ের ‘আর সেভেন’ ইয়াবার দাম সবচেয়ে বেশি। এটি ঢাকায় কমপক্ষে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হালকা গোলাপি রংয়ের আরেক ধরনের ইয়াবার নাম ‘জেপি’। এর খুচরা মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ‘ডগ’ নামের মাটি রংয়ের প্রতিটি ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে আরেক ধরনের ভেজাল ইয়াবা। এগুলো ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যায়। ইয়াবা পিলের গায়ে ইংরেজি ডবিøউ ওয়াই (ডণ) লেখা থাকে। ওয়াই (ণ) লেখার ধরন দীর্ঘ হলে এবং ইয়াবার রং পুরোপুরি গোলাপি হলে তা ভালোমানের বলে বিবেচ্য হয়। র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের একাধিক সদস্য জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা হাতবদলের কৌশল বারবার বদল করে আসছে। মোবাইল ফোনের বিকাশে টাকা লেনদেন হচ্ছে। নির্ধারিত স্থানে ‘ইয়াবা ভর্তি প্যাকেট’ ফেলে রাখা হচ্ছে। সেবনকারী তা সংগ্রহ করে নিচ্ছে। তরুণী, হকার ও নানা বয়সী মানুষকে এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ইয়াবার চালান বাজারে রয়েছে তা সেবনকারীদের চাহিদার কয়েক গুণ। গত এক সপ্তাহে সীমান্তে পথে আসা বড় ধরনের কোনো ইয়াবার চালান হাতবদল হয়নি দাবি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, খুচরা বিক্রেতাদের মজুদ কমে আসছে। ফলে এর বহিঃপ্রকাশ মিলতে শুরু করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App