×

জাতীয়

দর কষাকষিতে ঝুলে আছে বিএনপির জোট সম্প্রসারণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম

দর কষাকষিতে ঝুলে আছে বিএনপির জোট সম্প্রসারণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোটের বাইরে থাকা ‘উদারপন্থি’ হিসেবে পরিচিত দলগুলোকে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের আদলে নির্বাচনী জোট গড়তে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু অনেকটা গুছিয়ে এনেও দুপক্ষে লেনদেনের দর কষাকষিতে থমকে গেছে এ জোট গঠনের প্রক্রিয়া। ছোট ছোট দলের বড় বড় নেতাদের প্রত্যাশার সঙ্গে নিজেদের সামর্থ্যরে হিসাবটা ঠিক মেলাতে পারছে না বিএনপি। এতে নাখোশ হয়েছেন ওই ‘বড়’ নেতারা। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতেই তাদের লক্ষ্য করে ভদ্র ভাষায় আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি ওই নেতারা বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সরকারের সঙ্গে জোট গঠনের নতুন পরিকল্পনা করছেন বলেও চাউর রয়েছে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নিজেদের আরো শক্তিশালী করে ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়তে কয়েকটি উদারপন্থি দলের নেতাদের নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার কথা ভাবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শটি বিএনপি সমর্থক সুশীল সমাজের তরফ থেকেই আসে খালেদা জিয়ার কাছে। ওই পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েই কারাগারে যাওয়ার দুদিন আগে দলের নির্বাহী কমিটির সভায় ‘জাতীয় ঐক্যের ডাক’ দিয়েছিলেন বিএনপিপ্রধান। অবশ্য বিএনপি জোট সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দলের পক্ষ থেকে তৎপরতা শুরু হয় বছরখানেক আগে। যেসব দলকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার কথা ভাবেন সে দলগুলো হলো, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। আর দুপক্ষের ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে মধ্যস্থতা করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভোরের কাগজে বলেন, নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন দিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের কথা আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি। উদারপন্থি দলগুলো বিএনপির সঙ্গে থাকলে লাভ। কারণ এতে তারা সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবে। অন্যদিকে তাদের সঙ্গে নিলে বিএনপিরও শক্তি বাড়বে। একটি ভালো পার্লামেন্ট হলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে। তিনি বলেন, ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ায় ‘ডাইমেনশন’ থাকবেই। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু একটা তো হবেই। সূত্র জানায়, এসব দলের প্রধান নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে বিএনপি। এমনকি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দুদফা বৈঠক হয়েছে তাদের। এসব বৈঠকে সম্ভাব্য ওই জোটে নতুন শরিক হওয়া দলগুলোকে ২৫ থেকে ৩০টি আসন ছেড়ে দেয়ার কথাও বলে বিএনপি। এসব কথায় আশ্বস্ত হয়ে বিএনপির সব ধরনের কর্মকাÐে অংশ নেয়া থেকে শুরু করে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন তারা। কিন্তু এক পর্যায়ে তাদের আবদারের ফিরিস্তি দীর্ঘ হতে থাকে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চেয়ারপারসনের জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়ার ঘটনাই ইঙ্গিত দেয়, তিনি সব দলকে নিয়ে সরকারবিরোধী ঐক্য চান। এটা এই মুহূর্তে জরুরিও। তবে নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়টি নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তখন হয়তো স্পষ্ট হবে। জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে গুলশানে এক হোটেলে বৈঠকে বসেন কথিত উদারপন্থি দলের নেতারা। সেখানে কথাবার্তার ফাঁকে তাদের পুরনো চাওয়ার সঙ্গে যোগ হয় নতুন কিছু প্রত্যাশা। এর মধ্যে কেউ চান ক্ষমতায় গেলে প্রেসিডেন্ট হতে, কেউবা প্রধানমন্ত্রী। কেউ কেউ আবার পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের আবদার করে বসেন। আবার কেউ বা বিশেষ সুবিধা চান ব্যবসা-বাণিজ্যের। এসব কারণে বিএনপিকেও আপাতত চুপ থাকতে হচ্ছে। আর বিপত্তি সেখানেই। এরপর থেকেই বিএনপিকে অনেকটা এড়িয়ে চলছেন ওই নেতারা। এমনকি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে অন্য নেতাদের সামনেই ভদ্র ভাষায় হুমকিও দিচ্ছেন। গত ১৯ মে রাজধনীর লেডিস ক্লাবে রাজনৈতিকদের সম্মানে বিএনপির আয়োজিত ইফতার মাহফিলে আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বেশ কিছু নেতা আসেন আমন্ত্রিত হয়ে। ‘সৌজন্যের’ খাতিরে তারা অনুষ্ঠানে এলেও বি চৌধুরী ছাড়া কেউ মঞ্চে উঠেননি। এমনকি মির্জা ফখরুল প্রতিটি টেবিলে গিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাদের হাত ধরে মঞ্চে আসার আমন্ত্রণ জানান। কাদের সিদ্দিকীর টেবিলে গিয়ে মহাসচিব তাকে হাত ধরে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানালে তিনি দুই হাত মিলিয়ে ‘না’ বলেন এবং মৃদু হাসি দেন। বিষয়টি উপস্থিত বিএনপির কোনো নেতারই নজর এড়ায়নি। অনেকে বলেই ফেলেন, মহাসচিব হাত ধরে অনুরোধ করার পরও তাকে ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি কাদের সিদ্দিকীর। ইফতারের আগে নিজের বক্তব্য শেষে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বক্তব্য দেবেনÑ এমন ঘোষণা দিয়ে মাইক ছেড়ে দেন মির্জা ফখরুল। বক্তব্যের শুরুতেই বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বিএনপির কর্মীদের ভয়ে বুক কাঁপে। কাঁপবে না কেন? যদি আবারো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তাদের কী হবে, এই শঙ্কা তো স্বাভাবিক। কারণ অভিজ্ঞতা বলে অবস্থা ভালো হবে না। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে হতাশা ব্যক্ত করেন এবং দেশ রক্ষায় নতুন শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন বি চৌধুরী। তার এমন বক্তব্যে বিএনপির নেতারা হতভম্ব হয়ে যান। এ সময় দলটির অনেক সিনিয়র নেতাকেই মাথা নিচু করে থাকতে দেখা যায়। উপস্থিত জোটের অনেক নেতাই এ সময় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। এমনকি ইফতার শেষে এ নিয়ে বিএনপির নেতারা নিজেদের মধ্যেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, বিএনপির যেমন উদারপন্থি দলগুলোকে দরকার, ওদেরও বিএনপিকে দরকার। শক্ত কোনো দলের সঙ্গে জোটে না থাকলে ভোটের মাঠে তাদের কদর নেই। ঠিক তেমনি তারা গুরুত্বপূর্ণ ধরেই তাদের বিএনপিরও দরকার আছে। পারস্পরিক স্বার্থেই একে অন্যকে দরকার। তা ছাড়া তারা বিএনপির সঙ্গে থাকলে সেটা তাদের জন্য ইতিবাচক হবে আগামীতে। বিএনপি যদি তাদের আসন ঠিক করে দেয় তবেই তাদের পক্ষে জয় নিশ্চিত করা সহজ হবে। তবে বর্তমানে উদারপন্থি নেতাদের মনোভাব দেখে ঐক্য প্রক্রিয়া আসলে কত দূর এগোবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ বিষয়ে মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলে জেএসডি সভাপতি আ স ম রব ও নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির হয়তো আগ্রহ আছে, আলোচানও হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে মতামত দেয়ার সময় এখনো আসেনি। সবকিছু ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App