×

মুক্তচিন্তা

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ নয় প্রয়োজন প্রত্যাবর্তন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ০৭:১৮ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি হিসেবে বিবেচিত আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকেপড়া এ সব রাজনীতিকের কেউ কেউ নাম-নিশানাহীন হয়ে পড়েছেন, আবার অনেকে দলবিচ্ছিন্ন হয়েও নিজের শুচিশুদ্ধ গুণে রাজনীতির মাঠে কোনোরকম টিকে আছেন। তারা দেশ ও জনসেবায় নিজেকে এখনো সম্পৃক্ত করার স্বপ্ন দেখেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে এগিয়ে যান তাদের ব্যাপারে নমনীয় হলে আওয়ামী লীগ বেশ উপকৃতই হবে।

আমাদের সময়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও দৃষ্টিশক্তি আটকে গিয়েছিল সেখানে। চারজন রাজনীতিকের ছবি সংবলিত পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনটি শুধু আমাকেই নয়, অজস্র পাঠকের পত্রিকাপড়ুয়া মননে জুগিয়েছে বাড়তি প্রেরণা। নির্বাচনমুখী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কত সংবাদই প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকার পাতা ভরে। তবে এ খবরটি অন্য সব খবরের চেয়ে ভিন্ন রকম আগ্রহ ও তুষ্টিদায়ক বার্তা বহন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ‘অবশেষে তাদেরও কাছে টানছে আওয়ামী লীগ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে চারজনের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি সাবেক এমপি কাদের সিদ্দিকী অন্যতম। মতবিরোধ ও ভুল বোঝাবুঝিতে তারা আওয়ামী রাজনীতি থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্ন হলেও কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের বনিবনা ছিল না এটা বাস্তবতার নিরিখে সম্পূর্ণ সঠিক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনাকে তারা নিজেদের অস্তিত্বে লালন করে চলেছেন এবং জাতির জনকের ত্যাগ, বীরত্ব ও পরিশ্রমের ফসল উপমহাদেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রহর গুনছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে হয়তো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আজকের আওয়ামী লীগ সকল ঘাত-প্রতিঘাত ভুলে বঙ্গবন্ধুবাদী স্বচ্ছ চারিত্রিক গুণাবলি সমৃদ্ধ এই মানুষগুলোকে এক ছাতার নিচে দাঁড় করানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বৈকি। এতে করে আওয়ামী লীগের চলতি রাজনীতি আরো পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে যাবে। মানুষ গ্রহণ করবে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের স্বাদ। দল ও দেশের কল্যাণে আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য বটে।

আওয়ামী রাজনীতি দেশে অনেক প্রজ্ঞাবান ও প্রথিতযশা রাজনীতিকের জন্ম দিয়েছে। এদের অনেকেই আওয়ামী লীগের হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পেরেছেন কিংবা কাজ করে যাচ্ছেন আবার কেউ যে কোনো কারণে সেই রাজনৈতিক ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হয়তো দলীয় স্বার্থহানিকর ব্যাপারে এদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি হিসেবে বিবেচিত আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকেপড়া এ সব রাজনীতিকের কেউ কেউ নাম-নিশানাহীন হয়ে পড়েছেন, আবার অনেকে দলবিচ্ছিন্ন হয়েও নিজের শুচিশুদ্ধ গুণে রাজনীতির মাঠে কোনোরকম টিকে আছেন। তারা দেশ ও জনসেবায় নিজেকে এখনো সম্পৃক্ত করার স্বপ্ন দেখেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে এগিয়ে যান তাদের ব্যাপারে নমনীয় হলে আওয়ামী লীগ বেশ উপকৃতই হবে।

ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা সুলতান মুহম্মদ মনসুর ও বঙ্গবন্ধুর সন্তানতুল্য কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সংবাদ আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। অন্য দুজনের নাম যতটা না স্পর্শ করতে পেরেছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আকর্ষণ করেছে সুলতান মনসুর ও কাদের সিদ্দিকীর নাম। সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগ থেকে পদচ্যুত হয়েছেন কিন্তু থেকেছেন ধ্যানমগ্ন। বঙ্গবন্ধু ধ্যানে বিভোর মানুষটিকে কখনো বিদ্বেষপূর্ণ কোনো কথা বলতে শুনিনি। কিছু মানুষের জীবনে এমন সব সত্য আছে যেগুলো পর্দার ভাঁজেই নিঃশব্দ লুকিয়ে থাকে। সুলতান মুহম্মদ মনসুরের বেলায়ও এমনটা খুঁজে পাওয়া যায়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার নারকীয় তাণ্ডবের পর অনেকেই নীরব ভ‚মিকা পালন করলেও সুলতান মনসুর ছিলেন ব্যতিক্রম। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানাতে অস্ত্র হাতে ফের যুদ্ধ ঘোষণা করা কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে সেই যুদ্ধে যুক্ত হন আওয়ামী লীগে অবাঞ্ছিত মনসুর। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুকে যিনি এতটা ভালোবাসতেন তিনি আজ আওয়ামী লীগ ছাড়া। বরং তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যারা ঢাকঢোল পিটিয়েছিল তারাই আজ সবচেয়ে বড় আওয়ামী লীগপ্রেমী। তাই মনে প্রশ্ন জাগে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল সুলতান মনসুরের মতো মহৎ মানুষের বর্তমান আওয়ামী লীগে কি প্রয়োজন নেই? অবশ্যই প্রয়োজন আছে। সুলতান মনসুরের মতো মানুষগুলোকে দলে টেনে নিলে উপকৃত হবে আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধুর আরেক আদর্শ ভক্ত কাদের সিদ্দিকীর কথা বলতে হয়। তাকে সরাসরি দেখিনি। তবে টকশোর টেবিল টেলিভিশনের পর্দায় সশরীরে কথা বলতে শুনেছি। পঁচাত্তরে স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলে একাই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পিতা হারানোর মর্মন্তুদ বেদনা সহ্য করতে না পেরে তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে আবারো হাতে নেন যুদ্ধাস্ত্র। ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় আস্তানা গেড়ে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি প্রথমবার একাত্তরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে প্রাণবিনাশী কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার পঁচাত্তরে স্বাধীন দেশের স্থপতি জাতির জনকের হত্যা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর হন্তারক দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে গর্জে দাঁড়ান তিনি। মুক্তিযুদ্ধে শত্রুবাহিনী ও মুক্তির মহাকবি বঙ্গবন্ধু হত্যাবিরোধী দুই যুদ্ধেই শতভাগ সফল হয়েছিলেন এই বঙ্গশার্দুল। দেশপ্রেমে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বঙ্গবন্ধুবাদী বাঘা সিদ্দিকী আজ আওয়ামী রাজনীতির সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করছেন। এখন সব বিভেদ ভুলে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের ঐক্য। কাদের সিদ্দিকীর মতো মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী সবাইকে আওয়ামী লীগে যুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

দেশব্যাপী যেভাবে আওয়ামী আদর্শবিরোধী মানুষকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনে পদায়িত করা হচ্ছে তাতে ঘোর অন্ধকার নেমে আসবে। অনুপ্রবেশকারীরা সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগকে মরণকামড় দিতে ভুল করবে না। এটা চরম সত্য কথা। এর জন্য দলীয় হাইকমান্ডকে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই অযাচিত অনুপ্রবেশ ঠেকানো খুবই জরুরি। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নলগ্নে অনুপ্রবেশ নয়, চাই প্রত্যাবর্তন। আওয়ামীবিরোধীরা আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাখ্যাত হোক। ফিরে আসুক সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুপ্রেমী, মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগ মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষরা। আওয়ামী লীগের কাছে এটাই প্রত্যাশা।

বিশ্বজিত রায় : লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App