×

জাতীয়

একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী বড় দুই জোটেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম

একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী বড় দুই জোটেই
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতৃত্বাধীন বড় দুই জোটেই মনোনয়ন নিয়ে টানাপড়েন চলছে যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনে। মনোনয়ন পাওয়ার আশায় অনেকে জোর তদবিরসহ প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জনসমর্থন আদায়ে মাঠ পর্যায়ে সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নামে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকের মাধ্যমে নিজ নিজ নেতাদের পক্ষে জনগণের সমর্থন ও দোয়া কামনা করে যাচ্ছেন। আর নেতারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। প্রচারণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শীর্ষে। তবে দলটিতে রয়েছে চরম কোন্দল। আর বিএনপিতেও একই অবস্থা। ফলে কোন্দলের কারণে দুই উপজেলাতেই দলগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে থাকে। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যাও গেছে বেড়ে। জোট-মহাজোটের প্রার্থী হতে পুরনোদের পাশাপাশি একাধিক নতুন মুখ তদবির-লবিং-গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তা ছাড়া মহাজোটের হিসাব-নিকাশও করতে হচ্ছে এ দলটিকে। এবার মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে এ আসন ভাগাভাগির বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। সৃষ্টি হয়েছে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা। অন্যদিকে বিএনপিতেও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে দলটির জন্য সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের নামে একাধিক মামলা এবং একজন বহিষ্কৃত নেতার প্রভাব ও তার ভূমিকা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের রণজিৎ কুমার রায়। গত মেয়াদেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় বর্তমানে কারাবন্দি আমজাদ রাজাকারকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন। যশোর-৪ নির্বাচনী এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনগণ, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। তবে আগামীতেও মনোনয়নের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী রণজিৎ কুমার রায়। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, হাজার বছরের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমাণে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যত উন্নয়ন হয়েছে, এমন উন্নয়ন বিগত কোনো সরকারের আমলে সম্ভব হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় আমার নির্বাচনী এলাকায় এ পর্যন্ত যত উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত কোনো সংসদ সদস্যের সময় হয়নি। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তারপর দুবার এমপি হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সেবা করছেন তিনি, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। রণজিৎ কুমার রায় অনুসারী নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রণজিৎ রায় এ নির্বাচনী এলাকায় একাধিক ব্রিজ, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ বিভিন্ন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এসব বিবেচনায় দল আগামীতেও রণজিৎ কুমার রায়কে মনোনয়ন দেবে। তিন লাখ ৭৫ হাজার ৩০১ জন ভোটার অধ্যুষিত এ আসন পরিচিত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে। গত ১০ বারের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন মোট সাতবার। জোটের শরিকরা বিজয়ী হয়েছেন মাত্র তিনবার। এমন প্রেক্ষাপটে সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাবের অনুসারীরা মনে করেন দলীয় মনোনয়ন শেখ ওহাবকেই দেয়া উচিত অন্য কাউকে নয়। এদিকে ক্লিন ইমেজের কারণে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র এনামুল হক বাবুলের ব্যাপারেও ভোটারদের আগ্রহ রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাঘারপাড়ার নাজমুল ইসলাম কাজলেরও নিজের এলাকায় বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক এস এম আলমগীর হাসান রাজিব, বাঘারপাড়ার রায়পুর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমজাদ হোসেনও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই তাদের অনুসারীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা নাজমুল ইসলাম কাজল বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জনের জন্য রাজনীতি করি না। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মাঠে আছি। নিয়মিত দলীয় কর্মকাÐে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। এসব বিবেচনায় দল তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক এস এম আলমগীর হাসান রাজিব বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ নির্বাচনী এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে আসছেন। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ এগিয়ে নিতে তিনি প্রার্থী হতে চান। এদিকে জোটগত নির্বাচনে মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি এবার আওয়ামী লীগের কাছে এ আসনটি চাইবে বলে জানা গেছে। গত নির্বাচনে খুলনা বিভাগের নড়াইল ও সাতক্ষীরার দুটি আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা। এবার দলটি যশোর-৪ আসনকে টার্গেট করেও তৎপরতা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সম্মতি মিললে সে ক্ষেত্রে এ আসনে প্রার্থী হবেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা মনে করেন, এ আসনের দুই উপজেলাতেই তাদের সাংগঠনিক ভিত মজবুত। ভবদহ ও কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনসহ জনমানুষের বিভিন্ন সংকট নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে তারা এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে অবস্থান করে নিয়েছেন। তাই তাদের দল থেকে মহাজোটের প্রার্থী হলে বিজয় সহজ হবে। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা থাকায় নির্বাচনী তৎপরতায় তারা বেশ পিছিয়েই রয়েছেন। ২০০৯ সালের পর এখানে বিএনপির আর কোনো সম্মেলন হয়নি। অভয়নগরে সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী ও সাবেক উপজেলা সভাপতি নূরুল হক মোল্লার দুটি পৃথক গ্রæপ রয়েছে। দলীয় কর্মসূচি তারা পৃথকভাবে পালন করে থাকেন। একই অবস্থা বাঘারপাড়াতেও। সেখানে দলীয় কার্যালয় দখল নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে একাধিকবার। এরই মধ্যে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেনÑ দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও বিএনপির অভয়নগর উপজেলা সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকী এবং বাঘারপাড়ার বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ছিলেন আইয়ুব। নির্বাচনে তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এবারো তিনি মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। অনেকেই বলছেন, এ আসনে বিএনপি থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুবের প্রার্থী হওয়া মোটামুটি চ‚ড়ান্ত। তবে জয়ের পথ মসৃণ নয় তার। পথের কাঁটা, তরিকুলপন্থি হিসেবে পরিচিত বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করার পর সংকট আরো বেড়েছে বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এর প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনেও। এ আসনে একসময় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিরও বেশ আধিপত্য ছিল। তবে কয়েক ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর দুর্বল হয়ে পড়েছে এ দল। তারপরও এ দল থেকে তিনজন মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তারা হলেনÑ জাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও অভয়নগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) এম শাব্বির আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম জহির ও অভয়নগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহ আশরাফুজ্জামান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App