×

মুক্তচিন্তা

পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ০৬:২৯ পিএম

নগরীর বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের কর্মজীবী মানুষ, যারা দারিদ্র্যের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসে বাধ্য হয়, তাদের জন্য স্বল্পব্যয়ের নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হওয়া উচিত নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের। আর পাহাড়ধস ঠেকাতে পাহাড় দখল, পাহাড় কাটা, পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি রোধ করার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ করা যাচ্ছে না। এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ১১টি পাহাড়ে বসবাস করছেন ৬৬৬ পরিবার। এ ছাড়া ছোট-বড় ৩০টি পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাস করছেন পাঁচ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক সদস্য। যে কোনো সময় ঝড়বৃষ্টি বা অন্য যে কোনো কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে এ ক্ষেত্রে। এ বছর অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ দিকে নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মনোযোগ দেয়া জরুরি।

বর্ষাকাল এলে প্রতি বছর প্রশাসনের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে মিটিং, মাইকিং ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতির কিছু লোককে সরিয়ে নিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার মধ্য দিয়ে সীমাবদ্ধ থাকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। বছরের অন্য সময়ে এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা থাকে না প্রশাসনের। গত রবিবার নগরীর আকবর শাহ থানার রেলওয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এ সময় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই ধরনের অভিযান আমরা আগেও দেখেছি। এই ধরনের অভিযান স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারে না। যারা পাহাড় দখল করে বা পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি নির্মাণ করে ফায়দা লুটছে এবং নিম্নআয়ের মানুষদের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন? চট্টগ্রামে গত ১০ বছরে নগরী ও তার আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় ও দেয়ালধসের ঘটনায় মারা গেছেন ২৫০ জনের অধিক। ২০১৫ সালে পাহাড় ধসে ঘুমন্ত অবস্থায় জীবন্ত সমাধি হয়েছিল শতাধিক শিশু-নারী ও পুরুষের। এর আগে ২০০৭ সালে পাহাড়ধসে ১২৯ জনের প্রাণহানি হয়। ২০১৫ সালের ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল জাতির বিবেক। দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছিল সরকার ও প্রশাসনের সব পর্যায়ে। যথারীতি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সেই কমিটি পাহাড়ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি অনুরূপ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ৩৬ দফা সুপারিশও পেশ করেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট। এসব সুপারিশ আজো কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা আমরা জানি না।

বর্ষাকাল পাহাড়ধসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সময়। অথচ এ মৌসুমে এখনো পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার কোনো তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। আমরা চাই অবিলম্বে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়া হোক। তবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে মৌসুমি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া কোনো টেকসই ফল দেবে না এটা বলাই বাহুল্য। নগরীর বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের কর্মজীবী মানুষ, যারা দারিদ্র্যের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসে বাধ্য হয়, তাদের জন্য স্বল্পব্যয়ের নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হওয়া উচিত নগর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের। আর পাহাড়ধস ঠেকাতে পাহাড় দখল, পাহাড় কাটা, পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি রোধ করার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। অপরাধীরা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের ছাড় দেয়া যাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App